লাইফ সাপোর্টে পুঁজিবাজার: পুঁজি কমল সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা
আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে দাম কমে তলানিতে ঠেকেছে। আর পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন সাইড লাইনে চলে যাওয়ায় ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে গত এক সপ্তাহে উভয় শেয়ারবাজারে পুঁজি কমেছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে পুঁজি কমেছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিন সূচক বৃদ্ধি ও চারদিন পতনের মধ্য দিয়ে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পার হয়েছে। এ সময়ে কমেছে সূচক, লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পুঁজি কমেছে ৪ হাজার ৩১২ কোটি ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) পুঁজি কমেছে ৪ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৪ লাখ ৬ হাজার টাকা।
এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে অর্থমন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশে ব্যাংক পুঁজিবাজারকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দিচ্ছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ২০০ কোটি টাকার ফান্ড দিয়েছে সোনালী ব্যাংক।
পাশাপাশি সিটি ব্যাংকও ৫০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ‘মার্কেট সাপোর্টের ফলে গত মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক বাড়ে ১১০ পয়েন্ট। একইদিন সূচক বাড়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও। তবে বাকি চারদিনই দরপতন ছিল বাজারে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারির পর থেকে বিনিয়োগকারীরা ৬৫ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছেন। ডিএসইতে দৈনিক লেনদেন ৮-৯শ’ কোটি টাকা থেকে কমে ২-৩শ কোটি টাকায় নেমেছে। ফলে ৬৫ হাজার কোটির টাকা পুঁজি হারানো বাজারে ২০০ কোটি টাকার সাপোর্ট তেমন কিছুই না।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘পঁচা কোম্পানির আইপিও এবং প্লেসমেন্টের শেয়ারের কারণে পুঁজিবাজার নষ্ট হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পুঁজি হারানো বাজারে ২-৩শ’ কোটি টাকার সাপোর্ট- তামাশা ছাড়া কিছুই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে ভালো করতে হলে, সুশাসন ফেরাতে হবে। বর্তমান কমিশন দিয়ে সুশাসন অর্জন সম্ভব না।’
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, বর্তমানে দুই পুঁজিবাজারে ২৫ লাখ ৫৬ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) আছেন। এই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি গ্রুপ বাজারে দরপতনের প্রতিবাদে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খায়রুল হোনেন এবং কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
ডিএসইর তথ্য মতে, ১৩-১৭ অক্টোবর সপ্তাহে ডিএসইতে মোট পাঁচ কার্যদিবস ৩৫৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কেনা বেচা হয়েছে। তাতে মোট ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ৮৭ লাখ ১২ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৭৬কোটি টাকা ৮৭ লাখ ৮ হাজার ৩০৩ টাকা। যার দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৩১২ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এর আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন ছিল ৩১৯ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
লেনদেনের পাশাপাশি ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে কমেছে ২৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই শরীয়াহ সূচক কমেছে ১৭ পয়েন্ট।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ২০৯টির আর অপরিবর্তীত রয়েছে ১৮টির।
অপর বাজার সিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি ৯ লাখ ৫৮হাজার টাকা। লেনদেন হওয়া ২৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ৯৪টির, কমেছে ১৮৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। আর তাতে সিএসইর প্রধান সূচক ১৪৮ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।