ঈদ নেই নিহত-নিখোঁজ জেলেদের পরিবারে

  • মোকাম্মেল মিশু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ভোলা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাবা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে মারা গেছেন, তাই ঈদের আনন্দ নেই এই শিশুদের/ ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাবা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে মারা গেছেন, তাই ঈদের আনন্দ নেই এই শিশুদের/ ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গত ৬ জুলাই ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ, জিন্নাগড় ও মাদ্রাজ ইউনিয়নের ৩৩ জন জেলে দুটি নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে সাগরের কোনো এক জায়গায় ডুবে যায় ট্রলার দুটি।

পরে ৯ জুলাই ডুবে যাওয়া একটি ট্রলার গিয়ে পৌঁছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সাতটি মরদেহ। জীবিত পাওয়া যায় মনির মাঝি ও জুয়েল মাঝি নামের দুই জনকে। বাকি ২৪ জনের সন্ধান এখনো মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

ট্রলারডুবিতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তির প্রাণহানি ও নিখোঁজের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে চরফ্যাশনের জেলে পরিবারগুলো। সংসার চালানোই যেখানে অসাধ্য, সেখানে ঈদ, কোরবানি রীতিমতো দুঃস্বপ্ন তাদের কাছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565437732086.gif

বিজ্ঞাপন

শত কষ্টের মাঝেও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদে বিভিন্ন উদযাপনে মেতে উঠে জেলে পরিবারগুলো। গত বছরও যারা আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করেছিল। কিন্তু এ বছর তাদের পরিবারে চলছে শুধুই কান্না। ঈদ উপলক্ষে এসব পরিবারগুলোর পাশে নেই কেউ।

আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭

এসব পরিবারের অসহায় মা, বিধবা স্ত্রী আর ছোট ছোট এতিম শিশুদের চোখে-মুখে এখন শুধুই হতাশা আর কান্না। উপার্জনকারী ব্যক্তি নেই, সংসারের হাল ধরবে কে- তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের। এমনকি ঈদের আনন্দও তাদের কাছে শোকে পরিণত হয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565437756926.gif

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড়, মাদ্রাজ, সামরাজ ও নুরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ট্রলার ডুবিতে নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতি চরফ্যাশনের সভাপতি নান্নু মোল্লা বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে যেয়ে ৩১ জন জেলে মারা গেছেন। তার মধ্যে সাত জনের লাশ পেয়েছি, বাকি সবাই নিখোঁজ।‘

নিখোঁজ জেলে শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী তার ছোট শিশুকে দেখিয়ে বলেন, ‘বাপ থাকলে বাপের থেকে একটা জিনিস চাইত, এখন বাপ নাই, চাইতে পারে না। মায়ের কাছে চায়, মা আমারে জামা কাপড় দাও, মা আমারে টাকা দাও, মা আমার জন্য এই মাংস আন। আমার তো টাকা নাই। আমি কেমনে দিমু, আমি নিজেই তো চলতে পারি না।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565437778516.gif

নিহত জেলে মাকছুদের স্ত্রী বলেন, ‘ঈদের দিন কি করমু পোলাপাইন তো এখনি কানতে আছে। বাবা থাকলে অনেক কিছুই করতো, এখন তো আমি কিছুই করতে পারি না।’

নিহত শাজাহান মাঝির ছেলে রাকিব বলেন, ‘ঈদে যে আমাদের দিকে তাকাবে- এমন কেউ নাই। আমার বাবা থাকলে অনেক টাকা পয়সা দিত। ঈদে আমরা আনন্দ করতাম।’

নিহত জেলে অলিউল্লাহ গাছির স্কুল পড়ুয়া মেয়ে স্বপ্না কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেছে, আমাগো ঈদে টাকা পয়সা দিব কে? আমাগো জামা-কাপড় বানাইয়া দিব কে? স্কুলে যাওয়ার সময় টাকা দিব কে?’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565437793029.gif

জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, গত তিন বছরে ভোলা জেলায় ১১২ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেছেন। নিখোঁজ হয়েছেন ১ ৫৭ জন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, ‘সমুদ্রে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রতিটি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের পরিবারকে স্থানীয়ভাবে কিছু চাল দেওয়া হয়েছে। সরকারি পরিপত্রের আলোকে যদি কোনো বরাদ্দ আসে, তাহলে তাদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে নিহত সবাই চরফ্যাশনের