জাবি শিক্ষার্থী ফিরোজের বাঁচার আকুতি
হাসপাতালের বেডে শুয়ে-বসে নীরব যন্ত্রণায় দিন পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র ফিরোজ হোসেন। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবার। এখন সে নিজেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন। ‘সোরিয়াসিস আথ্রাইটিস’ ও ‘সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস’ রোগে আক্রান্ত ফিরোজ এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) বাঁচার আকুতি নিয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
বাবা হারা ফিরোজের ভরসা বিধবা মা, মামা ও চাচাতো ভাই। তাদের স্বপ্ন পূরণে ফিরোজ কখনো নিজেকে দাবিয়ে রাখেননি। বরং শত বাঁধাকে পেছনে ফেলে সব সময় সামনে যাবার যুদ্ধ করেছেন। পড়ালেখায় অদম্য ফিরোজ ২০১৫ সালে রংপুর সরকারি কলেজে ৬৫০ জন গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। এছাড়াও ৫ম শ্রেণি ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
তবে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর অসুস্থতা চেপে ধরে ফিরোজকে। ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হতে থাকে সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখটি। পড়ার টেবিল ছেড়ে ফিরোজ পড়ে যান বিছানায়। একাধিকবার ভুল ট্রিটমেন্টে তার আর সেরে ওঠা হয়নি।
বিছানাতেই শুয়ে বসে চলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি। প্রথমবার সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। হতাশ না হয়ে দ্বিতীয়বার অনেক কষ্টে মেধাবীর যুদ্ধে টিকে যান ফিরোজ। ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে। অসুস্থতার কারণে প্রথম বর্ষের ফাইনালে কোনো রকমে অংশ নিলেও দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আর ক্লাসে যাওয়া হয়নি ফিরোজের। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, পিজি হাসপাতালের ১৭ তলার ফ্লোরেই কাটছে দিনের পর দিন।
ফিরোজ হোসেন নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার উত্তর কাজিরহাট গ্রামের মৃত বজলুর রহমান বজু ও ফেরদৌসী বেগমের ছেলে। সপ্তম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পর ফিরোজের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা শেষ করে মা ও ছোট ভাই-বোনের দায়িত্ব কাঁধে নেবেন, তাদের খুশি রাখবেন। কিন্তু ফিরোজের সেই স্বপ্ন আজ নিভু নিভু করছে।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ফিরোজের চিকিৎসায় সব সঞ্চয় শেষ হয়েছে তার পরিবারের। এখন অর্থাভাবে থমকে আছে চিকিৎসা।
চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৪ সালে ‘সোরিয়াসিস আথ্রাইটিস’ ও ‘সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস’ রোগে আক্রান্ত হয় ফিরোজ। এরপর থেকে চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিমাসে ফিরোজকে একেকটা ভ্যাকসিন দিতেই ২৫ হাজার টাকা করে লাগত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন সেই ভ্যাকসিনও আর কাজ করছে না। ওর উন্নত চিকিৎসা দরকার। এ মাসেই চিকিৎসার জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাগবে। তারপর প্রতিমাসে আরও এক লাখ টাকা করে খরচ আছে। এতো টাকা কোথাও পাবো? আমাদের পরিবারের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অশ্রুসিক্ত নয়নে আকুতি জানিয়ে মা ফেরদৌসী বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আল্লাহ গরিবের ঘরে এমন রোগ দেন কেন? আমি স্বামীহারা। আমার ছেলেটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ছেলের এমন রোগ হলো, সবকিছু ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবু আমার ছেলেটা সুস্থ হচ্ছে না। আমার সামান্য সঞ্চয়, আর ওর মামার সহায়তায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন তো আর পারছি না।’
ফিরোজের মামা বলেন, ‘আমার ভাগ্নে মেধাবী ছাত্র। ওর তো দেশকে অনেক কিছু দেবার স্বপ্ন ছিল। দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছে ছিল। আজ একটা কঠিন রোগের কাছে ওর সব স্বপ্ন ধুকে ধুকে মরছে। আমরা টাকার কাছে হেরে যাচ্ছি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনেকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার বিশ্বাস বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বৃত্তবানদের নজরে এলে আমাদের ফিরোজ হয়তো বেঁচে যাবে।’
ফিরোজের জন্য সাহায্য পাঠাতে পারেন-
মাসুমা (বন্ধু)-০১৭০৬৮০২৭৩৯ (বিকাশ), হারুন (বন্ধু)- ০১৭৪৬০০৮৭৯৪০ (ডাচ বাংলা ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং) এবং সাইফুল ইসলাম (চাচাতো ভাই) অগ্রণী ব্যাংক, জলঢাকা শাখা, হিসাব নম্বর- ০২০০০১২৯৬৪০২৭, মোবাইল নম্বর- ০১৭২৯১২১১৬৮।