ফের পুঁজিবাজারে ধস, পুঁজি উধাও ৭৭ হাজার কোটি টাকা

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

চলমান দরপতনে আবারও ধস নেমেছে দেশের পুঁজিবাজারে। নতুন এই ধসে বিনিয়োগকারীদের উধাও হয়েছে ৭৭ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ তিনদিনে (৮-১০ ডিসেম্বর) বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এই সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ১৬৫ পয়েন্ট। পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

নতুন করে ধসে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার সামনে আগানোর পরিবর্তে ২০১৬ সালের দিকে ফিরেছে।

বিজ্ঞাপন

বাজার সংশ্লিষ্ট, অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের কর্তাদের অতিআশ্বাসের পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে গুজব ছড়িয়ে একটি চক্র বাজারকে লুট করছে। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে বাজার ছাড়ছেন। আর তাতে পুঁজিবাজারে আস্থা ও তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

লেনদেন কমে যাওয়ার ফলে ব্রোকারেজ হাউসগুলো ব্যবসা হারিয়ে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। লোকসান কমাতে হাজার হাজার লোক ছাঁটাই করেছে পরিচালকরা। এরপরও টিকে থাকতে না পেরে শাখা অফিসগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে তারা।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর একজন সদস্য বলেন, ‘৭৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আমার নেই ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ পুঁজিবাজারের কর্তারা আইপিও (প্রাথমকি গণপ্রস্তাব) ও প্লেসমেন্ট বাণিজ্য করে বাজারটাকে শেষ করে দিয়েছে। ফলে আস্থা সংকটের কারণে নতুন করে ধসে রূপ নিয়েছে দেশের পুঁজিবাজার।’

ডিএসইর এই সদস্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ডিএসইর ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির দ্বন্দ্বের অবসান না হওয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার ফলে এখন দরপতন হচ্ছে।

এদিকে, পুঁজিবাজারের মন্দা অবস্থা তুলে ধরতে লোক দেখানো উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাশেম অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসতে চাইছেন। বৈঠকে তারল্য সংকট নিরসনে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড চাওয়ার আহ্বান জানাবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া টেকসই পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে একগুচ্ছ প্রস্তাবও তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।

বাজার চিত্র:

গত রোব ও সোমাবারের (৮-৯ ডিসেম্বর) মতোই মঙ্গলবার দিনভর সূচক পতনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর লেনদনে হয়েছে। ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে।

আর তাতে মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ২৬ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যা ৩ বছর ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের ২০১৬ সালের ১১ জুলাই সূচক ছিল ৪ হাজার ৫০৫ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। ফলে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে টানা তিনদিন দরপতন হল। আর তাতে ২৫ লাখ ৭৮ হাজার বিও হিসাবধারীদের পুঁজি নেই হয়েছে ৯ হাজার ৪৯২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

একই অবস্থা বিরাজ করছে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক ১৪৫ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৮২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬০টির কমেছে ১৪৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।