টেস্ট পরীক্ষায় ফেল সত্ত্বেও বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র, জানে না স্কুল

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মমসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) ফেল ও পরীক্ষার ফরম পূরণ না করেও বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র আসায় এসএসসিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে দুই শিক্ষার্থী। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরও দুই শিক্ষার্থী রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করে তারা।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ওই দুই ছাত্রী হলেন হ্যাপী আক্তার ও মনোয়ারা আক্তার। তারা উপজেলার ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

জানা গেছে, ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হ্যাপী আক্তার ও মনোয়ারা আক্তার টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় তাদের এসএসসি ফর্ম ফিলআপের সুযোগ দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন বোর্ড থেকে ওই দুই শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আসে। তবে প্রবেশপত্র স্কুলে না এসে সরাসরি পরীক্ষাকেন্দ্রে আসে।

বিজ্ঞাপন

পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশপত্র আসাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বিষয়টি ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায়কে জানানোর পর তিনি বিষয়টি ইউএনওসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডৌহাখলা বিদ্যালয় থেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) অংশ নেয় ২৫৯ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে কৃতকার্য হয় ২৪৫ জন ও অকৃতকার্য হয় ১৪ জন শিক্ষার্থী।

এদিকে, বিদ্যালয় থেকে কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে জানুয়ারি মাসে বোর্ড থেকে ৩৮ জন শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র কম আসে। ওই সময় বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড হ্যাকড করে একটি চক্র অকৃতকার্য দুই শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের পাশাপাশি ওই বিদ্যালয়ের ৩৮ শিক্ষার্থীর ডাটা মুছে ফেলা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পরে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায় বোর্ডে যোগাযোগ করলে পরীক্ষার একদিন পূর্বে শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র পায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায় বলেন, ৩৮ পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র না আসা ও তাদের ডাটা মুছে যাওয়ার বিষয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করলে বোর্ডের কর্মচারী আনোয়ার ও মহসিন আমাকে বিদ্যালয়ের অকৃতকার্য ১৪জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমার ধারণা প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই দুই কর্মচারী বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড হ্যাকড করে অকৃতকার্য ২ ছাত্রীর ফরম পূরণ করে প্রবেশপত্র পাঠিয়েছে। ৩৮ শিক্ষার্থীর ডাটা মুছে ফেলার পেছনেও ওদের হাত আছে। ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

তিনি আরো বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে দুই ছাত্রীর প্রবেশপত্র আসার বিষয়ে আমি ইউএনও স্যারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু তারপরও ওই দুই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে।

অপরদিকে প্রবেশপত্র আসার পর ঘটনা জানতে অভিযুক্ত দুই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে তলব করা হয়। পরে ওই দুই ছাত্রী লিখিত বক্তব্যে জানায় ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের মহসিন আলম রনি নামে এক কর্মচারী বোর্ড থেকে তাদের ফরম ফিলআপ করে দিয়েছে।

এদিকে, অকৃতকার্য দুই ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য অপর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের তোপের মুখে পড়েছেন শিক্ষকরা। এ ঘটনায় গত দুইদিন প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে হট্টগোলও করেছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সেজুতি ধর বলেন, অকৃতকার্য দুই ছাত্রীর প্রবেশপত্র আসার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় প্রবেশপত্র ইস্যু হয়েছে পরীক্ষা দিতে বাধা নেই। তাই তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান গাজী হাসান কামাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমি দুই ছাত্রীর পরীক্ষা বাতিল করতে চাই। কিন্ত প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায় আমাকে অনুরোধ করেন মানবিক বিষয় বিবেচনা করে ছাত্রীদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিতে।

তিনি আরো বলেন, ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের ফরমপূরণের অনলাইন প্রক্রিয়া বাইরের কম্পিউটারের দোকান থেকে সম্পন্ন করায় বিদ্যালয়ের আইডি ও পাসওয়ার্ড অনেকেই জেনে যায়। সে ক্ষেত্রে সেখান থেকেও ওই দুই শিক্ষার্থীর ফর্ম ফিলআপ হতে পারে।