পরিযায়ী পাখিরা আসছে



আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওরে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক, ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওরে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক, ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

  • Font increase
  • Font Decrease

অক্টোবর মাস। সেপ্টেম্বরের ঘাম ঝড়ানো ও অস্বস্তিকর গরম শেষ হয়ে শীতের হালকা আমেজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করেছে। যদিও আগে ভোরবেলা ও সন্ধ্যায় আকাশে উড়ে যাওয়া অতিথি পাখির কলকাকলি শোনা যেত, এখন তা তেমন একটা শুনি না। তবে, শহর থেকে খানিকটা দূরে খাল-বিল-নদী-হাওরের কাছাকাছি গেলে ঠিকই ওদের কলকাকলি শোনা যায়। এমনকি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি খাগড়াছড়ি ও সাজেক গিয়ে বেশ কিছু অতিথি পাখির সঙ্গে দেখা হয়েছে। এই যে অতিথি পাখির কথা বললাম ওরা কী আসলেই আমাদের অতিথি? না, মোটেও না। সঠিকভাবে বললে ওরা হলো পরিযায়ী পাখি বা Migratory Bird। পরিযায়ী পাখির কথা বলার আগে পাখি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯,৯৩০ প্রজাতি ও ২২,০০০ উপপ্রজাতির পাখির বাস। অনুমান করা হয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিগুলোর মোট সংখ্যা ২০-৪০ হাজার কোটি। পুরো ভারতে যেখানে ১,৩১১ প্রজাতির পাখির বাস, সেখানে বাংলাদেশে কমবেশি ৭১৮ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, গত কয়েক শতকে ২০০ প্রজাতির পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ১,২০০ প্রজাতির পাখি নানা কারণে হুমকির সম্মুখীন। এদেশের মোট পাখির মধ্যে কমবেশি ৩৪০ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করে, অর্থাৎ এরা সারাবছর এদেশে থাকে, ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে। ওরাই হলো এদেশের আবাসিক পাখি। এছাড়াও প্রায় ৩৭০ প্রজাতির পাখি পরিযায়ী অর্থাৎ বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় এদেশে আসে, বসবাস করে ও সময়মতো মূল আবাসে ফিরে যায়। এসব পাখি এদেশের মানুষের কাছে আগে, এমনকি এখনও, ‘অতিথি পাখি’ নামেই পরিচিত। এদেরই এক বিশাল অংশ এদেশে আসে শীতকালে যারা শীতের পরিযায়ী পাখি নামেও পরিচিত।

বাইক্কা বিলে পরিযায়ী কালো-লেজ জৌরালির ঝাঁক। ছবি- লেখক।

শীতপ্রধান দেশ থেকে আসা এসব পাখি মূল দেশে আবাসস্থল বসবাস অনুপযোগী হওয়া, খাদ্যের অভাব ও প্রচ- শীতের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে পরিযায়ন বা Migration করে। এটা ওদের জীবন চক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে বেড়ানোর কোনো ব্যাপার নেই, আছে জীবন বাঁচানোর তাগিদ। তাই এসব দেশকে ওদের দ্বিতীয় আবাস বা শীতের আবাস বলা যায়। তবে ওরা কিন্তু এসব দেশে বংশবিস্তার করে না। অবশ্য কিছু ব্যতিক্রমও আছে, যেমন- কুড়া ঈগল শীতকালে এদেশে আসে বংশবৃদ্ধির জন্য।

যদিও পরিযায়ী পাখি বলতে মূলত শীতের পাখিগুলোকেই বোঝানো হয়, তবে কিছু পাখি গ্রীষ্মেও পরিযায়ন করে, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল ও হালতি বা সুমচা পাখি। বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল এদেশে মার্চ থেকে এপ্রিলে আসে, অন্য উপযুক্ত পাখির বাসায় ডিম পাড়ে, ছানা ফোটে এবং ছানাসহ সকলেই আবার আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে তাদের শীতকালীন আবাসে চলে যায়। অন্যদিকে, বিভিন্ন প্রজাতির হালতি পাখি ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে এদেশে আসে, জুন থেকে জুলাইয়ে ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে, ছানারা বড় হয় ও ৭-৮ মাস এদেশে থেকে অক্টোবরের মধ্যে মূল আবাসে চলে যায়। ওরা গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী পাখি নামে পরিচিত।

সুন্দরবনের ডিমের চরের পাশে পরিযায়ী বড় গুলিন্দার ঝাঁক। ছবি- লেখক।

এছাড়াও বেশকিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি এদেশে অনিয়মিত। হয়তো এক বছর এল, এরপর আবার ৫ বা ১০ বছর পর এল, অন্যদের মতো প্রতি বছর এল না। এদেরকে তাই যাযাবর বা ভবঘুরে বা অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি বলে। আর ওদের সংখ্যাও নেহাত কম না, এদেশে আসা সকল পরিযায়ী পাখির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ওরা। আবার কোনো কোনো প্রজাতির পাখি অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের এক পর্যায়ে এদেশে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে আসে, যেমন- বাদামি চটক, বন খঞ্জন ইত্যাদি। এরা পন্থ-পরিযায়ী পাখি নামে পরিচিত। মূলত হেমন্তে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের পথে অল্প সময়ের জন্য এদেশে ওরা যাত্রা বিরতি করে ও বসন্তে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে মূল দেশে ফিরে যাওয়ার সময়ও আরেকবার এদেশে যাত্রা বিরতি করে।

পাখির পরিযায়ন হলো একটি নিয়মিত মৌসুমী স্থানান্তর যা সচরাচর তার প্রজনন এলাকা ও শীতের আবাসের মধ্যে হয়ে থাকে। মেরু গাংচিল তার প্রজনন ক্ষেত্র উত্তর মেরু থেকে শীতের আবাস দক্ষিণ মেরুতে সবচেয়ে লম্বা পথ পাড়ি দেয়। ডোরা-লেজ জৌরালি এক উড়নে প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার উড়ন পথ পাড়ি দিয়ে আলাস্কা থেকে নিউজিল্যান্ডে পরিযায়ন করে।

কর্ণফুলী নদীতে পরিযায়ী ছোট গুলিন্দার ঝাঁক। ছবি- লেখক।

এবার আসা যাক কোন ধরনের পাখিরা এদেশে পরিযায়ন করে?

প্রধানত দুই ধরনের পাখিরা পরিযায়ণ করে। প্রথম ধরন হলো সৈকত, নদী, মোহনা ও জলাভূমির পাখি। কমবেশি ৮২ প্রজাতির পাখি এই ধরনের অর্ন্তভুক্ত; মোট সংখ্যার হিসেবে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে ওদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এদেশে ওরা মূলত ছয়টি উড়নপথ আবাস্থল, যেমন- হাকালুকি, টাঙ্গুয়া ও হাইল হাওর (বাইক্কার বিলসহ), সোনাদিয়া দীপপুঞ্জ, নিঝুম দ্বীপ (দমার চরসহ) এবং গাঙ্গুইরার চর ছাড়াও রাজশাহীর পদ্মা নদী ও চরাঞ্চল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরইল বিল, যমুনার চর, মেঘনার মোহনা, কাপ্তাই লেক, সুন্দরবন, উপকুলীয় এলাকাব্যাপী বিস্তৃত। সৈকত ও জলচর পাখিগুলোর মধ্যে বেশকিছু মহাবিপন্ন পাখি রায়েছে। যেমন- চামচঠুঁটো চাপাখি, সোনাজঙ্ঘা, মানিকজোড়, খুন্তে বক, বড়ো ভূতিহাঁস, তিলা সবুজ চাপাখি ইত্যাদি।

দ্বিতীয় ধরন হলো বনজঙ্গল, বাগান, কুঞ্জবন ও ঝোপঝাড়ের পাখি। প্রায় ১৫৬ প্রজাতির পাখি এই ধরনের অর্ন্তভুক্ত; মোট প্রজাতির হিসেবে এই ধরনের পাখির প্রজাতি সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। আর ওদের আশ্রয়স্থল সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন মিশ্র চিরসবুজ বন, কেন্দ্রীয় ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভিন্ন পত্রঝরা বা শালবন, সুন্দরবন ও উপকূলীয় বাদা বন, গ্রামীণ বন, ঝোপঝাড়, ঘাসবন ও বাঁশবনজুড়ে বিস্তৃত।

সোনাদিয়া দ্বীপপুঞ্জের কালাদিয়া চরে পরিযায়ী সৈক পাখির খোঁজে লেখক।

এদেশের অনেককেই বলতে শুনেছি অতিথি পাখি তথা পরিযায়ী পাখিরা আমাদের খাদ্যে ভাগ বসায়, ওদের মলের মাধ্যমে আমাদের পরিবেশ নষ্ট করে, বিভিন্ন রোগ ছাড়ায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই এগুলো শিকার করে খেয়ে ফেলাই ভালো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ কথা সত্য নয়। আসলে পরিযায়ী পাখি তো আমাদের কোনো অপকার করেই না বরং প্রকৃতি ও পরিবেশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ওরা আমাদের প্রভূত উপকার করে। যেমন- কৃষির ক্ষতিকারক পোকমাকড় দমনে সাহায্য করে, ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে, ওদের মল জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশ সূচক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও বর্তমানে এদেশের মানুষের মধ্যে পাখি পর্যবেক্ষণের হিড়িক পড়ে গেছে, যা অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনোদনমূলক বিষয়। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক পরিবেশ-পর্যটনের উন্নয়নে এটি সাহায্য করে যা বিলিয়ন ডলার শিল্প হয়ে উঠেছে। কাজেই ধীরে ধীরে এটি দেশের জন্য জৈব-অর্থনীতির সম্ভাব্য একটি উৎস হয়ে উঠছে। প্রতি বছর এদেশে যে সংখ্যক পরিযায়ী পাখি আসে সেগুলোর মধ্যে ৮টি মহাবিপন্ন, ৬টি বিপন্ন ও ৮টি সংকটাপন্ন প্রজাতি।

কাজেই এসব পাখিদের অতিথি না ভেবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। এ কথা মনে রাখা উচিত যে, এসব পরিযায়ী পাখি শিকার করে ওদের সংখ্যা কমিয়ে দিলে কোনো কোনো মহাবিপন্ন পাখি, এমনকি এদেশ তথা গোটা বিশ্ব থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আর তা নিশচয়ই আমাদের জন্য ভালো হবে না। কাজেই নিজেদের অস্তিত্বের জন্যই পরিযায়ী পাখি রক্ষায় সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

E-mail: [email protected], [email protected]

 

 

 

   

ছেলেরা খাবার দেয় না, ভিক্ষার থলি হাতে পথে পথে জাহানারা!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাবা, গতবছর কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খাইছিলাম। এর পর আজ পর্যন্ত একটা কুডি (টুকরো) খাইতারলাম না। আগামী কোরবানির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। এইবার রোজার ঈদেও একটু ভালো খাওন (খাবার) পাইনি। মাইনসে কিছু সেমাই দিছিলো কিন্তু জন্ম দেয়া ছেলেরা আমারে কিছুই দেয় না কোনো সময়ই। ঈদেও কিছু দিলো না। তারা দিলে মনডায় শান্তি লাগতো। তবুও তারা সুখী হউক’!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবং আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষক জাহানারা (৬৫)।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কর্মে অক্ষম হয়ে ২০ বছর ধরে ভিক্ষার থলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধ জাহানারা। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে শরীর। একটি ব্যাগ আর লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে চলেছেন কটিয়াদী বাজারের পথে পথে! এই দোকান থেকে ওই দোকান!

জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দুই বছর পর থেকে টেনেটুনে চলেছিল সংসার তাদের। স্বামী অলস প্রকৃতির ও ভবঘুরে হওয়ায় কোনো সময়ই সংসারে সচ্ছলতা আসেনি।

অভাবের কারণে একসময় তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে স্বামী সফর উদ্দিনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। বয়সের কারণে জাহানাকে মানুষ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন জাহানারা, যা আজ অব্দি চলছে। ২০ বছর পার হতে চললো।

জাহানারা, সফর উদ্দিন দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা সবাই যার যার নিজেদের পরিবার নিয়ে সংসার করছে। কেউই মা-বাবার খোঁজ নেয় না। মেয়েরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিলেও ছেলেরা একদমই নেয় না জানালেন জাহানারা।

ছেলেরা খাবার দেয় না! ভিক্ষার ঝুলি হাতে পথে পথে ভিক্ষা করেন জাহানারা, ছবি- বার্তা২৪.কম

জাহানারার নামে একটু জমি ছিল। সেটুকুও ছেলেরা লিখে নিয়েছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাবা-মা ঝোপঝাড় সংলগ্ন কবরস্থানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বেঁচে থাকার পরেও কবরস্থানই যেন হলো বাবা-মায়ের হলো আপন ঠিকানা! বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে আর রাত হলেই শিয়াল ও বন্য প্রাণীর শব্দে রাত কাটে তাদের।

তার সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, গত কোরবানির ঈদে মানুষের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছেন। এরপর ইচ্ছে হলেও কাউকে বলার ও কিনে খাওয়ার কোনোটাই সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। মাঝে-মধ্যে মানুষের দেওয়া মুরগি পেলেও অন্য মাংস তাদের জন্য স্বপ্ন হয়েই আছে। সে কারণে সারাবছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার কটিয়াদী বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন জাহানারা। পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। বয়স্ক ভাতা যা পান, তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহের খাবার খরচ মেটাতে হয়।

বৃদ্ধ জাহানারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনটা ছিঁড়া কাপড় দিয়ে বছর পার করছি। এবার ঈদে একটি কাপড়ও পাইনি। ফেতরার দানের আড়াইশ টাকা শুধু পাইছি। মানুষ মাঝে-মধ্যে খাইতে দ্যায়। বাকি দিনগুলো কেমনে যে পার করি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কিছু'!

 

 

;

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;