জন্মদিনে ‘জীবন থেকে নেয়া’র স্রষ্টাকে স্মরণ
প্রভাতফেরির মিছিল এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি হাঁটছেন আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ ও সুচন্দা। অন্য এক মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজ্জাক। তাদের সঙ্গে ভোরবেলা নগ্ন পায়ে শত শত মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন শহীদ মিনারে।
১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে দেখা গেছে এই দৃশ্য। এই ছবিতেই প্রথমবার তুলে ধরা হয় মহান ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা।
ছবিটিতে ছিল নগ্নপদে প্রভাতফেরি-মিছিল, পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানারসহ শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদান ও সমবেত কণ্ঠে অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’।
‘জীবন থেকে নেয়া’র মাধ্যমে সবাই জহির রায়হানকে চেনেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার হিসেবে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকরী ও কারাবরণকারী প্রথম ১০ জনের মধ্যে একজন ছিলেন জহির রায়হান। জেল থেকে বেরিয়ে ‘জীবন থেকে নেয়া’র মাধ্যমে তিনি তৈরি করেন ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়।
আজ ১৯ আগস্ট। এই তারিখটি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য একটি অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও গল্পকার-ঔপন্যাসিক জহির রায়হান।
১৯৩৫ সালে ফেনীতে জন্ম জহির রায়হানের। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি অন্তর্ধানের পূর্বে মাত্র ৩৭ বছর বয়সেই তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘কাচের দেয়াল’, ‘সঙ্গম’, ‘বেহুলা’, ‘জীবন থেকে নেয়ার’ মতো অনবদ্য সব চলচ্চিত্র।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তৈরি করেছিলেন ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘বার্থ অব অ্যা নেশন’, ‘চিলড্রেন অব বাংলাদেশ’-এর মতো তথ্যচিত্র।
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অভিভাবক জহির রায়হান নিখোঁজ হন। এরপর আর ফিরে আসেননি কিংবদন্তি এই নির্মাতা।