স্টেজে উঠলে দর্শক বসে থাকতে পারে না: মিলা
বাংলাদেশের পপ গানের উজ্জ্বল নক্ষত্র মিলা ইসলাম। মাঝে সঙ্গীত ক্যারিয়ারে ছন্দপতন হলেও আবার মনোযোগী হয়েছেন গানে। করছেন স্টেজ শো, কদিন আগে প্রকাশ করেছেন নতুন মিউজিক ভিডিও। সম্প্রতি বার্তা২৪.কমের সঙ্গে লম্বা আলাপচারিতায় মিলা কথা বলেছেন নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
ব্যস্ততা কি নিয়ে?
গান নিয়েই আবার ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। এরমধ্যে দেশে বিদেশে অনেকগুলো স্টেজ শো করেছি। নতুন গান এসেছে, সামনে আরও কিছু গান আসবে। গানের অঙ্গনে ফিরে খুব ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা এখন গান করতে আবার আগের মতোই জোশ কাজ করছে।
অনেকদিন গানের বাইরে ছিলাম, ভক্ত শ্রোতারা সব সময় বলতেন আমি যেন আবার ফিরে আসি। কিন্তু নিজের ভেতর থেকে ফিরে আসার তাগিদ অনুভব করছিলাম না। জীবনের নানা অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামকে পাশে ফেলে নতুন উদ্যমে শুরু করতে কিছুটা সময় তো লাগেই। আমিও সেই সময়টা নিয়েছি। অবশেষে নিজের ভেতর থেকেই নতুন গান করার এবং আগের মতো স্টেজে হাজার হাজার দর্শকের সামনে পারফর্ম করার ইচ্ছে জাগলো। তাই আর দেরী করলাম না, ফিরে এলাম।
নতুন গান ‘টোনাটুনি’র সাড়া কেমন পেলেন?
যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছে অতোটা আশা করিনি। কারণ এতোদিন পর নতুন গান প্রকাশ করছি, দর্শক শ্রোতা কিভাবে নেয় সেটি একটা চিন্তার বিষয় ছিলো। কিন্তু ভক্তরা আমাকে অবাক করে দিয়েছেন! তারা দারুণসব কমেন্ট করেছেন ভিডিওটি দেখে। আমি খুব ভাগ্যবান যে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এমন অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়ে আসছি। এখনো আমি স্টেজে উঠলে দর্শক চুপ করে বসে থাকতে পারে না। আমার গানগুলোই এমন যে সবাই নেচে ওঠে। ভক্তদের ভালোবাসার জন্যই আবার গানে ফেরা। আবারও তাদের নতুন নতুন গানে মাতাতে চাই।
‘টোনাটুনি’ মিউজিক ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে বেশ আগে করা। আসল ঘটনাটি কি?
ঠিকই বলেছেন। গানটি আসলেই বেশ আগে করেছিলাম। এটি মূলতো আমার অডিও অ্যালবাম ‘রিডিফাইন’-এর গান। ২০১৩ সালে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়েছিল জি সিরিজ থেকে। তখন যে অ্যালবামটি প্রকাশ হয়েছিল ওটা ছিল ‘র’ ফাইল। গানের মাস্টারিং তখনো বাকী। আমি বিদেশে ব্যস্ত ছিলাম শো নিয়ে। এই ফাঁকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বুঝতে না পেরে ওই ‘র’ ফাইলটাই অডিও অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করে দেয়।
আমি তো বিষয়টি জানতে পেরে অবাক! বলতে পারেন রাগও হয়েছিলো প্রচন্ড। কারণ গানগুলো অনেক যত্ন করে বানিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিলো প্রতিটি গানের মিউজিক ভিডিও করে তারপর প্রকাশ করবো। ‘টোনাটুনি’সহ আরও দুই-একটা গানের ভিডিও’র শুটিংও আমি করে রেখেছিলাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায় অডিও অ্যালবাম আকারে গানগুলো প্রকাশের পর। তাই ওই ভিডিওগুলো তখন আর প্রকাশ করিনি।
ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন এখনকার আমি আর ভিডিও’র আমি বেশ আলাদা। অনেকে এটা নিয়ে একটু কনফিউজড যে, ভিডিওটি এআই দিয়ে করেছ কি না (হাহাহা)! শুধু এই গানটিই নয়, বেশ আগে আরও কিছু গান করা আছে আমার কাছে।
এতোদিন পর ভিডিওটি কেন প্রকাশ করলেন?
গানে যেহেতু ফিরেছি তাই দর্শকদের নতুন গান উপহার দেওয়ার একটা তাগিদ ছিলো। কিন্তু ঈদের আগে এতো অল্প সময়ে একেবারে ব্রান্ড নিউ গান করে ভিডিও করার সময় ছিল না। তাই ভাবলাম, কষ্ট করে যেহেতু এই গানটি করেছিলাম, তখন আর সেটি অপ্রকাশিত রাখব কেন? তারচেয়ে বরং ভক্তদের মাঝে দিলে তারাও খুশি হবে। কারণ, আমি যেখানেই যাই সেখানে ভক্তরা বলে থাকে, আপু ‘রূপবান’-এর মতো আরেকটি আইটেম ধাচের গান করেন। এই গানটিও তো ‘রূপবান’-এর মতোই। গানের কথা নিজেই লিখেছিলাম। সবমিলিয়ে গানটি ছেড়ে দিলাম। তবে ছাড়ার আগে আবার ভয়েস দিয়েছি, মিউজিক মাস্টারিং ঠিক করেছি। ফলে ২০১৩ সালের গানটি আর নতুন গানটির মধ্যে কিন্তু কোয়ালিটিতে পার্থক্য আছে। গায়কীতেও নতুনত্ব রয়েছে।
আপনি নাকি আর আইটেম গান করবেন না? কথাটি কী সত্যি?
কথাটি সত্যি, তবে পুরোপুরি সত্যি না। আমি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছি, নিজের অ্যালবাম বা সিঙ্গেল হিসেবে আর আইটেম ধাচের গান করবো না। মানে আমি আর নতুন কোন আইটেম গানে পারফর্ম করবো না। কিন্তু সিনেমায় যদি কোন ভালো আইটেম গানের প্রস্তাব আসে সেগুলো করবো। কারণ, আমার কণ্ঠশৈলীই এমন যে আইটেম ধাচের গান খুব ভালো মানিয়ে যায়। আমি চাই, সিনেমায় আমার কণ্ঠে অন্য নায়িকারা দারুণ দারুণ পারফর্ম করবেন। যেমন সম্প্রতি কনার গাওয়া ‘দুষ্টু কোকিল’ গানে পারফর্ম করেছেন মিমি চক্রবর্তী।
আপনাকে প্লেব্যাকে খুব একটা পাওয়া যায়নি কেন?
আপনারা জানেন, বিরতির আগে আমার জনপ্রিয়তা কিংবা চাহিদা কেমন ছিল? কিন্তু ওই সময়টায় অনেক প্লেব্যাকের প্রস্তাব পেলেও আমি সচেতনভাবেই সিনেমায় কম গান করেছি। কারণ তখন সিনেমায় যে ধাচের গান হতো বা দৃশ্যায়ন যেভাবে হতো সেগুলো আমার মনোঃপুত হতো না। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলেছে। এখন নায়িকারাও আগের চেয়ে দারুণভাবে নিজেদের প্রেজেন্ট করেন পর্দায়। সবমিলিয়ে এখন সিনেমায় নিয়মিত গাইতে চাই।
ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সঙ্গে আপনার জুটি ভীষণ সফল। এই জুটি এবং আবার একসঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাই?
অবশ্যই আমি আর ফুয়াদ ভাই একসঙ্গে খুব ভালো ভালো গান উপহার দিয়েছি। আমরা দুজনই দুজনের ক্যারিয়ারের শুরুতে একে অন্যের জন্য দারুণ প্রোডাক্টিভ ছিলাম। উনি এরপর আরও অনেকের সঙ্গে কাজ করেছেন, কিন্তু আমাদের জুটির মতো অতো জনপ্রিয় গান আর হয়নি। আবার আমিও অনেক গান করেছি কিন্তু ওই মাপের হয়নি। ফলে তাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। আমাদের যোগাযোগও রয়েছে। আমি চাই আবার একসঙ্গে কাজ করতে। তবে একসঙ্গে ফিরলে এমন কিছু নিয়ে আসবো যা আবারও পুরো দেশ মাতিয়ে দেবে।