অস্থির সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসসরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখা নিয়ে সিদ্ধান্তের অস্থিরতায় ভুগছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২৫ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বেশ কয়েক বার বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঝে।
সাধারণ ছুটি ঘোষণার প্রাক্কালে গত ২৩ মার্চ জারি করা এক পরিপত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার কথা বললেও ২৪ মার্চ তা কমিয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত করে পুনরায় পরিপত্র জারি করা হয়। তাতে সীমিত পরিসর বলতে শুধুমাত্র নগদ জমা ও উত্তোলনের কথা বলা হয়।
২৫ মার্চ তারিখে সীমিত পরিসর বলতে নগদ জমা-উত্তোলন সংশোধন করে ডিডি/পে-অর্ডার ইস্যু ও অনলাইন স্থানান্তর উল্লেখ করে নতুন আরেকটি পরিপত্র জারি করা হয়।
২ এপ্রিল সীমিত পরিসরের সীমা পুনরায় সংশোধন করে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত করা হয়। পূর্ববর্তী সেবাগুলোর পাশাপাশি চালান ও ক্লিয়ারিং সুবিধা চালু রাখতে বলা হয়। ৫ এপ্রিল আবার পরিপত্র জারি করে সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন ও কুপন পেমেন্ট সুবিধা চালু রাখারও নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর ৭ এপ্রিল আরেকটি পরিপত্র জারি করা হয়। তাতে ব্যাংক শাখাগুলোর লেনদেনের সময়সীমা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ও লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য সময় দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এডি শাখাগুলো স্বীয় বিবেচনায় প্রয়োজনে সময়সীমা ১ ঘণ্টা বাড়াতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তার দুই দিন পর ৯ এপ্রিল আবার নতুন পরিপত্র জারি করে লেনদেনের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। একই পত্রে লকডাউন করা এলাকায় শাখা বন্ধ থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
শনিবার, ১১ এপ্রিল তারিখে পূর্বের ঘোষণা থেকে সরে এসে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর ডিপার্টমেন্ট অফ অফ-সাইট সুপারভিশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সবগুলো শাখা খোলা রাখতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের এমন অস্থিরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং গ্রাহকরা। করোনা রোধে ব্যাংকিং রেগুলেশন ও পলিসি ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন গাইড লাইন দিলেও ডিপার্টমেন্ট অফ অফ-সাইট সুপারভিশনের জারি করা একের পর এক পরিপত্রের অস্থিরতায় আতঙ্কে ভুগছে ব্যাংকগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বোধ হয় করোনা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। তাই একের পর এক আদেশ জারি করে ব্যাংকিং সেবা খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
শনিবার সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ব্যাংকের সব শাখা খোলা রাখার সিদ্ধান্তে আশ্চর্য হয়েছেন অনেক ব্যাংক এমডি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, শনিবার নির্দেশনা দিয়ে রোববার থেকে কীভাবে শাখা চালু করা যায়?
ব্যাংকারদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিপূর্বে ব্যাংকারদের সুরক্ষায় বিভিন্ন দফা সম্বলিত দাবি দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের অস্থিরতায় সংগঠনগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।