মাওলানা আজাদ: রাজনীতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির অগ্রদূত



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৮-১৯৫৮) দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম চিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্ম-গোত্র-সম্প্রদায়গত ঐক্যের প্রবক্তা তিনি। রবিবার (১১ অক্টোবর ছিল তাঁর ১৩০তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর মূল নাম মাওলানা সাইয়েদ আবুল কালাম গোলাম মুহিউদ্দিন আহমাদ বিন খায়রউদ্দিন আল হোসাইনি।

পবিত্র নগরী মক্কায় জন্মগ্রহণকারী আজাদের মাতা আরবীয়, পিতা মাওলানা খায়রউদ্দিন আফগান বংশোদ্ভূত বাঙালি মুসলমান, যিনি ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের বিরূপ পরিস্থিতিতে হিজরত করে ভারত ছেড়ে মক্কায় চলে যান এবং ১৮৯০ সালে আবার সপরিবার কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন।

আরবি মাতৃভাষা হওয়ায় এবং ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠ ও দৃঢ় বিশ্বাসী পারিবারিক পটভূমির কারণে প্রচলিত ধারায় ইসলামী শিক্ষার চর্চা করা ছাড়া আজাদের অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক আধুনিক শিক্ষা লাভ না করলেও ব্যক্তিগতভাবে অধ্যয়ন ও ব্যাপক পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে তিনি উর্দু, ফারসি, হিন্দি ও ইংরেজিতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তাঁর সময়ের অনেক যশস্বী ব্যক্তিদের মতো তিনিও নিজ চেষ্টায় শিক্ষিত হওয়ার পথ অনুসরণ করেন এবং বিশ্ব ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কে বিপুল জ্ঞানের অধিকারী হন।

পবিত্র কুরআন, হাদিস, ফিকাহ্ ও কালামের নতুন ব্যাখ্যা প্রদান করে তিনি অনেক লেখা প্রকাশ করেন। তাঁর পান্ডিত্যই ‘তাকলিক’ (সাদৃশ্যের ঐতিহ্য) পরিহার এবং ‘তাজদিদ’ (নতুন প্রথা প্রবর্তন) গ্রহণের পথে তাঁকে পরিচালিত করে।

তাজদিদ সম্পর্কে তাঁর ধারণা তাঁকে এ বিশ্বাসের দিকে চালিত করে যে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে ভারতের সকল ধর্ম ও গোত্রের জনগণ তাদের ধর্মবিশ্বাস ও কৃষ্টির সুসমন্বয় ঘটাতে পারে এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তা একমাত্র তখনই সম্ভব যখন সে রাষ্ট্র গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়।

স্বাধীন রাষ্ট্র ভারতের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা ভিত্তিক গণতন্ত্রের ধারণাকে ভারতের যেসব রাজনৈতিক চিন্তাবিদ সর্বাগ্রে সংজ্ঞায়িত ও ব্যাখ্যা করেছেন আজাদ সম্ভবত তাঁদের অন্যতম। ধর্মীয় উদারতার মাধ্যমে রাজনৈতিক হিংসা প্রশমনে তিনি ছিলেন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব।

যে পারিবারিক পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছেন এবং যে ধরনের শিক্ষা লাভ করেছেন, তাতে তাঁর ধর্মীয় নেতা হওয়ারই কথা। তাঁর পূর্বপুরুষদের অধিকাংশই ধর্মবেত্তা ছিলেন বলে তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা হন নি। তবে রাজনীতির প্রতি আজাদের ঝোঁক ছিল। খুব অল্প বয়সেই তিনি রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিশ্রুত পণ্ডিত জামালউদ্দীন আফগানির প্যান ইসলামী মতবাদ ও স্যার সৈয়দ আহমদ খানের আলীগড় চিন্তাধারার প্রতি তিনি বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। প্যান ইসলামী চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আফগানিস্তান, ইরাক, মিশর, সিরিয়া ও তুরস্ক সফর করেন। তারপর জীবন ও রাজনীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক উপলব্ধি নিয়ে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন।

ইরানে সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামরত নির্বাসিত বিপ্লবীদের সঙ্গে তিনি ইরাকে সাক্ষাৎ করেন। তিনি মিশরে শেখ মুহম্মদ আব্দুহ্ ও সাঈদ পাশা এবং আরব বিশ্বের অন্যান্য বিপ্লবী কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন। কনস্টান্টিনোপলের তরুণ তুর্কিদের আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক জ্ঞান ছিল। এসব গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ও সংস্পর্শ তাঁকে একজন জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীতে পরিণত করে। ধর্ম ও জীবনের সংকীর্ণ ধারণার শৃঙ্খলমুক্তির স্মারকস্বরূপ তিনি লেখক হিসেবে ‘আজাদ’ নাম গ্রহণ করেন।

বিদেশ থেকে ফিরে এসে আজাদ পূর্ব ভারতের দুজন নেতৃস্থানীয় বিপ্লবী শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ ও শ্রীশ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ব্রিটিশ শাসন বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। প্রকৃতপক্ষে একদিকে তিনি ছিলেন একজন গোপন বিপ্লবী এবং অন্য দিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রকাশ্য কর্মী।

তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হবে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য, আর সে ঐক্যের ভিত্তিমূল হবে রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ ধারণা। কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে তিনি তুরস্কের খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করেন, পুরানো শাসকদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে নয় বরং নবীন তুর্কিদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য। তাঁর মতে, 'নবীন তুর্কিরাই ছিলেন খিলাফতের মূল বিধানের সত্যিকার প্রতিনিধি।'

১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত আজাদের উর্দু সাপ্তাহিক সংবাদপত্র 'আল-হেলাল' প্রকাশ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতে এর অপকর্মের আক্রমণাত্মক সমালোচনা করে। এ পত্রিকা কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী মতামত প্রকাশে একটি শক্তিশালী বিপ্লবী মুখপত্রে পরিণত হয়। সম্প্রদায় ভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট শত্রুতার পর হিন্দু-মুসলমান ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে 'আল-হেলাল' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ব্রিটিশ সরকার আল-হেলাল সাপ্তাহিকীকে বিপজ্জনক মতামত প্রচারে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং সে কারণে ১৯১৪ সালে পত্রিকাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। আজাদ তখন এটির নাম পরিবর্তন করেন এবং 'আল-বালাগ' নামে অপর একটি সাপ্তাহিকী প্রকাশ করেন। এ পত্রিকারও উদ্দেশ্য ছিল অভিন্ন অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের ভিত্তিতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও বিপ্লবী ধ্যান-ধারণা প্রচার করা। কিন্তু ১৯১৬ সালে সরকার এ পত্রিকাও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং আজাদকে কলকাতা থেকে বহিষ্কার করে রাঁচিতে অন্তরীণ করে রাখে। সেখান থেকে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে মুক্তি পান।

মওলানা আবুল কালাম আজাদ তখন নিখিল ভারত জাতীয় কংগ্রেসে মতিলাল নেহরু, জওহরলাল নেহরু এবং সি. আর. দাসের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অন্যতম সদস্য এবং গান্ধীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ঘনিষ্ঠ সহচরদের একজন হিসেবে স্বীকৃত। তিনি দিল্লি (১৯২৩) ও রামগড়ে (১৯৪০) কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে ভারতীয় রাজনীতির উত্তাল দিনগুলিতে আজাদ মহাত্মা গান্ধীর সবচেয়ে অন্তরঙ্গ উপদেষ্টা হিসেবে আবির্ভূত হন। ক্রিপস মিশন (১৯৪২) থেকে শুরু করে কেবিনেট মিশন (১৯৪৬) পর্যন্ত সকল আলোচনায়, বিশেষত ভারতের সাংবিধানিক বিষয়ে ও সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে, আজাদের সঙ্গে গান্ধী ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করেছেন। ক্রিপস মিশন (১৯৪২) এবং কেবিনেট মিশন (১৯৪৬) এ উভয় সময়েই সমঝোতা-পূর্ব আলোচনা বৈঠকে আলোচকদের মধ্যে আজাদ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

কিন্তু পাকিস্তান আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ায় এবং হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি ঘটার ফলে আজাদের প্রভাব হ্রাস পায়। তাঁর লেখা চিঠিপত্র এবং আত্মজীবনীতে তিনি এ প্রসঙ্গে তাঁর হতাশার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, 'ভারতের বিভক্তি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো যদি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব জিন্নাহ ও মুসলিম লীগের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আপসমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে তাঁর (আজাদের) মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেন।'

আজাদ নেহরুর অভিপ্রায়ের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে, নেহরুর মনোভাব কেবিনেট মিশন পরিকল্পনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে বিভক্তির দিকে চালিত করে। কিন্তু শেষের দিকে সৃষ্ট রাজনৈতিক মতপার্থক্য দুই নেতার বন্ধুত্বকে ম্লান করতে পারে নি। তিনি তাঁর বিখ্যাত আত্মজীবনী গ্রন্থ 'ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম' নেহরুর নামে উৎসর্গ করে তাঁর সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন তিনি। সর্বজনীন শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় জীবনভর কাজ করেছেন তিনি।

   

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;