করোনা: রাজবাড়ীতে বেদে পল্লীর খোঁজ নিচ্ছেন না কেউ
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধের জন্য দেশের স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণাসহ সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনও।
জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ায় খুব একটা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছে না। আর করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। যারা দিন আনে দিন খায় তারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অসহায় মানুষদের তালিকা করে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের কেউ খোঁজ নিচ্ছেন না। ফলে এক বেলা কোনো রকমে খেতে পারলেও পরের বেলা না খেয়েই থাকতে হচ্ছে তাদের।
শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নে গিয়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে। সেখানে প্রায় ৫ মাস ধরে রয়েছেন ১১টি পরিবারের প্রায় ৭০-৮০ জন বেদে। এদের খোঁজ এখন পর্যন্ত কেউ নেননি। সরকারের দেয়া ত্রাণও পৌঁছায়নি তাদের ঘরে। এমনকি জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানেনই না তাদের কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেদে পল্লীর বাসিন্দারা একটি বাগানের মধ্যে বসে আছেন। শিশুরা হৈ-হুল্লোড় করে খেলায় মেতে আছে। জনসমাগম বন্ধের কারণে পুরুষরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কোনো কাজ করতে পারছেন না। এই পল্লীতেই একজন ৯ মাসের গর্ভবতী নারী রয়েছেন ও এক সপ্তাহ আগে একজন নারী সন্তান প্রসব করেছেন। সদ্য জন্ম নেয়া শিশু ও তার মাকে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসকের কাছে নেয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে ওই গর্ভবতী নারী শুধুই অশ্রু ঝরাচ্ছেন। খাদ্য ও চিকিৎসার চরম সংকট দেখা দিয়েছে এই বেদে পল্লীতে।
বেদেদের দলনেতা শারু মিয়া (৭০) বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করে যা আয় করি তাই দিয়েই কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকি। যেদিন গ্রামে যেতে পারি না সেদিন আমার ঘরের চুলায় আগুন জ্বলে না। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে সরকার নির্দেশ দিয়েছে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। তাই আমরা সরকারের নির্দেশের প্রতি সম্মান রেখে বেদে পল্লীর বাইরে যাচ্ছি না। কিন্তু কাজ করতে না পারলে আমরা খাব কী? কীভাবে বাঁচব?’
জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সরদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের কথা আমি জানি না। আমি এখনই চৌকিদার পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সরকারি যে বরাদ্দ আসে আমি তা স্ব স্ব ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাঝে বন্টন করে দেই। তবে বর্তমান সরকারের আমলে কেউ না খেয়ে থাকবে না। চেয়ারম্যান যদি ওই বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের ত্রাণের চাল না দেন তাহলে আমি যেভাবে পারি তাদের একটা ব্যবস্থা করব। খুব দ্রুতই বেদে পল্লীতে খাবার পৌঁছাবে।’