আমি মধুমালতী, মাধবীলতা নই



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
শরতেও ফুটে আছে মাধবীলতা, ছবি: বার্তা২৪.কম

শরতেও ফুটে আছে মাধবীলতা, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাকে অনেকেই ভুল নামে চিনেন! আবার কেউ কেউ খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে আমাকে ভুল নামেও ডাকেন। আসলেই আমার খুব কষ্ট হয় তখন! এই ভুলটি শুনতে শুনতে হৃদয় ব্যথায় ছেয়ে যায়। আসলে আমার নাম মধুমালতী। কখনোই মাধবীলতা বা মাধবী নয়।

পুষ্প প্রেমীরা ভুল করে আমাকে মাধবী নামে ডাকতে থাকেন। আসলে মাধবী একেবারেই আলাদা ধরণের ফুল। আমি সুলভ অর্থাৎ আমাকে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু মাধবী দুষ্প্রাপ্য। সহজে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই হলো আমাদের প্রতিবেশগত পার্থক্য।

তবে রবীন্দ্রনাথ আমাকে একটি বিশেষ নামে আমার নামকরণ করেছেন, তা হলো- মধুমঞ্জরি লতা। শিল্প-সাহিত্যপ্রেমী বিদগ্ধ ব্যক্তিদের কেউ কেউ আমাকে এই নামেই ডাকেন। এ নামটি আমারও পছন্দ হয়েছে বেশ।

বলা যেতে পারে পিতা-মাতার দেয়া নাম আর প্রকৃতি প্রেমী বিশ্বকবি’র নাম এই দুটোকে জোড়া লাগলে সুন্দর একটি নামের অর্থবহ মর্যাদা দাঁড়িয়ে যায়- মাধবীলতা মধুমঞ্জরি। আমি নিজেই অবাক হই! প্রকৃতিতে জন্ম নিয়ে রাতের আঁধারে মৃদু গন্ধ বিলিয়ে আমার এই জন্মটা বৃথা যায়নি তবে। কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছে।

অসংখ্য মাধবীলতার সমাহার

আমি কিন্তু অনেকটা সহজলভ্য। শৌখিন বৃক্ষ প্রেমীরা আমাকে তাদের বাড়ির ছাদে, বেলকানীতে বা ছোট বাগানে যত্ন করে লাগিয়ে থাকে। রঙের বৈচিত্র্য, স্নিগ্ধময় সুবাস আর প্রস্ফুটন প্রাচুর্যের জন্য আমাকে অনেক পুষ্প প্রেমীরা তাদের প্রিয় ফুলের তালিকায় ঠাঁয় দিয়েছেন। বিশেষ কৃতজ্ঞ আমি তাদের প্রতি।

আমার ইংরেজি নাম রেঙ্গুনক্রিপার এবং বৈজ্ঞানিক নাম Quisqualis indica. কাষ্ঠলতার পত্রমোচী গাছ আমি। গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শরতে আমার শরীর কয়েক রঙের ফুলের শোভায় ভরে উঠে। প্রতিটি ডালের মাথায় বড় বড় থোকায় সন্ধ্যের পরে আমি ফুটি। মৃদু সুগন্ধিতে মাতিয়ে রাখি চারপাশ। রাত গভীর ও নীরব হলে বারান্দা বা বেলকানি থেকে আমার সৌরভ পুষ্পপ্রেমীদের দারুণভাবে মাতিয়ে তোলে। তারা আরো বেশি করে ঘ্রাণ নেবার জন্য আমার কাছে ঘেঁসে।

ঝুলে থাকা সৌন্দর্যের বাহার

একই গাছের মাঝে সাদা, লাল, গোলাপি ও মিশ্র রঙের ফুল আমি ফুটিয়ে থাকি। আমার ক্ষুদ্রাকৃতির পাপড়ি সংখ্যা পাঁচটি, মাঝে পরাগ অবস্থিত, দলনল বেশ লম্বা। ওই সব প্রস্ফুটিত বর্ণিল ফুলগুলো থেকে মিষ্টি গন্ধ বের হয়। শুধু কি তা-ই? অজস্র ফুটন্ত ফুলের সৌন্দর্য তখন খুবই নজরকাড়া ও মনোরম।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কিংবদন্তীতুল্য শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আমার নাম ধরে গান গেয়েছেন। পুরাতন বাংলা গান প্রেমী এবং ফুল প্রেমীদের নিশ্চয়ই এটা জানা থাকার কথা। গানটি জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথেই স্বাভাবিকভাবেই চিরদিনের জন্য বোধ করি অমর হয়ে গিয়েছি আমি। অসম্ভব সুন্দর এই গানটি লিখেছেন প্রণব রায় আর গানটির শব্দবলীর ভেতর সুরের জাদু ছড়িয়ে দিয়েছেন রবীন চট্টোপাধ্যায়।

আশা করি, এবার আপনাদের ভুল ভাঙলো। এখন থেকে চলতি পথে হঠাৎ আমার সাথে দেখা হলে গেলে বা চোখাচোখি হয়ে গেলে আমাকে আর ভুল নামে ডাকবেন না। আমি কিন্তু আপনাদের আশেপাশেই ফুটে থাকা প্রকৃতিকন্যা মধুমালতী।

   

কবে পাবো শীতের দেখা?



আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গুড়ি গুড়ি বায়, হিমের কাঁথা গায়, দাঁড়িয়ে কুয়াশায়, পাতা ঝরা শীতের ছোঁয়া, কাঁপিয়ে দিয়ে যায়’- আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে শীতকে ব্যাখ্যা করতে এর চেয়ে সুন্দর অভিব্যক্তি আর কী হতে পারে! সবুজ ঘাসের ডগায় জমা হয় শিশির বিন্দু। সকালবেলা সূর্যের সোনালি আলো যখন জমে থাকা শিশির বিন্দুর উপর এসে পড়ে, তখন তাতে সোনালি আবহ তৈরি হয়। মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে যায় ফুলের মধু সংগ্রহ করতে। শীতের কুয়াশা ভেজা সকালে মায়ের হাতের পিঠাপুলি, বন্ধুদের সাথে খোলা মাঠে দাঁড়িয়াবান্ধা কিংবা গোল্লাছুট, উঠোন ভর্তি ধান মাড়ানো; এ যেন তীব্র আকাঙ্ক্ষা গ্রামীণ শৈশবের স্মৃতিচারণ। 

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে গাছি 

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে। কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ। বাঙালি মেয়েরা আয়োজন করে চড়ুইভাতি আর শহরের মানুষেরা মাতে বারবিকিউতে। গ্রামে-শহরে চলে ব্যাডমিন্টন খেলার আসর। কৃষকের জমিতে ফলে নানান শীতকালীন সবজি। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন পোহানো যেন এক শীত-সংস্কৃতি। গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস পেড়ে গুড় বানায়। 

বাংলার প্রকৃতিতে পৌষ-মাঘ মাসে শীত ঋতু হলেও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই রাতে ও ভোরে কুয়াশার সাথে শীত অনুভূত হয়। কিন্তু এ বছর অগ্রহায়ণ মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেলেও দেখা নেই শীতের। রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাত ও ভোরের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও পুরোদমে শীত অনুভূত হচ্ছে না। সকালে সূর্য ওঠার পরপরই বাড়ছে তাপমাত্রা। আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীত পড়তে শুরু করত। অথচ ডিসেম্বর এসে গেলেও মিলছে না শীতের দেখা। কোথায় সেই সময়, কোথায় সে অনুভূতি? তবে কি হারিয়ে গেলো শীতকাল!

শীতে কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ 

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর শীতকাল শুরু হবে কিছুটা দেরিতে। পাশাপাশি শীতের প্রকোপও থাকবে কম। কবে থেকে শীত নামবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে বলেননি।

দ্য ওয়েদার চ্যানেলের তাপমাত্রা সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম থেকেই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই তাপমাত্রা চলমান থাকবে। তবে সমুদ্র সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মোঃ বজলুর রশিদ বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই বৃষ্টির পরই শীত নামবে। মধ্যদিন পর্যন্ত শীতের দেখা মিলবে। রাত ও ভোরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিগার সুলতানা বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের (বন্যা, ঘন ঘন নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস) তীব্রতা, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, স্বল্প বৃষ্টিপাত, অনাবৃষ্টি, অসময়ে ভারী বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং সর্বোপরি মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঋতুচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যথাসময়ে শীত না আসা, শরৎ-এ বর্ষার রূপ, বর্ষায় কম বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ফলে ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে দিন দিন ঋতু হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৪ বছরের তুলনায় শুধু নভেম্বর মাসেই এই তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

;

শীতের শুরুতে তিস্তার চরে দাগি রাজহাঁস



বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শীতের শুরুতেই ভিড় জমায় রকমারি অতিথি পাখি। তারমধ্যে দাগি রাজহাঁস একটি। মনের সুখে সহজেই হিমালয় পারি দিয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায় রংপুরের তিস্তা চরে। এই সুশ্রীর চেহারার রাজহাঁস পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। শীতকালে এরা মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। শীতের শেষে আবার সেখানে চলে যায়। এরা খুব সহজেই হিমালয়ের মত উঁচু পর্বতমালা পাড়ি দিতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় শীতের শুরুতে এই পাখিটি রংপুরের তিস্তার চরে দেখা মেলে।

জানা গেছে, শীতের সময় এই পাখিগুলো মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। বসন্ত কালে আবার নিজ গন্তব্যে চলে যায়। সেখানকার পার্বত্য অঞ্চলে ও জলাশয়ে বিচরণ ও প্রজনন করে। এ জন্য তাদের সাত হাজার মিটার উঁচু হিমালয় অতিক্রম করতে হয়। আট ঘণ্টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত হিমালয় পার হতে পারে তারা অনায়াসে। প্রায় ২০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এদের আবাস হলেও বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। 

আট ঘণ্টায় পর্বত হিমালয় পার হতে পারে এই পাখি 

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। দাগি রাজহাঁসের অন্য কোনো উপপ্রজাতি নেই। অনেক উঁচু দিয়ে এরা উড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে দাগি রাজহাঁস পৃথিবীর সর্বোচ্চ উড্ডয়নকারী পাখিদের মধ্যে একটি।

দাগি রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৩ সেন্টিমিটার ডানা ৪৫ সেন্টি মিটার, ঠোঁট ৫ দশমিক ৫ সেন্টি মিটার, লেজ ১৪ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার, পা ৭ দশমিক ১ সেন্টি মিটার এবং ওজন দেড় কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলো দেখতে ধূসর। সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন ধূসর গলার নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। মাথায় দুটি স্পষ্ট কালো ডোরা থাকে। ওড়ার সময় এদের সাদা মাথা, ফিকে দেহও ডানার কালো আগা স্পষ্ট চোখে পড়ে। এদের চোখ বাদামি। ঠোঁট হলুদ এবং ঠোঁটের আগা ও নাক কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের চেহারা প্রায় একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ডোরা নেই। কপাল, গাল ও গলা ভারী। মাথায় ধূসর-বাদামি। পিঠ ও পেটের রং একই রকম। কাক, দাঁড়কাক, শিয়াল, গাঙচিল, ঈগল এদের প্রধান শত্রু।

পাখিটির ছবি তোলার কারিগর বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন এই পাখিটির ছবি চারদিন আগে রংপুরের তিস্তা নদী থেকে তুলেছি। দুর্লভ এই প্রজাতির পাখিটি সহজে বাংলাদেশে দেখা যায় না। এই পাখি হিমালয় পর্বতের মতো উচ্চতা সহজেই পাড়ি দিতে পারে। তিনি বলেন, গবেষকদের মতে এই পাখির রক্তের লোহিতকণিকা কিছুটা ভিন্ন ধরনের। অক্সিজেন শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। ফলে অনেক উঁচুতে এরা সহজেই উড়তে পারে।

;

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাই জানে। সে সময়কার ক্ষয়ক্ষতি পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করেছিল। তার রেশ কাটেনি যুদ্ধ পরবর্তী কয়েক বছরেও। জাপান তো তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ। এখনো প্রায়শই তৎকালীন বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিস্ফোরক জিনিসপত্র। আবারও ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পুতে রাখা বোমা উদ্ধার হলো। এবার গ্রিক সৈনিকরা এক উন্নয়নের খননকালে একটি বোমা খুঁজে পায়। তারা দ্রুত বোমাটি ধ্বংসের কাজ শুরু করে সফলও হয়েছে।

এই ঘটনা গত ৩০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবারের। গ্রীসের দক্ষিণে সমুদ্রতীরবর্তী গ্লাইফাদা এলাকার কাছে গ্রীক সেনা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। এথেন্সের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় একটি বিলাসবহুল প্রকল্পে কাজ করেন্ তারা। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সময় তারা আবিষ্কার করে এই বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই অবিস্ফোরিত বোমা অবশেষে তারা ডিস্পোজ করতে সক্ষম হয়। ৫০০ পাউন্ডের বোমাটি কোনো ক্ষতি ছাড়াই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।

এজন্য দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এলাকাবাসীর নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সতর্কতাও অবলম্বন করা হয়। আশেপাশের বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক দ্রুত খালি করিয়ে নেওয়া হয়।

নগর উন্নয়ন প্রকল্পে একটি পার্ক, শপিং মল, হোটেল, একটি ক্যাসিনো এবং রাজধানীর দক্ষিণে একাধিক অবসর সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কাজটি গত বছর শুরু হয়েছিল এবং২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা।

"সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে, এবং আমরা জড়িত সমস্ত সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই: বিশেষায়িত সেনা ইউনিট, ফায়ার বিভাগ এবং ট্রাফিক পুলিশ," গ্লাইফাডা মেয়র জিওরগোস পাপানিকোলাউ সাইটের কাছাকাছি সাংবাদিকদের বলেছেন।

"খননকার্যের অগ্রগতির সাথে সাথে আরও অবিস্ফোরিত অস্ত্র আবিষ্কৃত হতে পারে।"

উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০১ সালে বন্ধ হওয়ার আগে এবং একটি নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এথেন্সের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জায়গাটি ব্যবহার করবে। সাইটটি ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকের সময় বেশ কয়েকটি ক্রীড়া স্থানের আয়োজন করেছিল এবং ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে একটি শিবির স্থাপন করেছিল।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি সমর্থন করার জন্য কয়েক দশক ধরে এয়ারফিল্ড ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং গ্রিসের নাৎসি-নেতৃত্বাধীন দখলের সময়, মিত্রদের দ্বারা বিমানঘাঁটি বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল।

;

মানুষের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে যে পাখি



বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মাটিতে খাবারের সন্ধানে ‘পাকরা-শালিক’। ছবি: বিভোর

মাটিতে খাবারের সন্ধানে ‘পাকরা-শালিক’। ছবি: বিভোর

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের প্রকৃতিতে নানান প্রজাতির পাখির সমারোহ। নানা রকমের চরিত্র তাদের। কোনটা বনের পাখি। কোনোটা শহরের পাখি। কোনোটা আবার বিল-হাওরের পাখি। স্বভাব-চরিত্র ভেদেই তাদের জীবন সম্পূর্ণ হয় পরিপূর্ণতার দিকে।

আজ যে পাখির কথা বলছি- সে মানুষের আশেপাশে থাকতেই খুব বেশি পছন্দ করে। মানুষকে ভয় পায় না। প্রায় প্রতিদিনই চা বাগানের নির্জন পথে তার সাথে দেখা হয়ে যায়! হয় চোখাচোখিও! ও থাকে ওর মতো! চা গাছেদের নিচে খাদ্য অনুসন্ধানে ব্যয় করে বেড়ায় দিনের অনেকটা সময়ে।

এ পাখিটির নাম ‘পাকরা-শালিক’। ইংরেজি নাম Asian Pied Starling বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus contra. তবে কেউ কেউ ‘গো শালিক’ বা ‘গোবরে শালিক’ বলে পাখিটিকে কিছুটা হলেও অসম্মান করেন। বহুকাল ধরে ভাবি, ভাবতেই থাকি- সুন্দর এই পাখিটির ‘এমন নাম’ পাখিটির আপামর সৌন্দর্যকে অনেকটাই হনন করেছে। যিনি এই সুন্দর পাখির সাথে ‘এমন নাম’ জুড়ে দিয়েছেন তিনি এর প্রতি গভীর অবিচার করেছেন। এই অবিচারই আমাকে ব্যথিত করে। নিঃশব্দ-নীরবে!

পাকরা-শালিক পাখিটির দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার। পাখিটির দেহের রং সাদা-কালো। গাল, পেট ও লেজতল সাদা রঙের। দেহের অবশিষ্ট অংশ কালচে। চোখ সাদা, তবে চোখের পাশে রয়েছে কমলা রঙের চামড়ার পট্টি। এ পট্টিতেই ফোটে আছে তার মুখশ্রীর আসল সৌন্দর্য।

গৃহপালিত ষাঁড় বা গাভীর গোবরে থাকে ছোট ছোট পোকা। সেগুলোই মূলত পাকরা-শালিকের অন্যতম প্রধান খাবার। চা বাগানের সেকশনের ভেতরে অসংখ্য গরু চষে বেড়ায়। সেখানেই পতিত হয় তাদের মল। সূর্যোলোকের আলোয় সেই মল কিছু শুকিয়ে গেলে তাতেই বাসা বাঁধে এক ধরণের পোকা। পাখিটি সেই অর্ধশুকনো গোবর পা দিয়ে টেনে টেনে পোকাগুলোকে বের করে খায়। সেইটাই ওর খাদ্য অনুসন্ধানের চারিত্রিক প্রধান প্রক্রিয়া।

সেই গোবরে পোকাগুলোই খাবার হয়ে শালিক প্রজাতির এই সুন্দর পাখিটাকে বহুকাল ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা ক্রমশই দেখে চলেছি পাখিটির প্রাকৃতিক গতিময় সৌন্দর্য।

;