আইভোরিয়ান কৃষকদের ‘আশীর্বাদ’ বন্য শামুক

  • সানজিদা খান, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: আল জাজিরা

ছবি: আল জাজিরা

গ্যাস্ট্রোপড বা বন্য শামুক যা আইভরি কোস্টের কৃষিকদের জন্য এক আশীর্বাদ স্বরূপ। শামুকের মাংস আইভরি কোস্ট ও এর আশেপাশের প্রতিবেশী গিনি উপসাগরীয় দেশগুলোতে খুব জনপ্রিয়। সাধারণত এটি ভেজে মশলাদার সস দিয়ে খাওয়া হয়।

একটি শামুক সাধারণত সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম (এক পাউন্ড) ওজনের হতে পারে এবং মাত্র ১০ সেন্টিমিটার (চার ইঞ্চি) পর্যন্ত বাড়তে পারে। কিন্তু আইভরি কোস্টে এমন এক দৈত্যাকার শামুক চাষ করা হয় যা দেশটিতে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবেদন- আল জাজিরা।

বিজ্ঞাপন

শামুকের সুস্বাদু মাংস এসব দেশের একটি উপাদেয় খাদ্য হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া দৈত্যাকার এই শামুকগুলোর স্লাইম এবং শাঁস থেকে তৈরি প্রসাধনীও খুব জনপ্রিয় এখানে।

ছবি: আল জাজিরা

কিন্তু গত ৬০ বছরে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বন্য শামুকের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে  প্রায় ৯০ শতাংশ বন বিলীন হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রাকৃতিকভাবে গরম আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোকো উৎপাদনকারী দেশে কৃষি উৎপাদনের জন্য বেশিরভাগ বন হারিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্দ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রাণীদের ক্ষতি হচ্ছে। বন উজাড় হওয়ার ফলে জীব বৈচিত্রও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার আফ্রিকার বন্য শামুকও।

বন্য শামুকের সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাওয়ায় তাদের প্রজনন বৃদ্ধির প্রয়াসে বিশেষজ্ঞরা খামারে বাণিজ্যিকভাবে শামুকের চাষ শুরু করেছেন। এসব খামারে ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে উঠছে দৈত্যাকার শামুক গ্যাস্ট্রোপড । শুধুমাত্র দেশটির দক্ষিণে আর্দ্র শহরেই প্রায় ১৫,০০ টি খামার রয়েছে।

আইভরি কোস্টের বাণিজ্যিক রাজধানী আবিদজান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) উত্তরে আজাগুই শহরের অনেকগুলো খামারে শামুকের প্রজনন করা হয়।

ছবি: আল জাজিরা 

এসব খামারে প্রায় ১০ টি ইট এবং সিমেন্টের পাত্রের ভিতরে জালের ঢাকনা দিয়ে উপরে মাটির একটি স্তর দেয়া হয়। এই পাত্রগুলোর মধ্যে হাজার হাজার শামুক, কিশোর এবং প্রজননকারী শামুক বেড়ে ওঠে। ইউরোপের কিছু জায়গায় এই শামুকের আকার তুলনামূলকভাবে অনেক বড় হয়ে থাকে।

ছোট সাইজের গ্যাস্ট্রোপডগুলোকে প্রতি দুই দিন অন্তর পানি দেওয়া হয় এবং খাওয়ানো হয়। এভাবেই নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে খামারে শামুকগুলো উৎপাদন করা হয়।

দৈত্যাকার গ্যাস্ট্রোপড উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণনকারী বৃহত্তম সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম আইভরি কোস্ট স্নেইল এক্সপার্টাইজ (সিআইইই) এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বার্নাস ব্লু বলেন, 'বন্য শামুক আর খামারে চাষকৃত শামুকের স্বাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। দুটোই সমান সুস্বাদু।' 

খামারগুলোতে চাষিরা রেইন ফরেস্টে পাওয়া শামুকের প্রাকৃতিক পরিবেশে পুনরুৎপাদন করে। এখানে শামুকগুলোকে পাতা, ফল, সবজি, ভুট্টা এবং সয়া খাওয়ানো হয়। (সিআইইই) এর প্রযুক্তিগত সমন্বয়কারী অ্যালেক্সিস ফ্যামি বলেন, 'এখানে কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এটি সম্পূর্ণরূপে জৈব।' 

ছবি: আল জাজিরা 

ছয় বছর আগে প্রতিষ্ঠা হওয়া (সিআইইই) এর ৫০ টি খামার এবং প্রকৃয়াকরণ ইউনিট রয়েছে। ৭৫ জন কর্মী রয়েছেন এবং মাসে প্রায় ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ কোম্পানীর আওতায় বেশিরভাগ প্রশিক্ষণার্থী নিজেদের খামার তৈরি করার জন্যে সমবায়ে যুক্ত হন। বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার খামার থেকে আগামি কয়েক বছরে কোম্পানিটি ১,০০,০০০ উৎপাদকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বার্নাস ব্লু।

তিনি আরও বলেন, 'শামুকের কিছুই ফেলে দেয়া হয় না। শামুকের স্লাইম থেকে সাবান, শাওয়ার জেল এবং মলম তৈরি হয়। এছাড়াও এর শাঁসের গুঁড়া বিভিন্ন প্রসাধনী এবং পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।' 

ছবি: আল জাজিরা 

আজাগুই শহরের (সিআইইই) এর খামারের নারীরা শামুকের স্লাইমের সাথে নারকেল তেল, সবুজ রঙ এবং সুগন্ধি মিশিয়ে সাবান ও শাওয়ার জেল তৈরি করেন । এসব ওয়ার্কশপ থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৫ হাজার সাবান ও ৫ হাজার বোতল শাওয়ার জেল উৎপাদন হয়ে থাকে।

ওয়ার্কশপের সুপারভাইজার নেলি ব্লন বলেন, 'শামুক স্লাইম ত্বককে হাইড্রেট করে, উজ্জ্বল করে ও বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।'