দেশি চা পাতার বাজারে ধস
চুনারুঘাট ও মাধবপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসা নিম্নমানের চোরাই চা পাতায় সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেও চোরাকারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন। ফলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হচ্ছে বাগান মালিকদের। এতে করে দেশি চা পাতার বাজারে ধস নেমেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চুনারুঘাট ও মাধবপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় বছরখানেক ধরে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নিম্নমানের চা পাতা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সম্প্রতি এর মাত্র আরও বেড়ে যায়। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশাকাকে কাজে লাগিয়ে প্রতি রাতেই ভারত থেকে অবৈধপথে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে লাখ লাখ টাকার নিম্নমানের চা পাতা।
এসব চা পাতা জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। নিম্নমানের এসব চা পাতা বাজারে স্বল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারাও কিনছেন দেদার। ফলে উন্নতমানের দেশি চা পাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা। চায়ের রের্কড পরিমাণ উৎপাদন হলেও লাভের মুখ দেখছেন না বাগান মালিকরা। এ ব্যাপারে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে দফায় দফায় মিটিং করেও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না চোরাচালান।
এদিকে, চোরাচালন বন্ধে বিজিবি থেকে শুরু করে পুলিশ, ডিবি এমনকি সিআইডিও এখন চোরাকারবারিদের ধরতে প্রায় প্রতিদিন রাতেই অভিযান পরিচালনা করছে। গ্রেফতার ও চোরাই পণ্য জব্দও করা হচ্ছে কয়েকদিন পরপরই। কিন্তু এরপরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না চোরাকারবারিদের।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) চুনারুঘাট থেকে ৩ হাজার ৯১৩ কেজি ভারতীয় নিম্নমানের চা পাতা জব্দ করে সিআইডি। এ সময় দুটি পিকআপ ভ্যানসহ দুইজনকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- চুনারুঘাট উপজেলা দক্ষিণ দেওরগাছ গ্রামের রমিজ আলীর ছেলে মো. রতন মিয়া (১৮) ও একই উপজেলার কালিসিঁড়ি গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে তাহের মিয়া (২২)। তারা দুইজনেই পিকআপ চালক। তবে এ সময় মূল পাচারকারিরা পালিয়ে যায়।
সিআইডির পরিদর্শক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শুক্রবার (১৭ জানুয়রি) ভোরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে দুটি পিকআপ চাঁনপুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় সিআইডি পুলিশ পিকআপ দুটি আটক করে তল্লাশি করলে বস্তা ভর্তি ৩ হাজার ৯১৩ কেজি চোরাই চা পাতা পায়। এসময় পিকআপের দুই চালককে আটক করলেও পাচারকারিরা পালিয়ে যায়।
জব্দকৃত চা পাতার বাজার মূল্য ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকা বলে জানায় সিআইডি। এ ব্যাপারে সিআইডি পুলিশ বাদি হয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করে আটককৃতদের সদর থানায় হস্তান্তর করে।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজমুল হক বলেন, বিভিন্ন চা বাগান দিয়েই এসব চা পাতা দেশে প্রবেশ করছে। প্রতি রাতেই আমাদের টহল দল বিভিন্ন চা বাগানসহ পয়েন্টগুলোতে টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় আটকও করা হচ্ছে চোরাকারবারিদের।
চন্ডিছড়া চা বাগান ব্যাবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে নিম্নমানের চা পাতা প্রবেশ করায় বাগানের মালিকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব বন্ধ না হলে দেশি চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।