বিশ্ব দর্শন দিবস: মানবিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় দর্শন



বেল্লাল আহমেদ ভূঞা (অনিক)
বিশ্ব দর্শন দিবস, ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব দর্শন দিবস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অজানাকে জানা ও দুর্জ্ঞেয় রহস্য উদঘাটন করা মানব মনের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য। কৌতুহলী মনের জ্ঞান অন্বেষণ, সত্য ও সঠিক জ্ঞান লাভ এবং মৌলিক, ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা থেকেই ফিলোসফি’র উৎপত্তি। ‘ফিলোসফি’ (Philosophy) শব্দের উদ্ভব হয়েছে দুটো গ্রিক শব্দ-Philos (মানে ভালোবাসা) এবং Sophia (মানে জ্ঞান) হতে। সুতরাং ফিলোসফি (Philosophy) শব্দের অর্থ হলো Love of wisdom অর্থাৎ জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা। ‘ফিলোসফি’(Philosophy)র বাংলা প্রতিশব্দ হলো দর্শন, যদিও এর আরও সুন্দর প্রতিশব্দ জ্ঞানানুরাগ, জ্ঞানপ্রীতি, প্রজ্ঞাপ্রীতি প্রভৃতি রয়েছে।

তবে প্রাচীনকাল থেকে একাডেমিকভাবে ‘ফিলোসফি’বিষয়টি বাংলায় দর্শন বা দর্শনশাস্ত্র নামেই পরিচিত লাভ করেছে। মূলত জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থেকে গড়ে ওঠা জ্ঞানচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রাচীন যুগে খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে সূচনা হয় দর্শন শাস্ত্রের এবং গড়ে ওঠে দর্শনের ইতিহাস।

পিথাগোরাসের মতে, জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ, তথা সত্যানুসন্ধানের প্রতি অবিচল নিষ্ঠাই ফিলোসফির মূল লক্ষ্য। দর্শন সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের চর্চার মাধ্যমে; মুক্তবুদ্ধি ও নৈতিক চেতনাকে জাগ্রত করে বিশ্বকে পথ দেখায়, অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যায়। R.J. Hirst এর মতে- “Philosophy is a rational investigation into certain fundamental problem about the nature of man and the world he lives in”। ফিলোসফি জ্ঞান ও সত্যের অনুসন্ধানের মাধ্যমে জগত ও জীবনের মৌলিক এবং ব্যবহারিক সমস্যাবলির যৌক্তিক সমাধান করে।

ফিলোসফার বা দার্শনিক মাত্রই জ্ঞানানুরাগী, আপোসহীন চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির অধিকারী। জ্ঞান, সত্য ও আলোর দিশারী হবেন দার্শনিক। বৃহৎ অর্থে ফিলোসফার বা দার্শনিক বলতে আমরা শুধু একটি বিশেষ বিদ্যায় সনাতন গতানুগতিক জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে বোঝাই না। বর্তমানকালে অভিজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, আইনবিদ, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, পরিবেশবিদ, জীব বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এবং ধর্ম বিশেষজ্ঞসহ সকল প্রকার বিজ্ঞ ও পন্ডিতব্যক্তিদের দার্শনিক হিসেবে গণ্য ও আখ্যায়িত করা হয়। কারণ, তাদের সম্মিলিত মেধা, মনন, বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ব্যতিত জীবন, সমাজ ও প্রকৃতিকে সামগ্রিকভাবে জানা সম্ভব হয় না।

দার্শনিকদের পরিচয় সম্পর্কে প্লেটো তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থে বলেছেন: ““He who has a taste for every sort of knowledge and is curious to learn and is never satisfied may be justly termed as Philosopher।” দার্শনিক সমাজের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তির আলোকে জগত ও জীবনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। রাষ্ট্র বা সমাজের এমন কোনো দিক নেই যেখানে দার্শনিকদের অবদান নেই। দার্শনিকরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চায় আপোষহীন। দার্শনিকরা যুগে যুগে কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত না করে, সকল বাঁধা অতিক্রম করে জ্ঞান চর্চা করেছেন, সত্য-সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করে অগ্রসর হয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাবার পরও গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস তার নীতি, সত্যবস্তু থেকে বিন্দুমাত্র সরে দাঁড়াননি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী বীরের মতো সক্রেটিস বলেছিলেন: ““I to die and you to live. Which is better God only knows”।

মানুষ মাত্রই একটি দর্শন নিয়ে তার জীবন পরিচালিত করে। সে দর্শন তার জীবনের আশা-আকাঙ্খা এবং জীবনধারার একটি রূপরেখা তার নিজের অজান্তেই তৈরি করে। দর্শনবিহীন জীবন কল্পনা করা যায় না কেননা মানবীকরণে, মানবিক মূল্যবোধ অর্জনে, বিকাশ ও সংরক্ষণে দর্শন চিরদিন দিয়ে এসেছে যুগযুগান্তকারী দিকনির্দেশনা। সঠিক ও ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিবেচনা করলে দেখা যায় বিচার ও বিশ্লেষণমূলক, যুক্তিধর্মী ও বুদ্ধিবাদী এবং ব্যবহারিক ও জীবনভিত্তিক পর্যালোচনাই দর্শন।

ফিলোসফি বা দর্শনের আলোচ্য বিষয় বহু এবং এর পরিধি ব্যাপক। মূলত মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কোনো দিক এবং তত্ত্বালোচনার কোনো অংশই দর্শনের আলোচনার বর্হিভূত নয়। দর্শনের পরিধি ব্যাপক- জগত, জীবন, মানুষ এবং মৌলিক সমস্যা সবই দর্শনের আলোচ্য বিষয়। এক সময়ে বিস্ময় ও কৌতূহল থেকে দার্শনিক চিন্তাভাবনা শুরু হলেও তা ক্রমশ জীবন ভিত্তিক ব্যবহারিক বিষয়াবলীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে থাকে। তাই ফিলোসফি ইতিহাস, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি এমনকি পরিবেশ ও ব্যবসার মতো বাস্তব ও জীবনমুখী বিদ্যা ও শাস্ত্রসমূহের প্রতি মনোনিবেশ করছে জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তোলা জন্য।

তবে আলোচ্য বিষয় যাই হোক না কেন, সে আলোচনা অবশ্যই যৌক্তিক, বুদ্ধিগ্রাহ্য, বস্তুনিষ্ঠ ও সুসংবদ্ধ হতে হবে।

দর্শনকে জীবন-বিচ্ছিন্ন ও অপ্রয়োজনীয় বলে অনেকে অবমূল্যায়ন করেন। বস্তুত ফিলোসফির এমন অবমূল্যায়নের মূলে একটা বড় কারণ হলো এ বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাবে মানুষের চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের মানসিকতা বর্তমানে অনেকাংশে ব্যবসায়িক এবং নগদ ব্যবহারিক মূল্য ও সাফল্য দ্বারা প্রভাবিত। ফলে সাহিত্য, দর্শন, নীতিবিদ্যা, ধর্ম ও অধিবিদ্যা কম আকর্ষণীয়। স্যাটেলাইট, স্মার্টফোন ও ফেইসবুক বিশ্বায়নের এ যুগে কতকিছু আছে তবুও যেন শান্তি নেই কোথাও। কারণ অর্থনৈতিক প্রগতিই মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশের একমাত্র পথ নয়। হিংসা-বিদ্ধেষ, ক্রোধ, প্রতিযোগিতা, সংঘাত, সন্ত্রাস মানুষকে জীবনবিমুখ করে ফেলেছে। সামাজিক মানবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে সমাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে চরম হারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পরিচর্চা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনের মূলভিত্তি হলেও তা আমাদের জীবনকে কখনো পূর্ণতা দিতে পারবে না। এ পূর্ণতার জন্য একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক হবে ফিলোসফি বা দর্শন।

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘সফল মানুষ হওয়ার চেয়ে সৎ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হওয়া অধিকতর জরুরি।’ দর্শন তার যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেক, ন্যায়বোধ, নীতি- নৈতিকতা দিয়ে সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার, শোষণ প্রতিহত করে উদারতা, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধন ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করবে। জ্ঞান, সত্য ও আলোর দিশারী হবেন দার্শনিক। দর্শন হবে অগ্রগতি ও মঙ্গলের নিয়ামক।

দর্শনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, আর এই মানব কল্যাণের জন্য প্রয়োজন যথার্থ দার্শনিক চিন্তাধারা। বর্তমান বিশ্ব দারুনভাবে নৈতিক সংকটে জর্জরিত। বিশ্বে তাই শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, উদারতা, স্বাধীনতা, পরিবেশ, ব্যবসা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবকিছুর সাথে দর্শন ও নৈতিকতাকে যুক্ত করতে হবে। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে বিশ্বের সামগ্রিক কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলোসফি হতে পারে কান্ডারিস্বরূপ। দর্শনের যৌক্তিক চিন্তা, ন্যায়পরতা ও সুনীতির বাণী পেীঁছে দিতে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরে।

২০০২ সালে ইউনেস্কো সর্বপ্রথম দর্শন দিবসের ঘোষণা দেয় এবং ২০০৫ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব দর্শন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর ‘ বিশ্ব দর্শন দিবস ২০১৮’ পালিত হতে যাচ্ছে। ইউনেস্কোর-র জেনারেল কনফারেন্সের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- “Philosophy is a discipline that encourages critical and independent thought and is capable of working towards a better understanding of the world and promoting tolerance and peace”। মানবজাতির সামগ্রিক শুভ কামনায় ও দর্শন চর্চার সুফলকে মানবজাতির কল্যাণে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে ইউনেস্কোর অনেক কল্যাণকামী পদক্ষেপের একটি হলো বিশ্ব দর্শন দিবস ঘোষণা।

অস্থিতিশীল বিশ্বে বিরাজমান সংকট নিরসনে, দর্শনের প্রায়োগিক ও মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করা এই দিবস পালনের প্রধান উদ্দেশ্য। বিশ্ব দর্শন দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের শপথ নিতে হবে- বিচারমূলক যৌক্তিক চিন্তা, দূরদৃষ্টি, নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে একটি সত্য-সুন্দর-মঙ্গলময় মানবিক বিশ্ব গড়বো। জয় হোক দর্শনের, জয় হোক মানবতার।

বেল্লাল আহমেদ ভূঞা (অনিক): লেকচারার, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

   

'রিমাল'-এর ধ্বংসযজ্ঞ সয়ে কেমন আছে সুন্দরবন!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সুন্দরবনে মৃত হরিণ / ছবি: বার্তা২৪

সুন্দরবনে মৃত হরিণ / ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ঘণ্টাপ্রতি ৮০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি বেগে ধেয়ে আসছিল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। সাগরে ঢেউয়ের উত্তাল রূপ এবং প্রচণ্ড শক্তিশালী বাতাসের ধাক্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েই উপকূলীয় এলাকার মানুষজন। শনিবার (২৫ মে) থেকেই পাওয়া পূর্বাভাসে মানুষ বেশ বুঝতে পারছিল, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বয়ে আনবে 'রিমাল'।

সৌভাগ্যবশত, বাংলাদেশকে বেষ্টিত করেছে আমাদের সুন্দরবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় নোনাপানি উপকূলের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অতিক্রম করে যাওয়ার সময় রিমালের বেগ অনেকটাই শিথিল হয়ে আসে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপের দণ্ড নিজ মাথায় পেতে নিয়েছে সুন্দরবন। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বনের অভ্যন্তরীণ চিত্র। পানিরে আধিক্যে ছেয়ে রয়েছে পুরো বন। ভাঙা-আধভাঙা গাছ লুটিয়ে পড়ে আছে। মিঠাপানির পুকুরে সমুদ্রের নোনাজল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন অফিসের অধিকাংশ টহল ফাঁড়ি ও বোট এবং সেইসঙ্গে যাতায়োতের পোল। ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে চালাঘরের টিন, দরজা, জানালা, সোলার প্যানেলসহ অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ।

এমনকী রিমালের ক্ষতির মূল্য দিতে হয়েছে বনে বসবাসকারী প্রাণীদেরও। ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল তাণ্ডবে কেবল মানুষ নয়, প্রাণ হারিয়েছে অনেক অবলা প্রাণী।সর্বশেষে তথ্যমতে, সুন্দরবন থেকে ২৮টি মৃত হরিণ এবং ১ টি বন্য শুকরের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

রবি-সোমবার (২৬ ও ২৭মে) রিমাল-এর তাণ্ডব চলে টানা ২০ ঘণ্টা। ঝড় শান্ত হওয়ার পর বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ পশুদের আহত এবং নিহতের এই সর্বশেষ খবর মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে। বনে বসবাসকারী অন্যান্য বহু পশু-পাখিরও মৃত্যু হয়েছে এই দুর্যোগে। এখনো অনেক আহত প্রাণী উদ্ধার কার্যে ব্যস্ত রয়েছেন বনরক্ষা কর্মীরা। এ পর্যন্ত ১৭ টি আহত হরিণ উদ্ধার করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে বনরক্ষীরা। এরপর তাদের নিরাপদে বনে ফেরত পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও পশু আহত হয়েছে কিনা খোঁজ করা অব্যাহত রয়েছে। 

ঝড়ে অনবরত ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সুন্দরবনের ভূমি। তাছাড়া, ঝড়ো হাওয়ার দাপটে উপড়ে গেছে বহু গাছ। প্রকৃতির এরকম পরিবেশের কারণেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অবলা প্রাণীগুলো!

;

উপকূলে ঝড়ের বিপদ সংকেত, ঢাকায় চিত্রকরের নীল মেঘ!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

উপকূলে চলছে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত। দমকা বাতাসের তোড়ে সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ। আকাশে হৈ হৈ রব তুলে দখল করেছে কালো মেঘ। ছড়িয়ে দিচ্ছে গুড়ুম গুড়ুম ডাক! কয়েক ঘণ্টা বাদেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আসার সম্ভাবনা। তবে কথায় বলে, বাজ পড়ার আগে আকাশ শান্ত হয়ে যায়!

ঠিক যেন প্রকৃতি তার সেই রূপটিই মেলে ধরলো। উপকূল অঞ্চলগুলোতে মানুষজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ অথচ রাজধানীর আকাশ স্নিগ্ধ-কোমল!

শুধু কী তাই! ছবি আঁকার পর শিল্পী তার রঙ মাখা তুলিগুলো এলোমেলো করে ফেলে রাখে যেমন, সেই ছবি যেন আকাশে সেঁটে দিয়েছে কেউ। লাল, গোলাপি, কমলা, নীল, বেগুনি রঙের মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর এক এলোমেলো চিত্র উঁকি দিচ্ছে আকাশে। তার মাঝে ধূসর মেঘ ঘোলা জলে মাছের মতো দুরন্তপনায় ছুটে যাচ্ছে বহুদূর।

শনিবার (২৫ মে) গোধুলি লগ্নে ঢাকার আকাশ ঠিক এভাবেই রঙিন হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রংধনুর ছোঁয়া ছাড়াই রঙিন পটচিত্রের রূপ মেলে ধরে গগন, যেন আকাশ নয়, কোনো চঞ্চলা কিশোরীর উৎফুল্ল মন! প্রকৃতি এখন স্তব্ধ হয়ে আছে। গাছের একটি পাতাও যেন নড়ছে না। অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরের অথৈ উম্মাদনা। স্থানীয়দের ভয়, জলোচ্ছ্বাসে যেন তাদের জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এমনি করেই প্রকৃতির বহুরূপী লীলাখেলা চলতে থাকে অবলীলায়।

;

বিখ্যাত মিমের ভাইরাল কুকুর কাবোসু আর বেঁচে নেই



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন মানুষ জুড়তে শুরু করলো ইন্টারনেটে নতুন অনেক নতুন উদ্ভাবনার দেখা মিললো। এমন এক ব্যাপার হলো মিম। বর্তমান সময়ে সেন্স অব হিউমারের (রসবোধ) এক অন্যতম মাধ্যম এই মিম। বিশেষত কোনো ছবি ব্যবহার করে তাতে হাস্যরসাত্মক কিছু জুড়ে দিয়ে এইসব মিমগুলো বানানো হয়।

২০১৩ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়। পরবর্তী সময়ে যা একটি বিখ্যাত ‘মিম ম্যাটেরিয়াল’-এ পরিণত হয়। কমলা-সোনালী এবং সাদা রঙের সম্বনয়ে বাহারি লোমের এই কুকুরটির নাম কাবোসু। কাবোসুর বয়স ১৯ বছর।

দুর্ভাগ্যবশত কুকুরটি আর বেঁচে নেই। ২৪ মে (শুক্রবার) দীর্ঘদিন ধরে রোগাক্রান্ত থাকার পর অবশেষে দেহ ত্যাগ করে কুকুরটি। কুকুরটির মালিক আতসুকো সাতো (৬২) জাপানের চিবা প্রিফেকচারের সাকুরা শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক।শুক্রবার তার প্রকাশিত ব্লগে একটি দুঃখের কবিতা আবৃত্তির পর তিনি এই খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

১৯ বছর বয়সেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ২৬ মে রবিবার কাবোসুর স্মরণে একটি স্মরণ সভার আয়োজনও করা হবে। কুকুরটির মারা যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলে দুঃখ প্রকাশ করছে।

২০২২ সালে ক্রোানক লিম্ফোমা লিউকুমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সেই থেকেই কাবোসুর চিকিৎসা চলছিল। তবে দুঃখের বিষয়, সে আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারলো না।

কাবোসুর ত্যাড়া চোখে দৃষ্টির একটি ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এটি ইন্টারনেটে সবচেয়ে আইকনিক এবং স্বীকৃত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনকি ক্রিপ্টো কারেন্সির দুনিয়াতেও তার নাম ছিল।

;

বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য



অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এক মহান দিন এটি। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। একই দিনে মহাজ্ঞানী বুদ্ধত্ব এবং বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই তিথিকে বলা হয় বৈশাখী পূর্ণিমা, যা আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে পালন করা হয়। বৈশাখ মাসের এই তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত এ তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত বিশাল।

খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এই দিনে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের তৎকালীন কপিলাবস্তু দেবদহ নগরের মধ্যবর্তী লুম্বিনী কাননে মাতা রানী মায়াদেবীর পিতৃগৃহে যাবার পথে শালবৃক্ষের নিচে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে ৩৫ বছর বয়সে বোধিবৃক্ষমূলে কঠোর সাধনা বলে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে ৮০ বছর বয়সে একই দিনে ৪৫ বছর দুঃখ মুক্তির ধর্ম প্রচার করে কুশীনগরে যুগ্মশাল তরুণমূলে চিরনির্বাসিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন অর্থাৎ তিনি দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। পৃথিবীতে আর জন্মলাভ করবেন না। গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম ছিল রাজা শুদ্ধধন ও গৃহী নাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৫২৭ বছর আগে ভারতবর্ষে যখন ধর্মহীনতা মিথ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্বাস্বে ধর্মে সমাজের শ্রেণি বৈষম্যের চরম দুরবস্থা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত, প্রাণী হত্যায় চরম তুষ্টি ,তখন শান্তি মৈত্রী অহিংস সাম্য ও মানবতার বার্তা নিয়ে মহামতি বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে।

গৌতম বুদ্ধ অহিংস ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। এই জীবজগৎ অনিত্য দুঃখ অনাত্মাময় প্রাণমাত্রই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অস্থায়ী বা অনিত্য কার্যতকারণের অধীন। তিনি জীবনের প্রগাঢ় খাটি চার আর্যসত্য আবিষ্কার করলেন। জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের অবশ্যই কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে, দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির উপায় হলো নির্বান লাভ। এই নির্বান লাভের ৮টি মার্গ আছে। যেমন সম্যক বা সঠিক দৃষ্টি , সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। এই পথ পরিক্রমায় শীল সমাধি প্রত্তোয় নির্বাণ লাভের একমাত্র উপায়। সব প্রাণী সুখী হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে পরম, মহৎ বাণী তিনি প্রচার করেছেন। শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণ ও প্রাণীর প্রতি, প্রেম, ভালোবাসা, অহিংসা, ক্ষমা, মৈত্রী, দয়া, সহনশীলতা, সহমোর্মিতা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ, প্রীতি, সাম্য, সম্প্রীতির কথা তিনি বলেছেন।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৪/১১৫ রেজুলেশন এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ “ভেসাক ডে” হিসেবে পালন করে আসছে। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র এই দিনকে বিভিন্ন নামে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপালে বুদ্ধ পূর্ণিমা, লাওসে বিশাখ পূজা, ইন্দোনেশিয়া হারি ওয়াইসাক ডে, মালয়শিয়ায় ওয়েসাক ডে, মায়ানমারে ফুল ডে অব কাসন, সিঙ্গাপুরে হারি ভেসাক ডে নামে পালন করে থাকে আবার কেউ বুদ্ধ জয়ন্তী দিবস হিসেবেও পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এস্তেনিও গুতেরেজ ভেসাক ডে উপলক্ষে বলেছেন, “On the day of Vesak, Let us celebrate Lord Buddha’s wisdom by taking action for others with compassion and solidarity and by renewing our commitment to build a peaceful world.”

ফিলিস্তিনে আজ চরমভাবে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। অশান্তিময় এই পৃথিবীতে বুদ্ধের মৈত্রী, সংহতি, সাম্য, মানবতা ও শান্তির বাণী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজও প্রাসঙ্গিক এবং খুব প্রয়োজন। বিশ্ব আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পরিবেশ দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলাবদ্ধতা, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, জীব বৈচিত্র্য হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন এই সবুজ গ্রহের ইতিহাসে নজিরবিহীন। গৌতম বুদ্ধই প্রথম বৃক্ষকে এক ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট জীবরূপে আখ্যায়িত করেছেন। বুদ্ধ ছিলেন বিশুদ্ধ পরিবেশবাদী দার্শনিক। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাই বুদ্ধের জন্ম বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ বৃক্ষের পদমূলের বিশুদ্ধ পরিবেশ মন্ডিত পরিবেশে সংগঠিত হয়েছিল।

এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা বিভিন্ন দেশে দেশে সব প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করেন। অশান্ত পৃথিবীতে পরিবেশ সংরক্ষণে বুদ্ধের বাণী নীতি ও আদর্শ বিশ্ব মানবতার শিক্ষা, দর্শন, চিন্তা চেতনা ,ভাবনা সুন্দর, শান্ত, সাম্যময় পৃথিবী গড়ার বিকল্প নাই। সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
চিকিৎসক, লেখক, সংগঠক ও গবেষক

;