বিধি লঙ্ঘন করে নীলফামারী পৌরসভার বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ
সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে ইজারাভুক্ত হাট-বাজারের জমিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে নীলফামারী পৌরসভার বিরুদ্ধে।
নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে এবং কেন বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে তা লিখিতভাবে জানাতে পৌরসভার মেয়রকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নীলফামারী পৌর শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে ভূমি অফিসের রাস্তা পর্যন্ত নীলফামারী-ডোমার সড়ক সংলগ্ন পশ্চিমে ইজারাভুক্ত সরকারি হাট-বাজারের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভলপমেন্ট ফান্ডের অর্থায়নে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নীলফামারী পৌরসভা এ ভবনটি নির্মাণ করছে।
বিধি লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের বিষয়টি নজরে আসায় ৩০ এপ্রিল মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদকে চিঠি দিয়েছে নীলফামারী জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরেট (আরডিসি) যোহরা সুলতানা যুথী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে সরকারি জমিতে আইন লঙ্ঘন করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে এবং জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকারের ভূমি আইন অনুসারে যে কোনো সরকারি সম্পত্তিতে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান অস্থায়ী বা স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে চায়, তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের কমিটির মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।
এ কমিটির পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) দোকান বরাদ্দের সালামি ও ভাড়া নির্ধারণ করবে। দোকান ঘর বরাদ্দের সালামির ২৫ শতাংশ ও দোকানঘর ভাড়ার ৩০ শতাংশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাওনা হিসেবে ভূমি রাজস্ব খাতে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
সরকারি জমি ব্যবহারে এসব নিয়মের কোনোটাই মানেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া চিঠির জবাবে গত ২২ মে নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ তার লিখিত বক্তব্যে জানান, নীলফামারী জেলা প্রশাসন ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নীলফামারী বড়বাজারের শাখামাছা বাজারের দ্বিতল ভবন নির্মাণের নকশা ও প্রাক্কলন অনুমোদন দিয়েছিল। তারা ভবনটি সংস্কার করছে মাত্র।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারী পৌরসভার মেয়র যে নকশাটির কথা বলছেন, সেটি নির্মাণাধীন ওই ভবনের নয়। তবে এমন অসঙ্গতি জেনেও নিরব ভূমিকা পালন করছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী পৌরসভার সচিব মশিউর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা বড় বাজার মার্কেটের পুরাতন দোকানঘর ভেঙে নতুন করে সংস্কার করছি মাত্র, জমির মালিকানা ও চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’
এছাড়া নীলফামারী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, ২০০৮ সালে জেলা প্রশাসন পৌরসভাকে ওই জায়গাটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল। এ বিষয়ে প্রশাসন অবগত রয়েছে।
এসময় অনুমতিপত্র দেখাতে বলা হলে তিনি মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। মেয়র দেওয়ান কামাল আহম্মেদ দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমি নীলফামারী জেলা প্রশাসক হিসেবে নতুন যোগদান করেছি, বিষয়টি শুনেছি। যেহেতু জমি-জমা, হাট-বাজার সংক্রান্ত বিষয়, সেহেতু ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী খুঁটি-নাটি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
নীলফামারী জেলার সাবেক প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বিধি লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের বিষয়টি জানলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসন্তোষ রয়েছে সচেতন মহলে।
এছাড়া নীলফামারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম হামিদুর রহমান গত ৮ মে নীলফামারী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে জানান, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য পাকা সড়কের ধার ঘেঁষে প্রায় ছয় ফুট গর্ত করা হয়েছে। এতে জননিরাপত্তা ও সড়ক পরিবহনের নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, সড়কটি এরই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন।
সড়কটি প্রশস্ত করতে সড়ক বিভাগকে প্রয়োজনীয় সহোযগিতা করার অনুরোধ করেছেন তিনি।