১৮ বছর ধরে নিজ ঘরেই পরবাসী দেলোয়ার

  • মো. তারেক রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নাচোলের দেলোয়ার হোসেন/ ছবি: সংগৃহীত

নাচোলের দেলোয়ার হোসেন/ ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গ্রাম্য মাতব্বরদের বিচারে গত ১৮ বছর ধরে নিজ ঘরেই পরবাসীর মতো জীবন কাটাচ্ছেন দেলোয়ার হোসেন সেন্টু (৪০)। অভিযোগ আছে, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার জেরে গ্রাম্য সালিশ বসে। সেখানে রায় হয়, দেলোয়ার হোসেন তার স্ত্রীকে তালাক দেবে না কিন্তু একই ঘরেও থাকতে পারবে না। ফলে গত ১৮ বছর ধরে নিজ ঘরে পরবাসীর মতো জীবনযাপন করছেন তিনি।

দোলেয়ার হোসেন সেন্টু (৪০) অভিযোগ করে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে জীবন চলত। পরে খাস জমিতে মাটির ঘর করেছিলাম। ২০০০ সালে একই গ্রামের ইলিয়াস মেম্বারের মেয়ে সোফিয়া বেগম ভালোবাসার টানে আমার কাছে চলে আসে। পরের দিন সোফিয়াকে তার বাড়িতে ফেরাতে না পেরে নওগাঁ আদালতে গিয়ে দু’জন রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর সোফিয়ার বাবা ইলিয়াস মেম্বার আমার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এমনকি কয়েক দফায় আমাকে মারপিটও করেন। কিন্তু সোফিয়া বাড়িতে ফিরতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে সংসারে আমাদের পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।’

দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রাম্য সালিশ বসে। সালিশে অংশ নেন হারেজ উদ্দীন, নওশাদ, আবদুস সাত্তার, বর্তমানে নাচোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম, তৎকালীন ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান সহ অনেকে। সালিশে সোফিয়ার ভরণপোষণ না দেওয়া ও ঝগড়ার অভিযোগ তোলা হয়।’

বিজ্ঞাপন

পরে রায়ে বল হয়, সোফিয়া দেলোয়ারের ঘরেই থাকবে। কিন্তু দেলোয়ার কোনদিন স্বামীর অধিকার পাবে না। এ রায় না মানলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর থেকে একই বাড়িতে বসবাস করলেও আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে গত ১৮ বছর ধরে বিবাহিত স্ত্রীকে ঘরে রেখে নিজেকে বারান্দায় রাত কাটাতে হচ্ছে। চোখের সামনে ছেলে শাহিন (২০) থাকলেও তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ বিষয়ে শোফিয়া বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে তালাক বা ছাড়াছাড়ি হয়নি। আমার ভরণপোষণ বহন না করার অভিযোগে সালিশদাররা এ রায় দিয়েছিলেন।’

সালিশদার হারেজ উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘স্ত্রীকে মারপিট ও ভরণপোষণ দিতে না পারায় ঐ রায় দেওয়া হয়েছিল।’

অপর সালিশদার ও বর্তমান নাচোল ইউপির চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ রায় দেওয়া হয়েছিল। তবে ভুক্তভোগীরা পুনরায় অভিযোগ করলে সুবিচার করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাচোল থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’