রংপুরে গ্যাস মিলবে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে
![রংপুরে পাইপলাইনে গ্যাস](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/May/15/1715784253049.jpg)
রংপুরে পাইপলাইনে গ্যাস
রংপুর ও নীলফামারীতে শিল্পে গ্যাস পেতে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য প্রস্তুত হবে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল)।
রংপুরে গ্যাস সঞ্চালন পাইপের কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে, এখন চলছে মিটারিং স্টেশনের কাজ। অন্যদিকে বিতরণ পাইপলাইন মাত্র ৩৫ কিলোমিটার স্থাপন শেষ হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে ওই প্রকল্পের কাজ। অর্থাৎ জুলাই থেকে গ্যাস সংযোগ নিতে পারবে শিল্প কারখানা।
বর্তমানে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রয়েছে যে কারণে বিদ্যমান নীতিমালায় আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কোন সুযোগ থাকছে না। শুধু শিল্প ও বাণিজ্যিকে সংযোগ দেওয়া হবে উত্তরের জনপদে।
পিজিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক এবং রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফজলুল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য প্রস্তুত হবো। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৮ শতাংশ। পাইপলাইনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সমানতালে চলছে সিভিল ওয়ার্কও। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পাইপ, সেগুলো চলে আসায় এখন অনেকটা নির্ভার।
অন্যদিকে সঞ্চালন পাইপলাইনের দায়িত্বে থাকা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তাদের পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলেছে মিটারিং স্টেশনের নির্মাণ কাজ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ওই কাজ শেষ হবে। জানুয়ারি থেকেই গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আমরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল রংপুরে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা। বহুল কাঙ্ক্ষিত উত্তরের গ্যাস সরবরাহের জন্য পৃথক দু’টি প্রকল্প নেওয়া হয়। একটি হচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর সঞ্চালন পাইপ। ওই প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। করোনাসহ নানা কারণে ৩ দফায় সময় পেছানো হয়। অবশেষে গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভার্চুয়ালি গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রংপুরবাসীর স্বপ্নের এই সঞ্চালন পাইপ লাইনের পাশপাশি বিতরণের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প নেয় পিজিসিএল। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১’শ কিলোমিটার বিতরণ লাইন। এরমধ্যে রংপুর শহরে ৪৪ কিলোমিটার, পীরগঞ্জে ১০ কিলোমিটার এবং নীলফামারী ও উত্তরা ইপিজেড এলাকায় ৪৬ কিলোমিটার।
শিল্প কারখানার অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। যে অঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ যতো আগে নিশ্চিত হয়েছে সেই অঞ্চলে শিল্প ততো এগিয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পের প্রসার নেই বললেই চলে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করেন গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই তারা রংপুর অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে সাহস দেখাননি। এতে বিশাল অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ পেলে রংপুর অঞ্চলেও শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। চাপ কমে আসবে রাজধানী ঢাকার ওপর। সে কারণে আশায় বুক বেঁধে আছে রংপুর অঞ্চলের বাসিন্দারা। পাইপ লাইন হলেই সংকট পুরোপুরি কাটছে না উত্তর জনপদের। এখনই সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া অঞ্চলে তেমন গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় না। আরও দেড়’শ কিলোমিটার দূরে উত্তরা ইপিজেডে গ্যাস পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে সরকার ২০২৬ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষে কাজ শুরু করেছে।
পাইপলাইন হলেই যেখানে সেখানে শিল্প কারখানা গড়ার বিপক্ষে সরকার। তারা চান পরিকল্পিত এলাকায় শিল্পায়ন গড়ে উঠুক। যে কারণে নিজের ইচ্ছেমতো এলাকায় শিল্প কারখানা গড়লেও সেখানে গ্যাস দিতে চায় না সরকার। গ্যাস পেতে হলে পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে কারখানা গড়তে হবে।
পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের বোর্ড চেয়ারম্যান এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহীনা খাতুন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বিদ্যমান গ্যাস নীতিমালা অনুযায়ী অর্থনৈতিক জোন ও বিসিক শিল্পনগরীর বাইরে সংযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। গ্যাসের সংযোগ পেতে ওই অঞ্চলের ইকোনমিক জোন এবং বিসিক শিল্পনগরীতে কারখানা গড়তে হবে।
পিছিয়ে থাকা উত্তরাঞ্চলের ক্ষেত্রে নীতিমালা শিথিল করার কোন সুযোগ রয়েছে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে শাহীনা খাতুন বলেন, যেসব শিল্প কারখানা ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করা হয়।