জুয়ার প্রচারণায় জড়িয়ে বিতর্কিত ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকারা
জুয়ার প্রচারণায় যুক্ত হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছেন শোবিজ তারকারা। অবাক করা বিষয় হলো- এই কাজটির জন্য কতৃপক্ষের প্রথম পছন্দ ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকারা। কেউ কেউ এই কাজে যুক্ত হওয়ার পেছনে নিজেদের যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন, কেউ ছিলেন চুপচাপ। বছরের প্রথম থেকে যারা জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হয়ে সমালোচিত ছিলেন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক-
এ বছর দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে অপু বিশ্বাসের। একটি ‘ট্র্যাপ; দ্য আনটোল্ড স্টোরি’, অন্যটি ‘ছায়াবৃক্ষ’। দুটি ছবির কোনোটিই তাকে সফলতা এনে দিতে পারেনি। অভিনয় দিয়ে আলোচনায় আসতে না পারলেও অপু বিশ্বাস হয়েছেন সমালোচিত। তার এই সমালোচিত হওয়ার কারণ একটি অবৈধ জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হওয়াকে ঘিরে। অবৈধ সেই বেটিং অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার খবর এ বছরের জানুয়ারিতে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। বছরের শুরুতে অবৈধ সেই অ্যাপ অপু বিশ্বাসের একটি ভিডিও শুভেচ্ছাবার্তা পোস্ট করে।
২০২৪ সালে কোনো ছবি মুক্তি পায়নি মাহিয়া মাহির। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঘিরে গত বছরের শেষ দিক থেকে বছরের শুরুর দিকে এই তারকাকে ঘিরে ছিল আলোচনা–সমালোচনা। জানুয়ারিতে নির্বাচন শেষ হলেও মাহিকে ঘিরে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা থেমে থাকেনি। একসময় এসে মাহি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ রাকিব সরকারের সঙ্গে তার সংসারের ইতি টানার খবরে আলোচনায় আসেন। মে মাসে এসে শোনা যায়, মাহিয়া মাহি একটি অবৈধ জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন। শুভেচ্ছাদূত হয়েই তিনি সেই জুয়ার অ্যাপের প্রচারণা চালান। ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় বিষয়টি জানান মাহি নিজেই। এভাবে প্রকাশ্যে অবৈধ জুয়ার অ্যাপের প্রচারণার কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন মাহি। সব মিলিয়ে বছরটা মোটেও ভালো যায়নি মাহির। হাতে সিনেমা নেই। নির্বাচনে হারার পর দ্বিতীয় সংসারেও ভাঙন। তবে তারপরও নিজেকে ফিরে পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
২০২৪-এ বড়পর্দায় কোনো ছবি মুক্তি পায়নি পরীমনির। তবে শুটিং করেছেন একাধিক চলচ্চিত্রের। কোনোটি দেশের, আবার কোনোটি দেশের বাইরের। বছরের শেষ দিকে ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া কাজ দিয়ে আলোচনায় ছিলেন এই তারকা। অভিনয়জীবনের শুরু থেকে আলোচনার পাশাপাশি নানান সব কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচিত পরীমনি। এ বছর জুয়ার অ্যাপের মডেল হয়েও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন এই তারকা। যেখানে বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজি ধরা নিষিদ্ধ, প্রচার-প্রচারণায়ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে—সেখানে অন্য তারকাদের মতো জুন মাসে পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন বেটিং (জুয়া) প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্র প্রকাশ করেন। এতে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে বাজি ধরে অর্থ লাভের জন্য দর্শককে প্রলুদ্ধ করতে দেখা গেছে তাকে।
অনেক দিন ধরে নতুন কোনো ছবিতে অভিনয়ের খবরে ছিলেন না ঢালিউড তারকা নুসরাত ফারিয়া। সেপ্টেম্বরে এসে তারপরও আলোচনায় তিনি। এই সময়টায় একটি জুয়ার অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার পাশাপাশি সেই অ্যাপের একটি গানেও দেখা গেছে তাকে। গানে গানে জুয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন নুসরাত ফারিয়া। ‘সবাই মিলে খেলব, আনন্দ করে ফিরব, সাবধানে খেলে যাব...’ এমন কথার একটি গানের জমকালো পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন নুসরাত ফারিয়া। গানের শেষাংশে তাকে বলতে দেখা গেছে, ‘প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পথচলায় আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত।’ ভিডিওর বর্ণনায় লেখা হয়েছে, ‘শুভেচ্ছাদূত নুসরাত ফারিয়ার অফিশিয়াল গানের ভিডিও। বাংলাদেশের নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম...।’
চলতি বছর মুক্তি পাওয়া দুটি সিনেমা ‘মায়া: দ্য লাভ’ ও ‘রিভেঞ্জ’-এ চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী ছিলেন চলনসই। তবে ভিন্নধারার সিনেমা ‘দেয়ালের দেশ’-এ অভিনেত্রী বুবলীকে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ‘মায়া’ ও ‘দেয়ালের দেশ’ মুক্তি পেয়েছিল রোজার ঈদে। একই সময়ে একই অভিনেত্রীর দুটি ভিন্নধারার সিনেমা চলছে হলে, এটা বিরল দৃশ্যই বটে। অক্টোবরে ‘পিনিক’ নামের নতুন ছবির শুটিংয়ের কারণে আবার খবরের শিরোনামে আসেন এই তারকা। ছবির শুটিংয়ের মধ্যে সমালোচিত হন বুবলী, তাকে ঘিরে এই সমালোচনা জুয়ার অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার কারণে। হঠাৎ করে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণামূলক একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে নিজেই জানান অবৈধ অ্যাপের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার খবর। প্রচারণামূলক সেই ভিডিওতে বুবলীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বুবলী।....একজন শুভেচ্ছাদূত। তোমরা সবাই কি তৈরি আছ? অনলাইন স্পোর্টস এবং ক্রিকেট অভিজ্ঞতাকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য।...শুধু একটি আঙুলের ছোঁয়ায়। সুযোগ হাতছাড়া কোরো না।....জেতার আনন্দ উপভোগ করো, নিরাপত্তার স্বার্থে।...যেখানে খেলা শুধু জেতার জন্য।’ সাধারণত চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী তাঁর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘর সবার জন্য উন্মুক্ত রাখেন। তবে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণামূলক এই ভিডিও পোস্টের পর মন্তব্যের ঘর বন্ধ করে রেখেছিলেন।
বছরের শেষ দিকে মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুলের জুয়ার অ্যাপের প্রচারণার খবরটি প্রকাশ্যে আসে। সদ্য শুরু হওয়া এবারের বিপিএল ঘিরে একটি জুয়ার অ্যাপের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি অনুষ্ঠানে কথা বলতে দেখা গেল এই মডেল ও অভিনয়শিল্পী তারকাকে। মডেল ও অভিনয়শিল্পী জান্নাতুল পিয়া একজন পেশাদার আইনজীবীও। তাই বিনোদন অঙ্গনসংশ্লিষ্টদের মতে, একজন আইনজীবী হয়ে তিনি কীভাবে একটি জুয়ার অ্যাপের স্পনসর হয়েছেন, এমন একটি অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলেন! বিপিএল উপলক্ষে পিয়া একটি ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবের জন্য তৈরি এই অনুষ্ঠানে জান্নাতুল পিয়াকে ম্যাচ–পূর্ববর্তী বিশ্লেষণ করতে দেখা গেছে। উপস্থাপনার সময় এই মডেল ও অভিনেত্রী জুয়ার অ্যাপের নামসংবলিত একটি টি–শার্ট পরিহিত ছিলেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, এই অ্যাপের শুভেচ্ছাদুত নন তিনি। তবে পিয়া জান্নাতুল বলেন, ‘আমি একজন ক্রিকেটপ্রেমী। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আমি কথা বলতে ভালোবাসি। আমি শুধু ক্রিকেট নিয়ে পোস্ট করছি, যা ক্রিকেট সম্পর্কে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জান্নাতুল পিয়া যে জুয়ার অ্যাপের টি–শার্ট পরে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন, তা বাংলাদেশের সেরা জুয়ার এজেন্টদের একটি, যা ১০ বছর আগে চালু হয়।