যেখানে মেঘ পাহাড়কে ছুঁয়ে যায়
বান্দরবান থেকে ফিরে:
সড়কের বাঁ পাশের পরপর দুটো লম্বা জলাশয়, খেজুর গাছের বাগান আর পাহাড়ি কোমল বাতাস ও স্নিগ্ধ আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান যেন এভাবেই স্বাগত জানাচ্ছে আমাদের।
পাহাড়, মেঘ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষা শেষে হঠাৎ করেই বান্দরবান ঘুরতে যাওয়া। মোট দুই রাত তিন দিনের এই ভ্রমণ শুরু হয় ৬ ডিসেম্বর রাত এগারোটায়৷ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন, এরপর ট্রেনে করে চট্টগ্রাম। তারপর সকালে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা৷ ৭ ডিসেম্বর সাড়ে নয়টা নাগাদ বান্দরবানের কোলে এসে পৌঁছি, সাথে বন্ধু জাভেদ।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সুবাদে পরিচয় ছিল সুফল চাকমা দাদার সাথে৷ থাকা-খাওয়া থেকে ঘুরাঘুরি, সবকিছুই ছিল তার ব্যবস্থাপনায়। সেখানে পরিচিত হই মং হাই দাদার সাথে।
৭ তারিখ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রওনা হই মেঘলা আর নীলাচলের উদ্দেশ্যে। প্রধান শহরের কাছাকাছি দুটি ভ্রমণ স্পট প্রথমবারের মতো আসা ভ্রমণকারীদের শুভকামনা জানিয়েছে এই বুঝিয়ে যে, ‘এটা তো সবে শুরু, আমাদের আরও আছে।'
ছিলাম মং হাই দাদার মোটরসাইকেলে; তিনি জানালেন বান্দরবান নামের পেছনে এক মজার কাহিনি। নদীর এক পাড় হতে অন্য পাড়ে আগে অনেক বানর লাফিয়ে লাফিয়ে যেতো৷ একবার পানি বেড়ে যাওয়ায় নিজেরাই শেকলের মতো বানিয়ে পার হয়ে যায়৷ মারমা ভাষায় একে বলা হতো ‘ম্যাওকছি'। এর অর্থ ‘বানরের বাঁধ'। যা একসময় স্থানীয়দের মুখে পরিবর্তিত হয়ে ‘বান্দরবান' হয়েছে৷
পরদিন সকালে (৮ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা ছিল বগালেক যাওয়ার। তবে বৃষ্টির বাধায় তা আর হয়ে উঠেনি৷ কিন্তু এতে হার না মেনেই মোটরসাইকেলে বেরিয়ে পড়লাম আকাশ ফুঁড়ে চিম্বুক আর নীলগিরির উদ্দেশ্যে।
সকাল দশটা পর্যন্ত বৃষ্টি থাকার পর যখন হালকা সূর্য ওঠে, পাহাড়ের নিশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে সব৷ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে রাস্তা, ঘন থেকে ঘনতর হয়ে ওঠে এই মেঘ৷ আমরা বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিলাম, বৃষ্টির পানি মাটিতে মিশে এরপর বাষ্প হয়ে আবার মেঘে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের এই দৃশ্যের চাক্ষুষ প্রমাণ এখানকার পাহাড়গুলোতে এনে দেখানো উচিত। সে এক দারুণ দৃশ্য, নীলাচল স্পট থেকে দেখছি চিম্বুক পাহাড়ের একপাশে বৃষ্টি, অন্যভাগ থেকে বাষ্প মেঘে পরিণত হচ্ছে।
এসময় বেশকিছু স্থানীয় ও পর্যটকদের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। তারা অনেকেই অসন্তুষ্ট নীলগিরির স্পটে প্রবেশমূল্য এক'শ টাকা দেখে। পাশাপাশি যানবাহন পার্কিং স্পেসে না রাখলেও গুনতে হয় খরচ।
নীলগিরি স্পটে ছবি তোলার পর্ব শেষ হতে না হতেই শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। স্পটের গেটের দিকে স্থানীয় ফলের দোকানে আশ্রয় নিলাম।
বৃষ্টি কমে গেছে, এবার ফিরে আসার সময় হলো। বৃষ্টির পর কুয়াশা-মেঘ আরো গাড়ো হতে শুরু করেছে৷ উপরে ওঠার সময় যে-সব স্পটে ছবি তুলি, সেগুলোও মেঘে ঢেকে গেছে। ছুটছে দুটি মোটরসাইকেল, শূন্য দৃশ্য, চিম্বুকের বুকে, মেঘ ফুঁড়ে…