ট্রেন দুর্ঘটনা: ৩ সন্তানকে নিয়ে বিপাকে নিহত আল আমীনের স্ত্রী

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিহত আল আমীনের পরিবার, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

নিহত আল আমীনের পরিবার, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় উদয়ন ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত আল আমীনের স্ত্রী তিন সন্তান নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এক মাসের নবজাতকসহ তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া ১৫ হাজার টাকাও ফুরিয়ে গেছে। ফলে এখন প্রতিবেশীদের দয়ার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে পরিবারটি।

জানা গেছে, আল আমীন (৩০) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের গুণই গ্রামের আয়ুব হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। দুই কন্যা শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটতো তার। পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। তার বাবা এখনো বেঁচে আছেন। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এলাকায় কাজ না থাকায় আল আমীন চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।

বিজ্ঞাপন

আরো জানা গেছে, দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে আল আমীনের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। তাকে দেখার জন্য তিনি চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং আসেন। সেখানে সপ্তাহ খানেক থাকার পর ফের তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। ১২ নভেম্বর দুর্ঘটনার রাত সাড়ে ১২টায় শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ওঠেন তিনি। রাত ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। সকালে বাড়িতে তার মৃত্যুর খবর পৌঁছলে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার।

নিহত আল আমীনের স্ত্রী ফুলবানু বেগম জানান, জেলা প্রশাসন ১৫ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। এমনকি রেলমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে এক লাখ ২০ হাজার টাকাও পাননি। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। আবার সিজার করায় কাজও করতে পারছেন না তিনি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো জানান, স্বামী মারা যাওয়ায় সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন না। খাবারের জন্য বাচ্চারা সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে। এলাকার লোকজন মাঝে মধ্যে চাল-ডাল দিয়ে যান। এগুলো দিয়েই মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের মুখে খাবার দেওয়া হয়।

আল আমীনের শ্যালিকা বলেন, ‘আমাদের বাড়ির আর্থিক অবস্থাও খুবই খারাপ। ভাইয়েরা বিয়ে করে আদালা থাকেন। বাবা এখন মানসিক প্রতিবন্ধী। দুলাভাই মারা যাওয়ায় আমার বোন খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকার যদি তাকে সহযোগিতা না করে তাহলে পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যাবে।’

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন খন্দকার বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রীর ঘোষণা করা টাকা এখনও আসেনি। আমরা নিহতদের যাবতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাঠালেই তাদেরকে দেওয়া হবে।’