মেঘনা উপকূলে ভাঙন: ভাঙছে মানুষের স্বপ্নও
লক্ষ্মীপুরে প্রায় দুই যুগ ধরে ভাঙছে মেঘনা নদীর পাড়। মাইলের পর মাইল ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে মেঘনার পেটে। একবার ভাঙার পর উপকূলের মানুষ অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেশ দূরে আবার ঘর বাঁধে। কিন্তু কিছুদিন পর সেখানেও হানা দেয় ভাঙন। ফলে ভেঙে যায় হাজার হাজার মানুষের নতুন স্বপ্নও। মেঘনার ভাঙনে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ, থামছে না উপকূলবাসীর কান্না।
ভাঙনে অতিষ্ট হয়ে উপকূলবাসীর মনে এখন নানা প্রশ্ন। ভাঙন কবে থামবে, কবে মেঘনা তীরের মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে, কত ভাঙনে মেঘনার পেট ভরবে? এলাকাবাসী মনে করেন, মেঘনার ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজন টেকসই নদী তীর রক্ষা বাঁধ।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা ঘিরে রেখেছে দেশের দীর্ঘতম নদী মেঘনা। গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই মেঘনার ভাঙনে এসব উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। সদরের চররমনী মোহন, রায়পুরের উত্তর চরবংশী, কমলনগরের চর ফলকন, চর কালকিনি, লুধুয়া, পাটারিরহাট, সাহেবের হাট, রামগতির চর আবদুল্লাহ, চর আলেকজান্ডারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙন কবলিত।
আরও জানা গেছে, ২০১৪ সালে একনেক সভায় কমলনগর-রামগতি রক্ষায় ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাস হয়। প্রথম পর্যায়ে রামগতিতে সাড়ে চার ও কমলনগর উপজেলায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি।
গত মার্চ মাসে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এক সভায় জানান, রামগতি-কমলনগর রক্ষা প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল বাতিল করা হয়েছে। তবে এ খবর শোনার পর উপজেলার প্রায় সাত লাখ মানুষ ভিটে রক্ষায় বিভিন্ন আন্দোলন করে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ বছরে নদীর ভাঙনে ৩১টি বড় হাট-বাজার, ৩৫ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ৩০টি সাইক্লোন শেল্টার, ৫২টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার, ৪০০ কিলেমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার একর ফসলি জমি ও ৪৫ হাজার বাড়িসহ কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, রামগতি-কমলনগর উপজেলার ৩২ কিলোমিটার এলাকা এখনো ভাঙন কবলিত। যেকোনো সময় বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কমলনগরের চর কালকিনি গ্রামের বাসিন্দা আবু সাইয়েদ মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘উপজেলার মতিরহাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটর দূরে নদী ছিল। এর মধ্যে দুটি বড় বাজারও ছিল। সব ভেঙে মতিরহাট বাজারও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পরে বাঁধ নির্মাণ করায় ভাঙন থেমেছে। এখানে আমার পুরাতন বাড়ির একটি গাছ ছাড়া আর কিছুই নেই। পরে নদীর তীরেই আবার বাড়ি করেছি।’
পাটারিরহাট ইউনিয়নের আবদুল জব্বার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘দুইবার আমার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের কবলে পরে অনেকে এলাকা ছাড়া। অনেকে সড়ক ও বিভিন্ন বাঁধের পাশে বসবাস করছেন। মেঘনার ভাঙন এখনও বেড়েই চলেছে।’
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘অনেক আগেই প্রথম পর্যায়ে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এজন্য কাজও শুরু করা যায়নি। ভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।’