আমজাদ হোসেন: বিদায় ব্রহ্মপুত্রের জাতক

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্টিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আমজাদ হোসেন, ছবি: সংগৃহীত

আমজাদ হোসেন, ছবি: সংগৃহীত

এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ জলধারা ব্রহ্মপুত্র নদ চীন-তিব্বত হয়ে উত্তরবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে মেঘনায় পতিত হয়েছে। তারপর সমুদ্রগামী নদ বহন করছে পেছনে ফেলে আসা বিস্তৃত জনপদ, অপার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আর জনমানুষের স্মৃতি।

জামালপুর তেমনি এক ব্রহ্মপুত্র বিধৌত জনপদ, যেখানে নদী ও মানুষ মিলনে-বিচ্ছেদে-সংগ্রামে সমান্তরাল বহমান। বিশেষত, একজন ব্রহ্মপুত্র জাতক গ্রামীণ নারী ও দারিদ্র্যের মাটিছোঁয়া জীবনচিত্র তুলে এনেছিলেন সেলুলয়েডে। রূপালি পর্দায় প্রক্ষেপ করেছিল গ্রামীণ নারীর চিরায়ত প্রতীক গোলাপীকে। জীবন ও যৌনতার প্রশ্নে ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে প্রান্তীয় নর-নারীর আপোষ ও লড়াইয়ের চলচ্চিত্রায়িত ভাষ্যকার ছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আমজাদ হোসেন জামালপুরের সেইজন, যিনি ব্রহ্মপুত্রের মেধাবী জাতক আনোয়ার হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন প্রমুখের পরম্পরাগত ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলোকিত করেছিলেন সমগ্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অন্তরস্পর্শী শৈল্পিক সরলতায় পাড়ি দিয়েছেন আস্ত একটি পেশাজীবন। সাফল্যের দ্যোতনাময় সে জীবন আজ ইতিহাসের অংশ।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যে একান্তভাবে এ দেশীয় বিষয়, প্রবণতা, বক্তব্য ও চরিত্রকে ধারণ করেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম, এই সত্যটি বার বার প্রমাণ করেছেন তিনি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘ভাত দে’, ‘জয়যাত্রা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তার ছবি প্রকৃত বাংলাদেশের কথা বলেছে। বাংলাদেশের অন্ত্যজ ও প্রান্তীয় মানুষের জীবনচিত্রের আলো ও অন্ধকারকে তাত্ত্বিক কচকচানির বদলে সরল-সত্যের বিন্যাসে দেখিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্বকীয় সাফল্যে আমজাদ হোসেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন একাধিক বার। এই বিশিষ্ট অভিনেতা, লেখক, চলচ্চিত্রকার ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্র দিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পা রাখেন। পরবর্তীতে চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন।

১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে তার। একাধারে শিশুসাহিত্যিক, চলচ্চিত্রের কাহিনীকার, ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্য রচয়িতা, পরিচালক, গীতিকার, অভিনেতা, প্রযোজক। কর্মজীবনে ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৬টি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেছেন বরেণ্য এ চলচ্চিত্রকার।

আমজাদ হোসেন তার মৃত্যুতে স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তানকে রেখে গেছেন। আর রেখে গেছেন বহমান ব্রহ্মপুত্র, বর্ণাঢ্য জনপদ জামালপুর এবং রূপালি পর্দার সচল-সবাক ছবিগুলো, যেসবের ভেতর দিয়ে মৃত্যুর পরেও স্মৃতিতে বেঁচে থাকবেন তিনি।