জাতীয় সক্ষমতার উৎসভূমি হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



ড. আতিউর রহমান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গবন্ধুর ভাষায়- “আমার বাংলা, আমার কৃষ্টি, আমার সভ্যতা, আমার আকাশ, আমার বাতাস, আমার ইতিহাস এই নিয়ে আমার বাংলার জাতীয়তাবাদ। আমার বাংলার সংগ্রাম, আমার বাংলার ঐতিহ্য এবং রক্ত নিয়ে আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ।” (১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধান বিষয়ে গণপরিষদে ভাষণ থেকে; দেখুন ড. এ এইচ খান ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ, একাত্তর প্রকাশনী, ২০১১, পৃ. ৯৭)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উৎসভূমি। জাতীয়তাবাদের উত্তম চর্চা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে গ্রাম থেকে উঠে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা নগর সংস্কৃতির ছোঁয়া পেয়ে নগরবাসী সন্তানদের সাথে মিলে মিশেই আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে সক্রিয় ছিলেন।

প্রয়াত শিক্ষাবিদ ড. রফিকুল ইসলাম যথার্থই বলেছিলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অধিকাংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত। আর এ স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কদের অধিকাংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য ও চেতনা থেকে বাঙলি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ তার জন্মদাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কেবল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার চেতনার বিকাশও ঘটে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই।” (রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শুভাগমন উপলক্ষে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্র, পৃ.৮১)। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব-বাংলায় মূলত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশের ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে ওঠে। তবে এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্তানেরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের পূর্ণ সুযোগ পায়। ফলে পূর্ব বাংলায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের পক্ষে আঞ্চলিক চেতনা গড়ে ওঠে। কিন্তু হঠাৎ ১৯১১ সালে বঙ্গভাঙ্গ রদ হবার পর এ অঞ্চলের উঠতি মধ্যবিত্তের মনে হতাশার জন্ম নেয়। সেই হতাশা প্রশমনের জন্যে সৃষ্টি হলেও এ অঞ্চলের মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্পকলা, দর্শন তথা নবজাগরণ সৃষ্টির সূতিকাগার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য ভূমিকার কথা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। পূর্ব-বাংলায় অক্সফোর্ড-ক্যাম্ব্রিজের মতো একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রচেষ্টা আমরা শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের মাঝে ছিল। “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাধীনভাবে বিশ্লেষণ অনুশীলন করে চিন্তা করতে শেখানো। .... ঢাকায় ছাত্রদের এরা নিজের মতো করে চিন্তা করে লক্ষ্য সামনে রেখে চলার পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন।” (অলকানন্দা প্যাটেল, ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, ২০১৭, পৃ. ৮৫-৮৬)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নের ছাত্র এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক অমিয়কুমার দাশগুপ্তের কন্যা অলকানন্দা প্যাটেল তাঁর বাবার ও তাঁর সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনে এবং গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধে যে চিত্র এঁকেছেন তা এক কথায় ‘আলাদা ধাঁচের’। তাঁর ভাষায়, “সংগীত, নাটক, ছবি আঁকা, সাহিত্য চর্চা, রাজনীতি, সর্বোপরি আড্ডা-সবই ছিল ঢাকার শিক্ষার বা জীবনযাপনের অঙ্গ।” (অলকানন্দা প্যাটেল, ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’, বেঙ্গল পাবলিকেশনস, ২০১৭, পৃ. ৮৮)।

বাবার বন্ধু পরিমল রায়ের আত্মজৈবনিক এক লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, “প্রতি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও না কোথাও কিছু একটা হইতেছে- কোনো হলে ডিবেট, কোনো হলে ড্রামা, কোথাও সেমিনার, কোথাও বা বক্তৃতা। .... ভাবিতাম আমাদের পড়াইবার জন্য কি বিরাট আয়োজন। .... বিদ্যার বিপণীতে যেন হালখাতার উৎসব।” (অলকানন্দা প্যাটেল, ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’, বেঙ্গল পাবলিকেশনস, ২০১৭, পৃ. ৯২)। অস্বীকার করবার উপায় নেই যে ১৯২১-৪৭ পর্যায়টি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণযুগ। দেশভাগের পর অনেক শিক্ষক ঢাকা ছাড়লেও সাময়িক বিপর্যয়ের পর কৃতি শিক্ষকদের আকর্ষণের একটি ধারা বজায় ছিল। এখনও অনেকাংশেই আছে। তবে ধারাটি ক্ষীয়মান।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং শিক্ষকেরা যে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির অপশাসন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর পক্ষপাতিত্বমূলক দুঃশাসন দূর করার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন তাতে অবাক হবার কিছু নেই। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পর পরই ছাত্র-ছাত্রীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ-স্বদেশের মুক্তির জন্য বিপ্লব সাধনাকে বেছে নিয়েছিলেন। (রঙ্গলাল সেন ও অন্যান্য কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: ঢাকা ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান’, ইউপিএল, ২০১৮, পৃ. ১৫)।

এই বিশ্ববিদ্যালয়েই অনিল রায়ের ‘শ্রী-সংঘ’ এবং লীলা রায়ের ‘দীপ্রালি’র সাথে যুক্ত ছিলেন অনেক ছাত্র-ছাত্রী। তাদের বিপ্লব সাধনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের প্রষ্ঠপোষকতা যে ছিল তা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ এর উৎসভূমিও ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ‘সাময়িকী ‘শিক্ষা’ ছিল এই আন্দোলনের মুখপত্র। বিচার বুদ্ধিকে অন্ধ সংস্কার ও শাস্ত্রানুগত্য থেকে মুক্তি দিয়ে মুসলিম তরুণদের জিজ্ঞাসা ও সুহৃদয় গোষ্ঠীর অংশীদার করার ক্ষেত্রে ‘শিখা’ গোষ্ঠীর আন্দোলন অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন।

পরবর্তী সময়ে বাঙালির ভাষা আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হবার অনুপ্রেরণাদানকারী এই নবজাগরণধর্মী এই আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের কাছে পথিকৃৎ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। মুক্তির স্বপক্ষের সেই রাজনৈতিক-সংস্কৃতিক চেতনার সেই ঐতিহ্য পরবর্তী সময়ে ভাষা-আন্দোলন, ছয় দফা, এগারো দফার আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হবার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করেছে।

ধারাবাহিকতায় ষাটের দশকে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব মূল ধারার রাজনীতিতে ভালোভাবেই পড়ে। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকরা আঞ্চলিক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। ছয় দফা থেকে এই ছাত্ররাই এগারো দফার আন্দোলন তীব্র রূপ দেন। শেখ মুজিবকে মিথ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বেই গণঅভ্যুত্থান গড়ে ওঠে। শেখ মুজিবকে মুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়্রে ছাত্র নেতারাই ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমদের মাধ্যমে তাঁকে বঙ্গবন্ধু গণউপাধিতে ভূষিত করেন। এর পর আইয়ূব সরকারের পতন হয়। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

ঐ নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিপুলভাবে প্রচারে অংশ নেয় এবং ছয়-দফার পক্ষে গণজোয়ার তুলতে সাহায্য করে। ঐ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বঙ্গবন্ধু বিপুলভাবে নৈতিক বিজয় অর্জন করেন। এই গ্রহণযোগ্যতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় খুবই কাজে লেগেছে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী.... সহ ভূমিধ্বস বিজয় মেনে নিতে পারে নি। তাই সাংবিধানিক পরিষদ ডেকেও হঠাৎ স্থগিত করে দেন। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ঐ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন মুকুটহীন সম্রাট। সময়টাকে তিনি এক দিকে তাঁর নির্বাচনে বিজয়ী হবার নৈতিক শক্তিবলে অঘোষিত সরকর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এবং অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার কথা বলেন।

৭ই মার্চ মূলত তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাই দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ তরুণদের গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন। এই তরুণরা ঠিকই তার কথা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই গণহত্যা শুরু হবার পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেবার পর নিঃসঙ্কোচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিক্ষকরাও পিছিয়ে ছিলেন না। ভারত ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নানা দেশে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ও সাবেক শিক্ষকরা ছাড়াও সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা বিপুলভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বলতে গেলে পুরো মুজিবনগর সরকারই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রদের দখলে। মন্ত্রী, সচিব, উপদেষ্টা, পরিকল্পনা কমিটি সবাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষক। আর মাঠের যুদ্ধেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কতো ছাত্র-ছাত্রী যে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে, কত ছাত্রী বীরাঙ্গণা হয়েছেন-সেসময়ের পুরো তথ্য এখনও দেশবাসী জানেন বলে মনে হয় না।

পঁচিশে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং কর্মচারী প্রাণ দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার আগক্ষণে অনেক শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন। পুরো একাত্তর জুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই কতিপয় শিক্ষক ও ছাত্র পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দালালি করে আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের প্রাণ কেড়ে নেবার নির্মম কর্মযজ্ঞে শরিক হয়েছেন। তাদেরকে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও উপযুক্ত শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়নি। কয়েকজন বিশ্বাসঘাতক বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই কালো অধ্যায় নিশ্চয় স্থান পাবে। একই সঙ্গে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামসহ সব শিক্ষক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন এবং নিদারুণ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের অবদানও উজ্জ্বলভাবে স্থান করে নেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে।

একাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশগড়ার কাজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা বিপুল অবদান রেখেছেন এবং এখনও রেখে চলেছেন। স্বাধীনতা লাভের পরপরই যে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয় তার নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সচিবরা তো প্রায় সবাই ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় সকল গর্ভনরই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প আসলে উদ্যোক্তাদের সাফল্যের গল্প। এই উদ্যোক্তাদেরও অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। অনেক সময় প্রাক্তনী সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় মাপের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এই প্রাক্তনীরা অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এখন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে চলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। এই ধারাকে আরও মজবুত করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বজুড়ে আমাদের যে প্রাক্তনীরা আছেন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিল গঠনে, দূর থেকে অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রমে বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আগের চেয়ে পড়ে গেছে। আমাদের গবেষণা তহবিল খুবই সামান্য। তবে আমাদের নীতিনির্ধারক (যারা প্রায় সবাই আমাদের প্রাক্তনী) শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী এবং অ্যালামনেই বা প্রাক্তনীরা চাইলে নিশ্চয় আমাদের প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা আরও উজ্জ্বলভাবে বিকশিত করতে পারি। বিশ্বমানের র‌্যাংকিং অর্জনে সাহায্য করতে পারি। উচ্চ-শিক্ষা ও শিল্পের সংযোগ বাড়াতে পারি। আমাদের উন্নয়নের অভিযাত্রায় নিশ্চয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় সক্ষমতার উৎসভূমি হবার সকল সম্ভাবনাই রাখে।

আশার কথা এই যে, আমাদের বর্তমান উপাচার্য নিজে একজন একাডেমিক, অগ্রসর গবেষক; যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেন। তিনি ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণানির্ভর একটি অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় করার কাজ শুরু করেছেন। আমরাও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী দিনের একটি সম্বৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদেও একটি গ্রুপ কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এবং এই লক্ষ্যে উপাচার্যের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্টভাবে কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আশাকরি, এই পরিকল্পনামত এগুতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী দিনে আরও গৌরবজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

এখানে এও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ডেভেলপমেন্ট কমিটি নামে যে কমিটি গঠিত হয়েছে-চারজন ইমেরিটাস অধ্যাপক সেখানে কাজ করছেন। আমরা কি ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাই-যেখানে ‘ইনক্লুসিভ মোরাল লিডারশিপ’ বা ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক নৈতিক নেতৃত্ব’ প্রদানের অতীতের ঐতিহ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে যাওয়া যাবে-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এই সব প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাতে অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে, আমরা তাই আশা করি। সেইসঙ্গে আমি মনে করি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, এই বিদ্যাপীঠটির সঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টির যোগসূত্র আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় আগামীর সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশের বড় অনুপ্রেরণার উৎসব হবে এটাই তো স্বাভাবিক।

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

একাদশে ভর্তি

দ্বিতীয় ধাপে আবেদন শেষ হচ্ছে আজ রাতে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
দ্বিতীয় ধাপে আবেদন শেষ হচ্ছে আজ রাতে

দ্বিতীয় ধাপে আবেদন শেষ হচ্ছে আজ রাতে

  • Font increase
  • Font Decrease

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য দ্বিতীয় দফায় আবেদন শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাত ৮টায়। যারা প্রথম ধাপে আবেদন করেও‌ কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি, তারা রাত ৮টার মধ্যেই আবেদন শেষ করতে হবে। এই ধাপের আবেদন শুরু হয় ৩০ জুন।

একাদশে ভর্তির জন্য তৈরি করা কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্র জানায়, ৪ জুলাই রাত ৮টায় দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। ৫ থেকে ৮ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া চলবে। এরপর ১২ জুলাই দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে। এরপর ৯ ও ১০ জুলাই তৃতীয় ধাপে আবেদন নেওয়া হবে, যার ফল প্রকাশ করা হবে ১২ জুলাই রাত ৮টায়। তিন ধাপে আবেদনের পর ফল প্রকাশ, নিশ্চায়ন ও মাইগ্রেশন শেষে ১৫ জুলাই থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। ভর্তি কার্যক্রম শেষে আগামী ৩০ জুলাই সারাদেশে একযোগে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।

ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।

একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে আগামী ৩০ জুলাই।

গত মাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ২৫ লাখের মতো। সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও একাদশ শ্রেণিতে আট লাখের বেশি আসন ফাঁকা থাকবে এবার। তাই এবার ফল ভালো হলেও শিক্ষার্থীর সংকটে পড়বে অনেক কলেজ।

;

ছুটি শেষে বুধবার খুলছে প্রাথমিক স্কুল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আযহা ও গ্রীষ্মকাল মিলিয়ে মোট ২০ দিনের ছুটি কাটিয়ে আগামীকাল বুধবার খুলছে প্রাথমিক স্কুল। স্কুল এমন এক সময়ে খুলছে যখন সারা দেশে মুষলধারে বৃষ্টি এবং সিলেটে বন্যা হচ্ছে। তবে এসব কারণে স্কুল খোলায় কোনো প্রভাব ফেলবে না জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ১৩ জুন শুরু হয় চলতি বছরের ঈদুল আযহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি। শিক্ষাপঞ্জি হিসেবে আজ ২ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ থাকবে প্রাথমিক বিদ্যালয়। আগামীকাল ৩ জুলাই যথারীতি শুরু ক্লাস শুরু হবে।  

শিখন ঘাটতি পোষাতে মাধ্যমিকে ঘোষিত ছুটি এক সপ্তাহ কমিয়ে গত ২৬ জুন থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে স্কুল কলেজ। তবে প্রাথমিকে পূর্বঘোষিত ছুটি বহাল রাখা হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন বলেন, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ২০ দিনের ছুটি শেষে আগামীকাল প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে। বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে স্কুলের ছুটি বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবারের গ্রীষ্মের ছুটি কমানো হয়েছে। ২ জুলাই পর্যন্ত এই ছুটি থাকার কথা ছিল। এখন নতুন সিদ্ধান্ত হলো, বুধবার (২৬ জুন) থেকে খুলে দেওয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে শুক্রবারের পাশাপাশি শনিবারও সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।

ছুটি সংক্ষিপ্ত করার কারণ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, পাঠদানের কর্মদিবস বছরব্যাপী কমেছে। এ ছাড়া শনিবারের বন্ধ পুনর্বহাল রাখার কারণে কর্মদিবস কমে যাবে। তাই গ্রীষ্মের ছুটি কমানো হয়েছে।

;

নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত অনুমোদন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক

শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক

  • Font increase
  • Font Decrease

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)।

সোমবার (১ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এনসিসিসির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন ছাড়াই খসড়াতে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান।

তিনি বলেন, আমরা যেভাবে প্রস্তাব করেছিলাম, আগে যা যা ছিল, সেভাবেই থাকছে। ছোটোখাটো কিছু সংশোধনীসহ মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়েছে।

প্রস্তাবিত কাঠামো এবং নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান মশিউজ্জামান। বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ লিখিত এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক থাকছে।

এর মানে চূড়ান্ত অনুমোদনের ফলে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হচ্ছে ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ ৩৫ শতাংশ। আর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কার্যক্রম বলতে সহজে বললে হাতে-কলমে কাজ।

গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া প্রণয়ন করে এনসিটিবি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও উপস্থাপনের পরে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে নতুন কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়।

সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আবারও সংশোধন করে এনসিটিবির বোর্ড সভায় সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর পাঠানো হয় এনসিসিসির সভায় উপস্থাপনের জন্য।

;

বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে



অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ প্রাচীন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি জ্ঞান বিতরণে অবদান রেখে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রাক্কালে যখন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন করছি, তখনও আমরা জানি যে, উচ্চ শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠটি আগামীর সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বলিষ্ঠভাবে ভূমিকা রেখে যাবে।

বিশ্বনাগরিক গড়ে তোলার কারখানা বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়কে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি যুগের ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষিত-প্রশিক্ষিত করে তোলে, যাতে তারা তাদের সময়ে অর্থাৎ সামনের দিনগুলিতে দেশ ও জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। কেবলমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছি না, সারা দুনিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয় একই কাজ করে থাকে। সেদিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ভূমিকা, তা অবিস্মরণীয়!

পৃথিবীতে বহু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতির মুক্তিতে এতটা ভূমিকা রেখেছে, তা কখনও দেখা যায়নি। এইদিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তাঁর ছাত্র রাজনীতির উৎকর্ষ লাভ করেছিলেন। এখান থেকেই তিনি যে যাত্রা শুরু করলেন, সেই যাত্রার পথ ধরেই আমাদের দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয় যে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে, ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে জীবনদান করে দেশটিকে স্বাধীন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে ফ্রান্সের দার্শনিক আঁদ্রে মালরো ঢাকা সফরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমি আজ পৃথিবীর এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবিত ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে মৃত ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি’!

এই মৃত ছাত্র-ছাত্রী কারা! তাঁরা হচ্ছেন-মহান মুক্তিযুদ্ধে শরীরের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে স্বাধীন করা বীরসন্তানেরা! পরবর্তী সময়ে যদি আমরা দেখি, তবে দেখবো, দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকা। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ প্রতিষ্ঠা দিবস। এই দিবসে আমরা আশা করবো, এই একবিংশ শতাব্দীর যে বাস্তবতা, এই শতাব্দীর যে চ্যালেঞ্জ, সেটি মোকাবিলা করার জন্য শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা দেওয়া এবং তাদের মানসিক পূর্ণ বিকাশে; বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে,তার আদর্শে তাদের গড়ে তোলা, মানসিকতাকে সম্বৃদ্ধ করার মতো কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় অবিরামভাবে করে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আছেন, তাঁরা যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক মেধাবী এবং অনেক বেশি যোগ্য ও দক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণ প্রায় সবাই পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর গবেষণা ডিগ্রি নিয়েছেন। গবেষণায় বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে আছে বলে বিভিন্ন সময় যে সংবাদ প্রকাশিত হয়, তার একটা মূল কারণ হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গবেষণাখাতে যতটুকু বরাদ্দ দেওয়া দরকার, যে পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি থাকা দরকার, সেগুলোর কিছুটা ঘাটতি আছে। অবকাঠামোগত কিছু দুর্বলতা আছে। সেকারণে আমার মনে হয়, গবেষণার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে বিষয়গুলো মোকাবিলার চেষ্টা করছে, তাতে আমার ধারণা অচিরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবে।

আমাদের এও মনে রাখতে হবে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় সবসময়ই যে পিছিয়ে ছিল তা নয়, আমরা জানি, অধ্যাপক সত্যেন বোস থেকে শুরু করে অনেক গুণী শিক্ষক ও গবেষকগণ যাঁরা বিভিন্ন সময় অধ্যয়ন, গবেষণা করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাঁরা যে অবদান বিজ্ঞানচর্চায়, সমাজবিজ্ঞানে কিংবা দর্শনের ক্ষেত্রে রেখেছেন, তা সারা পৃথিবীতে আজও সমাদৃত।

আমার মনে হয়, সবকিছু মিলিয়েই একটি বিশ্ববিদ্যালয়! বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা থাকবে, লেখাপড়ার পরিবেশ থাকবে; রাজনীতি সচেতন জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার চেষ্টা থাকবে। সেখানে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থাকবে। আজ যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। খেলাধুলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে, তারা যেন তাদের শারীরিক ও মানসিক গঠনে ভূমিকা পালন করতে পারে, সেই বিষয়গুলিও আমাদের দেখার প্রয়োজন আছে।

আমরা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করি। হার্ভার্ড, প্রিন্সটন, ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমানতালে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। শিক্ষা ও গবেষণাকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে যাঁরা আছেন, তাঁরা আর্থিক বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করবেন, সেটাই কাঙ্ক্ষিত!

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শ্রুতিলিখন: নিউজরুম, বার্তা২৪.কম

;