২০২৪: ভিউয়ে এগিয়ে থাকা নাটক ও তারকারা
গত দুই-তিন বছরে নাটক প্রচারের ক্ষেত্রে একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। একসময় টেলিভিশন ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে নাটক প্রচারের কথা ভাবাই যেত না। সেই নাটক এখন সরাসরি মুক্তি পাচ্ছে ইউটিউবে। ফলে নাটকের ইন্ডাস্ট্রি বড় হচ্ছে। গড়ে উঠেছে শতাধিক ইউটিউব চ্যানেল। টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেলগুলো নাটকের বাজেট বাড়াচ্ছে। কোটি কোটি টাকা লগ্নি করছে। সেই বৈদেশিক আয় দিয়ে বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রেকর্ড গড়েছিলেন ইউটিউব চ্যানেলের প্রযোজকেরা।
ভিউ-এর দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ নাটক-
শ্বশুরবাড়িতে ঈদ (নিলয়-হিমি)- ৪৭ মিলিয়ন ভিউ
মামার বাড়ি (নিলয়-হিমি)- ৪১ মিলিয়ন ভিউ
চাচা ভাতিজা জিন্দাবাদ (নিলয়-হিমি)- ৩৮ মিলিয়ন ভিউ
বান্ধবীর ভাই (নিলয়-হিমি)- ৩৩ মিলিয়ন ভিউ
শুধু তোমার জন্য (মুশফিক আর ফারহান-কেয়া পায়েল)- ৩০ মিলিয়ন ভিউ
জামাই বউর মাথা গরম (মোশাররফ করিম-তানিয়া বৃষ্টি)- ২৯ মিলিয়ন ভিউ
লাভ লাইন (জোভান আহমেদ জোভান-নাজনীন নেহা)- ২৭ মিলিয়ন ভিউ
আমার হয়ে থেকো (মুশফিক আর ফারহান-সাদিয়া আয়মান)- ২৬ মিলিয়ন ভিউ
একবার বলো ভালোবাসি (মুশফিক আর ফারহান-নাজনীন নীহা)- ২৬ মিলিয়ন ভিউ
তুই আমারই (মুশফিক আর ফারহান-সাদিয়া আয়মান)- ২৫ মিলিয়ন ভিউ
যে পাখি ঘর বোঝে না (মুশফিক আর ফারহান-তানিয়া বৃষ্টি)- ২৪ মিলিয়ন ভিউ
চলতি বছরের শুরু থেকেই দর্শক কমেডি ও রোমান্টিক গল্পের নাটক বেশি দেখেছেন। বেশি দেখা নাটকগুলোর মধ্যে ছিল ‘শ্বশুরবাড়িতে ঈদ’, ‘মামার বাড়ি’, ‘চাচা ভাতিজা জিন্দাবাদ’, ‘বান্ধবীর ভাই’ ইত্যাদি। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্বশুরবাড়িতে ঈদ নাটকের গল্পে উঠে এসেছে শ্বশুরবাড়িতে ঈদকে ঘিরে মজার সব ঘটনা। কোনো গল্পে আবার উঠে এসেছে সামাজিক বাস্তবতা।
‘মামার বাড়ি’ নাটকটি সবচেয়ে বেশি দেখা নাটকের তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছে। এর গল্প মামার বাড়িতে মায়ের সম্পদ ভাগ করাকে কেন্দ্র করে। কমেডির বাইরে নাটকে ভিন্নভাবে দেখা যায় নিলয় ও হিমিকে। ভিউ দিয়ে এ বছর এগিয়ে ছিলেন পরিচালক মুহিন খান, তাইফুর জাহান আশিক, প্রবীর রয় চৌধুরী, মিফতা আনান, তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রীতি দত্তের পরিচালনায় মুশফিক আর ফারহান এবং তানিয়া বৃষ্টি অভিনীত ‘যে পাখি ঘর বোঝে না’ নাটকটিও ভিউয়ের দিক ১১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। নির্মাতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঈদে প্রচারিত নাটকটির জন্য সত্যি খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। ভালো নাটক হলে মানুষ দেখবেই, এ নাটকটি তার প্রমাণ। অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এখন নাটকটির ভিউ আছে ২৪ মিলিয়নের উপরে।’
ভিউয়ে এগিয়ে কোন তারকারা
নাটকের ভিউ মানেই সবার আগে চলে আসে অভিনয়শিল্পী জুটি নিলয় আলমগীর ও হিমির কথা। তিন বছর ধরে হিমি-নিলয়ের নাটক অঙ্গনে আলোচিত জুটি। এখন ৮০ ভাগের বেশি নাটকে তাদের একসঙ্গে দেখা যায়। বছরের সবচেয়ে বেশি ভিউ পাওয়া ১০ নাটকের মধ্যে প্রথম চারটি নাটকেই দেখা যাচ্ছে এই জুটিকে। এ ছাড়া কয়েকটি নাটকে মুশফিক আর ফারহানের সঙ্গে অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানকে দেখা গেছে। তাদের ‘আমার হয়ে থেকো’ ও ‘তুই আমারই’ দর্শক বেশি দেখেছেন। নাটকগুলো ইউটিউবে শীর্ষ দেখা ১০ নাটকের মধ্যে রয়েছে।
এ ছাড়া ফারহানের সঙ্গে নাজনীন নীহার ‘একবার বলো ভালোবাসি’ নাটকটি ভিউয়ে শীর্ষ ৯-এ আছে। কেয়া পায়েল অভিনেতা ফারহানের সঙ্গে ‘শুধু তোমার জন্য’ নাটকে জুটি বেঁধে ছিলেন; সেটাও আলোচনায় ছিল। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে নাটক দিয়ে আলোচনায় থাকেন মোশাররফ করিম। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি, এই অভিনেতার ‘জামাই বউর মাথা গরম’ নাটকটি দর্শকেরা পছন্দ করেছেন। তার সহশিল্পী ছিলেন তানিয়া বৃষ্টি। ভিউয়ের হিসাবে ফারহান আহমেদ জোভান ও নাজনীন নীহার ‘লাভ লাইন’ রোমান্টিক গল্পটি দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ছিল। এর বাইরে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তৌসিফ মাহবুব, খায়রুল বাসার, ইয়াশ রোহান, শামীম হাসান সরকারদের নাটক দর্শকেরা বেশি দেখেছেন।
ধারাবাহিক ছিল তারকাশূন্য
বর্তমান সময়ে টেলিভিশন নাটকের প্রতি বেশির ভাগ দর্শকের অনীহা রয়েছে। টেলিভিশনে প্রচারের পরে নাটক ইউটিউবে মুক্তি পেলেই তারকা কলাকুশলীরা সবচেয়ে বেশি সাড়া পান। বিজ্ঞাপন বিরতির ঝামেলা, পছন্দমতো সময়ে নাটক দেখাসহ নানা সুবিধার জন্য ইউটিউবকেই দর্শক নাটক দেখার প্রধান প্ল্যাটফর্ম ধরে নিয়েছেন। যে কারণে টেলিভিশনের চেয়ে ইউটিউব নাটকের দিকে অভিনয়শিল্পীদের ঝোঁক বেশি। একই কারণে টেলিভিশন ধারাবাহিকগুলোও মান হারাচ্ছে। যে ধারাবাহিক নাটক দিয়ে একসময় তারকা তৈরি হয়েছে, সেই ধারাবাহিক এখন তারকাশূন্য। একসময় মোশাররফ করিমকে বছরে টানা চার–পাঁচটি ধারাবাহিকে দেখা গেলেও এখন বছরে খুব বড়জোর এক-দুটো ধারাবাহিকে দেখা যায়। বেশির ভাগই এখন এক ঘণ্টার নাটক নিয়ে ব্যস্ত। এ ছাড়া নাটকপাড়া দাপিয়ে বেড়ানো জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, মুশফিক আর ফারহান, ইয়াশ রোহান, সাবিলা নূর, তাসনিয়া ফারিণ, অহনা রহমান তানিয়া বৃষ্টি, কেয়া পায়েল, তটিনীসহ ভিউ রয়েছে এমন ৯০ ভাগের বেশি শিল্পীকেই ধারাবাহিকে দেখা যায় না।