করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ২ শতাংশ সুদে ঋণের প্রস্তাব সিপিডির

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কৃষকদের সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা থেকে দুই শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) ‘কোভিড-১৯ সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কার্যকারিতা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও আয় নিরাপত্তা: সিপিডির প্রাথমিক বিশ্লেষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ জানায় সিপিডি।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থা বলেছে, আমাদের অনুরোধ থাকবে কৃষি খাতের জন্য সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, এ টাকা দুই শতাংশ সুদে যেন দেওয়া হয়। তাহলেও কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদন খরচ কমে যাবে। যারা পচনশীল খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন করেছেন, তারা কিন্তু এর মধ্যেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

এ সময় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কৃষি খাতের জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। আমাদের অনুরোধ, অন্যান্য খাতের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে সুদের হারটি যেন নিম্ন সমন্বয় হয়। এমনকি এটা যদি দুই শতাংশ পর্যন্ত নামানো যায়, তাহলেও কৃষকদের জন্য উৎপাদনের ব্যয়ে সাশ্রয় হবে। কৃষকেদের এ মুহূর্তে টাকা খুবই প্রয়োজন। তাদের হাতে এখন টাকা নেই। সুতরাং দ্রুততর সময়ে কৃষকদের কাছে অর্থটি পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে সংযুক্ত হন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

সরকার কৃষক থেকে শুরু করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুবিধা দেওয়া হয়। বর্তমানে যেখানে এক কোটির বেশি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। প্রণোদনার টাকা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য এসব ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

সংস্থার পক্ষ থেকে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, এক্ষেত্রে সরকারের তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হবে যে সব কৃষকের ১০ টাকার যে ব্যাংক হিসাব আছে, সেটার মাধ্যমে টাকা দেওয়া। এ তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। এটি দিয়েই মোটামুটিভাবে বড় অংশের কৃষকের কাছে পৌঁছানো যাবে দ্রুততর সময়ে। আমরা আশা করব, এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, নভেল করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষতি সামলে উঠতে গ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেখান থেকে ঋণে সুদের হার সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এক নীতিমালায় ঘোষণা করেছে, এ তহবিলের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ শতাংশ সুদ হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ।

কৃষক যেন বোরো ধান কাটতে গিয়ে সমস্যায় না পড়েন, সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ধান কাটার দিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এ মুহূর্তে হাওর অঞ্চলে ধান কাটাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সিপিডির প্রস্তাবনায় জরুরি ভিত্তিতে ধান কাটতে বলেছি। আশপাশের অঞ্চল থেকে হারভেস্টার মেশিন এনে ধান কাটতে হলে সে ব্যবস্থাটা যেন কৃষি মন্ত্রণালয় দ্রুততর সময়ে করে।
ধান কাটার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা হাওর অঞ্চলে গিয়ে থাকেন, সেখানেও যদি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ থাকে, তাদের মুভমেন্টের ব্যাপারটি, যাতায়াতের ব্যাপারটি যদি শিথিল করা হয়, তাহলেও ধান কাটার ক্ষেত্রে এখন যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে দেশে ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে, যার প্রায় ২৩ শতাংশই হয়েছে হাওর অঞ্চলে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসব অঞ্চলে এরই মধ্যে হাইব্রিড জাতের কিছু ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয় ১৫ এপ্রিলের পর থেকে।

কৃষি পণ্যের সরবরাহ চেইন যেন সচল থাকে সে ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কোনোভাবেই যেন এতে প্রভাব না পড়ে। এটা যেন সচল থাকে। ধানের উৎপাদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর অভ্যন্তরীণ এবং আমাদানি পর্যায়ে সরবরাহ চেইন সচল রাখতে হবে। কিছু কিছু পণ্য আমাদের কাছে মনে হয়েছে গত বছরের চেয়ে কম আমদানি। গত চার মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি, সয়াবিন তেল ও আদা-রসুনের আমদানি কিছুটা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনা করলে দেশে খাদ্য দ্রব্যের সরবরাহ আগামীদিনগুলোতে হয়তো স্বাভাবিক রাখা সহজ হবে।