শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-পরামর্শ শুনতে স্কুলে ‘UNO BOX’

  • আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-পরামর্শ শুনতে স্কুলে ‘UNO BOX’/ছবি: বার্তা২৪.কম

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-পরামর্শ শুনতে স্কুলে ‘UNO BOX’/ছবি: বার্তা২৪.কম

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা জানতে ও সমাধান করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ‘UNO BOX’ বসানো শুরু করেছে। এই বক্সে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারবেন। আর এটি খুলে সকল অভিযোগ কিংবা পরামর্শ সরাসরি দেখবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই।

উপজেলার দুটি স্কুলে এটি পরীক্ষামূলকভাবে দেয়া হলেও সচেতন মহল এই বিষয়টিকে খুবই ভালভাবে দেখছেন। শিক্ষার্থীরা মনে করেন এই বক্সে অভিযোগ দিলে দ্রুত কাজ হবে। পরিবার ও শিক্ষকদের বলতে না পারা বিভিন্ন সমস্যাগুলো তারা অনায়াসে এই বক্সে লিখে দিতে পারবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিভিন্ন পরামর্শও এখানে দেয়া যাবে।

বিজ্ঞাপন

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেনীর মাদ্রসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার মূলে ছিল ইভটিজিং। ভাল রেজাল্টের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রশ্নফাসের মতো অপরাধ। তাছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্লাশ প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র‌্যাগিং এসব সমস্যা সংক্রান্ত তথ্যগুলো সঠিক সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছায় না।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা পরিবারের ভয়ে কিংবা শিক্ষকদের সাথে খোলা মেলা কথা বলতে না পরার কারণে অনেক সময় চুপ করে থাকেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাঠ ও স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি করে ‘UNO BOX’ স্থাপন করে তালাবদ্ধ করে রাখার চিন্তা করেন। এর চাবি ইউএনও অথবা তার কোন প্রতিনিধির কাছে থাকবে। এই বক্সটি সপ্তাহের একটি দিন খোলা হবে। বক্সে কোন অভিযোগ থাকলে তা সাথে সাথে সংগ্রহ করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা অন্য কেউ যাথে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এসব বক্স শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রাথমিকভাবে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি বক্স বসানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘UNO BOX’ -কে ইভটিজারদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন

সরজমিনে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বক্সটকে শিক্ষার্থীরা ভালভাবেই দেখছেন। তারা মনে করেন পরিবার কিংবা শিক্ষদের সাথে বলতে না পারা অনেক সমস্যার কথাই তারা এই বক্সে লিখতে পারবে। এছাড়া ইভজিটিং, বখাটের উৎপাতসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে করছেন তারা। পাশাপাশি অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিভিন্ন পরামর্শও গ্রহণ করা হবে।

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সায়েদা খানম বুশরা বার্তা২৪.কমকে জানান, অনেক সময় রাস্তায় আমাদের সাথে অনেক অশোভন আচরণ হয় যা আমরা পরিবার ও শিক্ষকদের সাথে শেয়ার করতে পারি না। এই বক্সটি হওয়াতে আমরা খুশি, কেননা এখন থেকে কোন সমস্যা হলে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলতে পারব। তবে সব ধরনের গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়। এই উদ্যোগটির জন্য আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।

নবম শ্রেণির ছাত্রী নূরে জান্নাত তোষা বার্তা২৪.কমকে জানান, এটি খুবই ভাল উদ্যোগ। রাস্থাঘাটে কোন ধারনের ডিস্টার্ব ফিল করলে এখানে জানানো যাবে। গার্লস স্কুলের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়। এটির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং কমে আসবে বলে আমি মনে করি।

অভিভাবক মো. সাইদুর মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, এই বক্সটি হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি। কারণ যেকোন সমস্যা আমরা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে জানতে পারব। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি দেয়া হোক।

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল আজাদ বার্তা২৪.কমকে জানান, এসবটি ইভটিজারদের জন্য হুমকি। শিক্ষার্থীদের মাঝে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। বাল্যবিবাহ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ হবে। আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানে এই ‘UNO BOX’ বসানো খুবই প্রয়োজন। কেননা এই বক্সটি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদারকি করবেন।

এই বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বার্তা২৪.কমকে জানান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রশাসনের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই ‘UNO BOX’ টি কাজে আসবে। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিকে মনিটরিং করার কারণে এই বক্সটির ওপর সকলের আস্থা তৈরি হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্লাশ প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র‌্যাগিং এসব সমস্যা কমে আসবে। প্রাথমিকভাবে এই বক্সটি দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যেকোন পরামর্শও দেয়া যাবে এই বক্সে।