গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জারি গানের আসর

  • ছাইদুর রহমান নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কিশোরগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

আবহমান গ্রাম বাংলায় জারি গানের আসর ছিল বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। তবে, আধুনিকতার ছোঁয়াতে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামের মানুষের আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ জারি গান । ‘জারি’ ফারসি শব্দ। অর্থ ক্রন্দন, বিলাপ বা প্রচার করা।

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দি ইউনিয়নের পোড়াবাড়িয়া গ্রামে জমেছিল জারি গানের আসর। শনিবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পোড়াবাড়িয়া গ্রামে কয়েকশত মানুষ জারি গান শুনে আনন্দে মেতে উঠেছিল।

বিজ্ঞাপন

জারিতে দুটি দল থাকে। প্রতিটি দলে একজন করে মূল গায়ক বা বয়াতি থাকে। তার সঙ্গে দোহার থাকে দুই থেকে চারজন এবং বাদক থাকে কমপক্ষে চারজন। অবশ্য বেশির ভাগ বয়াতি নিজেও একজন বাদকের কাজ করে। গান পরিবেশনের সময় বয়াতি দোতারা, সারিন্দা, বেহালা বা ডুগডুগি বাজায়, আর যন্ত্রীরা বাজায় ঢোলক, একতারা, দোতারা, সারিন্দা, বেহালা, বাঁশি, ঘুঙুর, খঞ্জনি, হারমোনিয়াম, কাঁসা ইত্যাদি। বয়াতি প্রথমে দর্শক-শ্রোতাদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ধুয়া গান ধরে এবং দোহাররা তা সমবেত কণ্ঠে গায়।

দুই জারিয়াল দলের মধ্যে প্রশ্নোত্তরমূলক যে গান গাওয়া হয় তা সাধারণত তিনটি পর্বে বিভক্ত, যথা—বন্দনা, গোষ্ঠগান ও মূল জারি গান। মূল গায়কই সব কিছু শুরু করে এবং দোহাররা তার চতুর্দিকে বসে তাকে সাহায্য করে। বয়াতি দোহারদের চারদিকে হাঁটে এবং বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে গান পরিবেশন করে।

বিজ্ঞাপন

জারি গানে মেয়ে-পুরুষ, জীবাত্মা-পরমাত্মা, রাম-হনুমান, গুরু-শিষ্য, শরিয়ত-মারেফত, আদম-শয়তান, গণতন্ত্র-রাজতন্ত্র, সুফি-মোল্লা ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিযোগিতা হয়। এসব বিষয় অবলম্বনে দুই দল জারিয়াল প্রশ্নোত্তর আকারে গান পরিবেশন করে। গানের শেষদিকে দুই দল মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উপস্থিত বুদ্ধি মতো প্রশ্নোত্তর কাটাকাটি করে, যাকে বলা হয় ‘জোটক’। এ অংশটি মূলত কবিগানেরই অনুরূপ।

পুরুষদের মতো মেয়েদেরও জারিয়াল দল আছে। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামে মহররমের একাদশ ও দ্বাদশ দিবসে মেয়েরা জারি গান পরিবেশন করে। পূর্ব ময়মনসিংহে জারি গানের পাশাপাশি জারি নৃত্যেরও প্রচলন আছে। গুরুসদয় দত্তের একটি প্রবন্ধে এরূপ জারি নৃত্যের সচিত্র বর্ণনা পাওয়া যায়। নৃত্যসহকারে পরিবেশিত এই জারি গানে আসামের বহু উৎসবের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

জারি গান পরিবেশনায় ঝিনাইদহের পাগলা কানাই ছিলেন প্রবাদতুল্য। এ ছাড়া আবদুল মালেক দেওয়ান, আবদুল খালেক দেওয়ান, আবদুল গণি বয়াতি, দারোগ আলী বয়াতি, সাই আলী বয়াতি, আব্বাস আলী ভাসান, মোহাম্মদ আলী আকবর মিয়া প্রমুখের নামও উল্লেখযোগ্য।