যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৫ নভেম্বর। নির্বাচনে নির্ধারণ হবে কে হচ্ছে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশটির প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনের আগে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমালা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি বিতর্ক অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হয়েছেন।
বিতর্ক অনুষ্ঠানের মাঝেই ইনস্ট্রাগ্রামে পোস্ট দিয়ে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসকে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রিয় মার্কিন পপ তারকা টেলর সুইফট। কমলাকে ভোট দেবেন বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে এবিসি নিউজের আয়োজনে আসন্ন নির্বাচনের দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি বিতর্কে অংশ নেন।
বিতর্কে অনুষ্ঠানে কমলাকে টেলর সুইফটেরে সমর্থনের বিষয় ট্রাম্পের নজরে আনলে তিনি মন্তব্য করেছেন ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই’।
এর পরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টেলর কমলাকে সমর্থনের কথা জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দেন বলে বিবিসির বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কমলা নিয়ে গবেষণা করেছেন জানিয়ে টেলর সুইফট লিখেছেন, ‘আমি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস এবং তার রানিং মেট টিম ওয়ালজকে আমার ভোট দেব। আমি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেব, কারণ তিনি অধিকারের জন্য লড়াই করেন। আমি বিশ্বাস করি তাদের চ্যাম্পিয়ন করার জন্য একজন যোদ্ধার প্রয়োজন।’
সুইফট হ্যারিসকে ‘অটল-হাতে, প্রতিভাধর’ নেতা বলে অভিহিত করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমরা এই দেশে আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারি, যদি আমরা বিশৃঙ্খলা না করে শান্ত হয়ে চলি।’
২০২০ সালের নির্বাচনে টেলর সমর্থন জানিয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। ওই বছর একটি তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের সমালোচনাও করেছিলেন তিনি।
আগামী ৫ নভেম্বর হতে যাওয়া এবারের নির্বাচন নিয়ে গত মাসে টেলরকে জড়িয়ে এক বির্তকের সৃষ্টি করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে টেলর সুইফটের ছবি পোস্ট করেন। এতে তাঁকে নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিতে আহ্বান জানাতে দেখা যায়।
সুইফটের অনেক ভক্ত এবং কয়েকটি নজরদারি গ্রুপ তখন জানায়, ট্রাম্প যেসব ছবি পোস্ট করেছেন সেগুলোর বেশির ভাগই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি। সুইফও একই মন্তব্য করেন।
ভারতের অন্যতম ধনী টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা মারা গেছেন। গতকাল (৯ অক্টোবর) ৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। টাটা গ্রুপের সুদীর্ঘ যাত্রায় কাজের সূত্রে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে বলিউডের অনেক তারকাদের সঙ্গে। তাইতো কিংবদন্তি এই ব্যবসায়ীর শেষ বিদায়ে তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বলিউড সুপারস্টাররা।
বলিউড মেগাস্টার সালমান খান একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘মিস্টার রতন টাটার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।’
হলিউড ও বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া লিখেছেন, ‘আপনার দয়ালু স্বভাবের মাধ্যমে আপনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব রেখে গিয়েছেন। আপনার নেতৃত্ব এবং উদারতা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। আপনি আমাদের দেশের জন্য যা কিছু করেছেন, তাতে আপনার আবেগ ও উৎসর্গ ছিল স্পষ্ট। অনেক ধন্যবাদ স্যার। আপনি আমাদের সকলের অনুপ্রেরণা। এবং খুব মিস করব স্যার।’
প্রখ্যাত অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত লিখেছেন, ‘ভারত আজ একজন সত্যিকারের স্বপ্নদর্শীকে হারিয়েছে। তিনি ছিলেন সততা এবং সহানুভূতির ভাণ্ডার। অসংখ্য জীবনকে প্রভাবিত করেছিলেন। তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।’
সুপারস্টার অজয় দেবগন সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘একজন স্বপ্নদর্শীকে হারিয়ে গোটা বিশ্ব শোক করছে। রতন টাটার উত্তরাধিকার চিরকাল প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। ভারত এবং দেশের বাইরেও তার অবদান অপরিসীম। আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। শান্তিতে থাকুন, স্যার।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা তার ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন, ‘শ্রী রতন টাটাজির খবরে গভীরভাবে দুঃখিত। তিনি যা কিছু করেছেন, তার মাধ্যমে তিনি সততা, অনুগ্রহ এবং মর্যাদার মূল্যবোধকে সবার আগে রেখেছেন এবং সত্যিকার অর্থেই ভারতের আইকন এবং তাজ ছিলেন। আপনার আত্মার শান্তি কামনা স্যার, আপনি অনেকের জীবন বদলেছেন।’
তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা বরুণ ধাওয়ান তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে রতন টাটার একটি থ্রোব্যাক ছবি শেয়ার করেছেন এবং লিখেছেন, ‘আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি রতন টাটা স্যার।’
মেধাবী অভিনেতা রণদীপ হুদা টাটাকে ‘ভারতের সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, তবে তা তার বিশাল সম্পদের জন্য নয়, তার মূল্যবোধের জন্য।
১৯৩৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাটের সুরতে। ১৯৯১ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্যের কংগ্লোমারেটের চেয়ারম্যান হন রতন টাটা। ২০১২ সাল পর্যন্ত একশ বছরেরও বেশি আগে তার প্রপিতামহ এই গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন।
রতন টাটা ১৯৯৬ সালে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি টাটা টেলিসার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৪ সালে তার নেতৃত্বে আইটি কোম্পানি টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেসকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০০৪ সালে টাটা গ্রুপ আইকনিক ব্রিটিশ গাড়ির ব্র্যান্ড জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার অধিগ্রহণ করে। ২০০৯ সালে রতন টাটা মধ্যবিত্তের নাগালে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন। মাত্র ১ লাখ রুপির টাটা ন্যানো বাজারে আনেন তিনি।
রতন টাটা, টাটা গ্রুপের দুইবার চেয়ারপারসন ছিলেন-১৯৯১ থেকে ২০১২ এবং ২০১৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত। শেষের দিকে কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে সরে এলেও টাটার দাতব্য ট্রাস্টের প্রধান ছিলেন। অবসর নেয়ার অনেক পরে রতন টাটা সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন। ২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে পান ‘পদ্ম বিভূষণ সম্মান’।
মহারাষ্ট্র, আসাম সরকারও তাকে সম্মান প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন এই শিল্পপতি।
তুফানের পর একের পর এক নতুন কাজের খবর দিচ্ছেন পরিচালক রায়হান রাফী। ক’দিন আগে মুক্তি পেয়েছে তার পরিচালিত ওটিটি ফিল্ম ‘মায়া’। এরপরই ধুমধাম আয়োজনে জানালেন একঝাঁক তারকা নিয়ে নির্মাণ করছেন তার প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘ব্ল্যাক মানি’। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সুপারস্টার জিৎ আর বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা শরিফুল রাজকে নিয়ে ‘লায়ন’, শাকিব খানের সঙ্গে ‘তুফান ২’ ছবিগুলো রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।
এবার সামনে এলো এই নির্মাতার আরও একটি কাজের খবর। আর এই কাজের মাধ্যমেই দ্বন্দ্বের অবসান হচ্ছে রাফী ও অভিনেত্রী দীঘির। কারণ, নতুন এই সিরিজে অভিনয় করতে যাচ্ছেন দীঘি।
রাফীর সঙ্গে কাজের প্রসঙ্গে দীঘি বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি বিস্তারিত কিছুই বলতে পারব না। সেটা রাফীই ভালো বলতে পারবেন। ভালো গল্প, চরিত্র হলে আমার পক্ষ থেকে কাজ করতে কোনো অসুবিধা নেই। যদি আমাকে তার সিনেমার জন্য যোগ্য মনে করেন তাহলে নেবেন। তাতে আমিও সানন্দে কাজ করব। তবে আপাতত সিরিজ নিয়ে কিছুই বলতে পারছি না।’
নাম ঠিক না হওয়া সিরিজটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুট শুরু হওয়ার কথা ছিল জুলাই-আগস্টে, কিন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। নতুন শুটিং শিডিউল এখনও ঠিক হয়নি। সব ঠিকঠাক হলেই অফিসিয়ালি জানানো হবে বিষয়টি। দেশের একটি ওটিটির জন্য নির্মিত হবে এই সিরিজ। এতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার কথা রয়েছে নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের।
এদিকে দুই বছর আগে পরিচালক রায়হান রাফীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন দীঘি। নায়িকার প্রধান অভিযোগটা ছিল এমন, পরিচালক তাকে ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার জন্য চূড়ান্ত করেও পরে তমা মির্জাকে নায়িকা করেছেন। এমন অভিযোগের পর, নায়িকার ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিচালক। আর তাতেই গরম হয় আলোচনা।
রাফী এখন ‘ব্ল্যাক মানি’ সিরিজের শুটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এতে অভিনয় করছেন পূজা চেরি, নায়ক রুবেল, পাভেলসহ অনেকেই। ‘ব্ল্যাক মানি’র কাজ শেষ হলেই কলকাতার জিৎ ও ঢাকার শরিফুল রাজকে নিয়ে ‘লায়ন’-এর মিশনে নামবেন তিনি।
দেশের অন্যতম মেধাবী অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস। কাজের ক্ষেত্রে ভীষণ চুজি। কিন্তু সে কাজটি ধরেন তাতে তার নিমগ্নতা অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। এই তারকা এখন দূর্গা পূজা কাটাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি খুলনায়। আজ মহাষষ্ঠীতে থাকলো মৌটুসীর সাবেকি ডিজাইনের শাড়ি আর গয়নার এক্সক্লুসিভ পূজার ফটোশুট। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
মৌটুসী বিশ্বাস: এক কথায় অনবদ্য। আমি যেমনটি আশা করেছিলাম তেমনি কাজটি। এর পেছনে আপনি অনেক শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছেন। তাছাড়া অনেকদিন পর আমার প্রিয় ফটোগ্রাফার নূরকে পেয়েছি। সবমিলিয়ে দারুণ একটি টিমওয়ার্ক ছিলো। যদিও বৃষ্টি আমাদের বেশ ভুগিয়েছে। এজন্য সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা অবধি শুট করতে হয়েছে। আমি খুব একটা শুট করি না। পূজার জন্য শুট তো আরও কম করা হয়। বেশ কয়েক বছর আগে পূজার একটি শুট করেছিলাম কাশবনে, সেটিও খুব প্রশংসা পেয়েছিলো।
এ বছর দেখলাম অনেকেই কাশবনেই পূজার শুট করছে। তাই আমরা এমন একটি লোকেশন বেছে নিতে চাইলাম যেটি আর কেউ করেনি এ বছর। লালবাগ কেল্লার প্রাচীন নিদর্শনের ওপরই আস্থা রাখলাম। সব মিলিয়ে আমি খুব উপভোগ করেছি।
মাসিদ রণ: পূজায় আপনার সাজ পোশাক নিয়ে জানতে চাই...
মৌটুসী বিশ্বাস: আমি খুব একটা সাজ পোশাক পছন্দ করি না। কম্ফোর্টেবল লাগে এমন জিনিসই পরি। সেক্ষেত্রে পূজায় প্রথম পছন্দ সুতি শাড়ি। এবার দু খানা সুন্দর শাড়ি উপহার পেয়েছি। আমিও উপহার দিয়েছি কাছের মানুষদের। পূজা বলেন আর যে কোন ব্যক্তিগত উপলক্ষ্য বলেন, আমি কখনোই মনে করি না আমি একজন অভিনেত্রী, আমাকে ওই ইমেজ বহন করতে হবে সবসময়। ক্যামেরার বাইরে আমি অতি সাধারণ।
তবে এই যে আপনাদের সঙ্গে পূজার ফটোশুট করলাম, আমি যদি সব সময়ের মতো আটপৌরে অবস্থায় ক্যামেরার সামনে চলে আসি সেটি কিন্তু ভালো উদাহরণ নয়। ক্যামেরার সামনে নিজেকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে যাতে আমার সাজ পোশাকে ভুল কোন বার্তা না ফুটে ওঠে। আজকের সাজে পূজার আমেজ ঠিকঠাকভাবে ফুটে উঠেছে। একইসঙ্গে ছবিগুলো দেখে হয়ত কেউ কেউ মোটিভেটেড হতে পারে। এজন্য আমি পূজার একেবারে সাবেকি ডিজাইনের অফ হোয়াইট শাড়ি উইথ লাল পাড় বেছে নিয়েছি। গয়নায়ও রয়েছে ঠাকুর বাড়ির সাবেকীয়ানা। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লেগেছে গয়নার মোটিয়ে আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যবাহী জামদানির নকশা করা। শাড়ির জন্য ‘সিরিমোনিয়াল অ্যাটায়ার’ আর গয়নার জন্য ‘পস গ্যালারি’কে ধন্যবাদ। আজ মেকাপ করেছে একদম তরুণ একটি ছেলে, ওর নাম নূর।
মাসিদ রণ: এবারের পূজা কেমন কাটছে?
মৌটুসী বিশ্বাস: জন্মসূত্রে সনাতন ধর্মের মানুষ আমি, ফলে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে একটা আনন্দ তো কাজ করেই মনের কোনে। এ সময় ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। বাবা-মায়ের চাকরী সূত্রে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতাম। তাই বেশিরভাগ পুজো কেটেছে চট্টগ্রামের রামকৃষ্ণ মিশনে। তবে বাবা-মায়ের চাকরীজীবন শেষ হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর পুজো কাটাই গ্রামের বাড়ি খুলনায়। এবারও খুলনায় এসেছি পুজো করতে। তবে এবার সত্যি বলতে নানা কারণে আমার পূজার আনন্দটা বেশ ফিকে লাগছে।
প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো- এ বছরই প্রথম ‘বাবা’ ছাড়া পূজা কাটাতে হচ্ছে। গত বছরও বাবা পূজার সময় আমার সঙ্গে ছিলেন বা বাবার সঙ্গে আমি ছিলাম। একদম সুস্থ সবল মানুষ ছিলেন, বার্ধক্যজনিত কিছু সাধারণ সমস্যা ছাড়া তেমন কিছু ছিলো না তখন। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি আমাকে একা করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। যেহেতু আমার আর কোন ভাই বোন নেই, তাই বাবা আমার ওপরেই সব দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আমি চেষ্টা করেছি সবটা পালন করতে।
মাসিদ রণ: পূজার রঙ ফিকে হওয়ার আর কি কারণ রয়েছে?
মৌটুসী বিশ্বাস: আজ মহাষষ্ঠী, এখনো দেশের মানুষ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে পূজা উদযাপন করছে। এটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু পূজা শুরুর আগেই দেশের বেশকিছু জেলায় প্রতিমা ভাঙার খবরে মনটা প্রচণ্ড খারাপ হয়েছে।
এছাড়া শুনেছি রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় দীর্ঘদিন পূজা মণ্ডপ হলেও এবার নাকি তা করতে দেওয়া হয়নি। এটা তো সংখ্যালঘুদের ওপর এক ধরনের অন্যায়। এসব আমাকে পীড়া দিয়েছে। মনে হয়েছে আমাদের সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য, সেটি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ বিশে^র বুকে অসাম্প্রদায়িক দেশের অনন্য উদাহরণ গড়বে।
মাসিদ রণ: জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘একান্নবর্তী দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু। এরপর ‘ব্যাচেলর’সহ একাধিক সিনেমা, অনেক নাটক ও থিয়েটার চর্চা। কিন্তু আজকাল আপনি একদম পর্দায় নেই। কেন?
মৌটুসী বিশ্বাস: অভিনয়টা গত কয়েক বছর যাবত শুধুই ভালোলাগা থেকে করি। অভিনয় এখন আর আমার পেশা নয়। তবে একটা সময় এটাই ছিলো পেশা। কিন্তু পেশাদার অভিনয়শিল্পী হতে গেলে আমাদের দেশে কাজের মান ধরে রাখা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এখন অভিনয়কে শুধুই পেশা হিসেবে দেখি না। কর্মসূত্রে নতুন পরিচিতি যোগ হয়েছে। বাবার ফার্মিং দেখাশোনা করছি এটা অনেকেই জানেন, সেই সাথে আরো একটি কাজে ভীষণ ব্যস্ত সময় পর করছি গত এক বছর ধরে। তাছাড়া সংসার আছে, সেখানে সময় দেয়ার কথা আলাদা করে বলার কিছু নেই। সব মিলিয়ে নিজেকে প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যস্ত রাখি। কিন্তু যেনতেন চিত্রনাট্য আসলেই রাজী হয়ে যাই না।
এরমধ্যে বেশকিছু কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু কোনটিই মনঃপুত হয়নি। যে দু-একটা কাজের কথা এগিয়েছে তা ফাইনালি ব্যাটে-বলে মেলেনি বলে করিনি। তবে সামনে একটা ইন্টারেস্টিং কাজ আসছে। এখনই প্রযোজনা সংস্থা থেকে এ নিয়ে কিছু বলতে নিষেধ আছে।
প্রায় প্রতিদিনের মতো আজও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুকে চলমান ঘটনা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার আজকের বিষয়, ‘চলচ্চিত্রবিষয়ক কমিটি’। এক কথায় বলতে গেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওতায় সম্প্রতি গঠিত হওয়া চলচ্চিত্র বিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে তার গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন এই নির্মাতা।
বলে রাখা ভালো, এই কমিটিগুলোতে মূলত ফারুকীর অনেক কাছের মানুষজন রয়েছেন। তারপরও তিনি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে কমিটিগুলোর সমালোচনা করায় পোস্টের কমেন্ট বক্সে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
ফারুকী লিখেছন, ‘‘চলচ্চিত্রবিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে তার মধ্যে ‘পরামর্শক’ কমিটিই আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে। বাকী কমিটিগুলোতে (চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ড, শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদানের স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটিসহ একাধিক কমিটি সম্প্রতি গঠিত হয়েছে) যোগ্য লোক যেমন আছে, কিছু বিস্ময়কর নামও আছে। এই সমালোচনাটা করে রাখা দরকার যাতে সরকার বুঝতে পারে। না হলে আগের আমলের মতো ‘কর্তা যা করেছেন মাইরি’ সিচুয়েশন বানিয়ে ফেলবো আমরা।’’
এইসব কমিটিতে আরও কারা থাকতে পারতো না উল্লেখ করে ফারুকী লিখেছেন, ‘আমার বিবেচনায় এখানে আরো কিছু অংশীজন থাকা উচিত ছিলো। যেমন ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, নুহাশ হুমায়ুন। স্বচ্ছতার জন্য বলে নেয়া ভালো, আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিলো পরামর্শক এবং আরেকটা কমিটিতে থাকার জন্য। আমি ব্যক্তিগত কারণে থাকতে চাইনি। এখন যাদের নাম উল্লেখ করলাম তারা থাকতে অপারগতা জানিয়েছে কিনা আমি জানি না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমার বক্তব্য থাকবে- এই পরামর্শক কমিটি থেকে পরামর্শ যা যাবে তা যেনো অংশীজনরাই তৈরি করে দেন। সরকারী কর্মকর্তারা কেবল এক্সিকিউশনের দিকটা দেখা উচিত। নীতি প্রণয়নে তারা হাত না দেয়াই ভালো হবে কারন তারাতো আমাদের সমস্যা এবং প্রয়োজনটা জানেন না।’
এরপর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই নির্মাতা। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে আরেকটা কথা যোগ করতে চাই। শিল্পকলা একাডেমির জমি আছে মোটামুটি দেশ জুড়েই। কমপক্ষে ৩০ জেলায় শিল্পকলার জায়গায় মাল্টিপ্লেক্স করে সেটা দরপত্রের ভিত্তিতে প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। যেহেতু আমাদের জাতিগত দুর্নাম ‘আমরা শুরু করি, অব্যাহত রাখি না’, সেহেতু এই সব মাল্টিপ্লেক্সকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে এর মেইনটেনেন্স ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা। না হলে লিজ বাতিলের শর্ত থাকতে হবে। এখন ঝামেলা হলো শিল্পকলা সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অধীন আর সিনেমা-টিভি-ওটিটি তথ্য ও সম্প্রচারে। এই দুই মন্ত্রনালয়ের সমন্বয় করে হলেও এটা করা দরকার।’
ফারুকী যেহেতু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্জার করেছেন তারই প্রেক্ষিতে লিখেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটা হচ্ছে ফিল্ম ফান্ড এবং সাপোর্ট সিস্টেম। আমাদের সামনে বুসান, সানড্যান্স, বার্লিন, রটারডাম, ফিল্মবাজার স্ক্রিন রাইটার্স ল্যাবের উদাহরণ আছে। আমি মনে করি পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান প্রথাতে আমূল পরিবর্তন আনা। ৫০ ভাগ ছবি ফার্স্ট এন্ড সেকেন্ড টাইম ফিল্মমেকারদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। এই ৫০ ভাগের মাঝে কমপক্ষে অর্ধেক নারী ফিল্মমেকারদের জন্য থাকা উচিত। তো এই নতুন পরিচালকদের স্রেফ ফান্ড দিয়েই হাত গুটিয়ে ফেলা যাবে না। স্ক্রিন ল্যাবের মতো ইনকিউবিটরে লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল মেন্টর দিয়ে এদের সহায়তা করতে হবে।’
পাশাপাশি অনুদান পলিসি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার পরামর্শ ফারুকীর। তিনি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘আমরা কোন ধরনের ছবিকে অনুদান দিবো? ইরানের মতো সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট এবং ইমপ্যাক্টফুল স্টোরিটোলিং? নাকি কোলকাতা আর্টহাউজের দুর্বল ফটোকপি? নাকি বেলা তারের মতো ছবি? আমার বিবেচনা হচ্ছে আমাদের এখানকার মানুষ, তাদের সম্পর্ক, আবেগ, পাগলামো এসব মিলিয়ে আমাদের আশেপাশে নিজস্ব গল্প এবং চরিত্রেরা হেঁটে বেড়াচ্ছে। এইসব নিয়ে সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ছবির সংখ্যা বাড়লেই আমরা সত্যিকারের বাংলাদেশী নিউ ওয়েভ হতে পারবো।
একই সাথে পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান কমিটি পূনর্গঠন করা। নতুন পলিসির আলোকে যারা এটা এক্সিকিউট করতে পারবে তাদের রাখা উচিত। দেখেন ব্যক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে অনুদান কমিটি করা হয়েছে সেখানে এক দুই জন যোগ্য লোক থাকলেও এটা অনেকটাই আওয়ামী লীগ আমলের মতোই ব্যাকডেটেড কমিটি। আর এই কমিটির কে কিভাবে ফ্যাসিবাদের কালচারাল উইংয়ের ফুটসোলজার ছিলো সেই আলাপে গেলাম না।
আমি মনে করি এই কমিটিতে থাকা উচিত ছিলো তাদের যাদের সারা দুনিয়ায় এই কাজগুলো কিভাবে হচ্ছে সেটার ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা আছে। বিদ্যমান কমিটির যোগ্য দুয়েকজনের পাশাপাশি আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, নুহাশ হুমায়ুন, আরিফুর রহমান, তানভীর হোসেন, সালেহ সোবহান অনীম, আদনান আল রাজীব, কামার আহমেদ সায়মন, হোমায়রা বিলকিস এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকলে আমরা একটা ফরওয়ার্ড লুকিং ভিশন পেতাম।
অনেকে ভাবতে পারেন আমি ব্যক্তির উপর কেনো গুরুত্ব দিচ্ছি। দিচ্ছি কারণ ব্যক্তির কারনেই আকাশ পাতাল পার্থক্য রচিত হয়। মোহাম্মদ আযম আর মিডিওকার কোনো রাম-শ্যাম এক জিনিস না। সৈয়দ জামিল আহমেদ আর লাকী এক জিনিস না।’