সংকটে পুঁজিবাজার, ৭১ হাজার কোটি টাকা উধাও
প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ টাকা নেই। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো চলবার জন্য কিছু টাকা রাখতে সামান্য একটু লাভ হলেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। একই কাজ করছেন বিনিয়োগকারীরা।
ফলে দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। তাতে গত ২৪ জানুয়ারি পর থেকে থেমে থেমে চলা দরপতনে পৌনে ২৬ লাখ বিনিয়োগকারীর ৭১ হাজার কোটি টাকার পুঁজি উধাও হয়েছে।
এর প্রভাব পড়েছে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে। ব্যবসা হারিয়ে লোকসানে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্ষতি পোষাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছে। আর তাতে নতুন করে হাজার হাজার লোক চাকরি হারিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো ক্রমেই আস্থা ও তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। ফলে দরপতন লম্বা হয়েছে। লম্বা এই দরপতনের মার্কেট সাপোর্ট দেওয়ার মত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা না থাকায় সবাই হাতগুটিয়ে বসে আছে। ফলে কোনো শেয়ারের দাম একটু বাড়লেই শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এই অবস্থায় বাজারে যেখানে নতুন নতুন ফান্ডের প্রয়োজন সেখানে ফান্ড আসছে না। বরং বিনিয়োগকারীরা প্যানিক (আতঙ্কিত) হয়ে শেয়ার বিক্রি করছেন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারির পর থেকে রোববার (৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ডিএসইর সূচক কমেছে ১ হাজার ৩৫৪ পয়েন্ট। পাশাপাশি কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও। এই সঙ্গে পাল্টা দিয়ে কমেছে লেনদেন। ফলে ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা থেকে কমে ৩০০ কোটি টাকায় লেনদেন নেমে এসেছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের ৭১ হাজার কোটি টাকার পুঁজি উধাও হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্টাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, বর্তমানে ২৫ লাখ ৭৮ হাজার বিওধারী বিনিয়োগকারী রয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারির পর থেকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এই বিনিয়োগকারীদের ৭১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৮০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা নেই হয়েছে। এই চিত্র দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।
বাজার চিত্র: ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় প্রথম কার্যদিবস রোববার (৮ ডিসেম্বর) ডিএসইতে বড় দরপতন হয়েছে। এদিন সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৭৫ পয়েন্ট কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ৭৫ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫৯৬ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৫৩টির, কমেছে ২৭৩টির আর অপরিবর্তি রয়েছে ২৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম। লেনদেন হয়েছে ৩৪৯ কোটি টাকা। অথচ এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৩২ কোটি টাকা।
সিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ২২৪ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৯৭৯ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৭টির কমেছে ১৮৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম। দেশের এখন ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৬১ জন বিওধারী বিনিয়োগকারী রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, অর্থ সংকটে পুঁজিবাজার এখন ট্রেডারদের বাজারে পরিণত হয়েছে। ফলে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমনকি আইসিবির কাছে কোনো টাকা নেই। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এখন প্রয়োজন মার্কেট সাপোর্টের।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার উত্তোলনের জন্য এই মুহূর্তে দরকার মার্কেট সাপোর্ট যোগ্য ফান্ডের। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দূর করা।