মাথা গোঁজার ঠাঁই চান ফুটবলার মাসুরার পরিবার
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের হয়ে লড়াই করলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় মাসুরা পারভীনের পরিবারের। পরিবার নিয়ে থাকেন জরাজীর্ণ ভাড়া বাসায়। তাই পরিবার সদস্যদের দাবি, মাথা গোঁজার জন্য তাদের যেন একটুকরা খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, মাসুরা পারভীনের পিতা রজব আলী গরীব ও ভূমিহীন। তাদের নিজের কোনো জমি নেই। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ দোচালা ঘর ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকেন। পেশায় ভ্যান চালক হলেও অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকেন। তাই বাঙালের মোড়ে ভ্যানে তরমুজ বিক্রি করে কিছুটা রোজগারের চেষ্টা তার।
মাসুরা পারভীনের বাবা রজব আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে রোদ বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে থাকতে হয়। মাসুরা সবার বড়। সে জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। মেঝ মেয়ে সুরাইয়া পারভীন অষ্টম এবং ছোট মেয়ে সুমাইয়া খাতুন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ঘর ভাড়া, সংসারের খরচ ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করে মাসুরা নিজেই। সামনে ঈদ, এখনও কারও জন্য কিছুই কিনতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জমি নেই। ২০১৬ সালে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে আমাকে ডেকে খাসজমি বরাদ্দ দিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে খেজুরডাঙি এলাকায় সরকারি খাসজমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।’
মাসুরা পারভীনের মা ফাতেমা খাতুন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সাতক্ষীরা শহরে বাসযোগ্য যেকোনো স্থানে যদি এক টুকরো খাসজমি পেতাম তাহলে নিজেদের মাথা গোজার ঠাঁই হতো।’
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মাসুরা পারভীন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। সে দেশের সম্পদ। অথচ তার পরিবার ভূমিহীন। তবে তার পরিবার যাতে একটুকরা জমি বরাদ্দ পায় সেজন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছর মাসুরা পারভীনের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ মেয়েদের সাফের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। জাতীয় ফুটবল দলের পাশাপাশি কাবাডি জাতীয় দলেও খেলেছে নেপালের বিপক্ষে একমাত্র গোল করা মাসুরা। এছাড়া বাংলাদেশ গেমসে কয়েকটি খেলায় অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতাও আছে তার। মাসুরা ফুটবলের পাশাপাশি হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি ও অ্যাথলেটিকসে জাতীয় প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে মাসুরা উল্লেখিত প্রতিটি খেলাতেই অংশগ্রহণ করে। ২০১৫ সালের এসএ গেমসে তার সামনে একই সঙ্গে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দল ও কাবাডি দলে খেলার সুযোগ আসে। কিন্তু মাসুরা বেছে নেয় কাবাডিকে। দেশের হয়ে রৌপ্য পদকও জিতেছিলেন তিনি।