বাঙ্কারে গভর্নর: ৮ মার্কিন রণতরী ঠেকাতে ২০ রুশ যুদ্ধজাহাজ



আশরাফুল ইসলাম
বাঙ্কারে গভর্নর: ৮ মার্কিন রণতরী ঠেকাতে ২০ রুশ যুদ্ধজাহাজ

বাঙ্কারে গভর্নর: ৮ মার্কিন রণতরী ঠেকাতে ২০ রুশ যুদ্ধজাহাজ

  • Font increase
  • Font Decrease

মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানী বাহিনী একাত্তরের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ছিল দিশেহারা। যুদ্ধের ময়দানে টিকতে পারে মার্কিন মদদে নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিতে থাকে পাকিস্তানিরা জান্তারা। সময় যতোই গড়াচ্ছিল তারা বুঝে গিয়েছিল পূর্বপাকিস্তানে তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র নীলনকশায় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ সংঘটনে দেশিয় আলবদর বাহিনীর যোগসাজশে একদিকে পাকিস্তানি বাহিনী তৎপর থাকলেও চারদিক থেকে চেপে ধরা মিত্র বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল জান্তারা।

একাত্তরের ডিসেম্বরের ১৪ ও ১৫ তারিখ ছিল চূড়ান্তভাবেই ঘটনাবহুল সময়। সেই সময়কার ভারতীয় গণমাধ্যমে ধরা দিয়েছে ওই সময়কার চালচিত্রের বিস্তারিত বিবরণ। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির সহযোগিতায় আমরা জানতে চেষ্টা করেছিলাম ঘটনাবহুল সেই সময়ের সত্যিকারের চিত্রটি কেমন ছিল।

কলকাতার বিখ্যাত দৈনিক যুগান্তর (বর্তমানে অধুনালুপ্ত) সেই সময়ের যুদ্ধের যে সংবাদ প্রকাশ করে তা কেবল চমকপ্রদই নয়, ঐতিহাসিক বিচারেও অনন্য। কেননা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাণান্তর প্রচেষ্টায় সেই সময়ের গণমাধ্যমকর্মীদের যে কর্তব্যনিষ্ঠা পত্রিকাটির পরতে পরতে ফুটে উঠেছে তা সত্যিই অনবদ্য।


১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১। দৈনিক যুগান্তরের যে সংখ্যাটি বেরোয় তাতে প্রধান শিরোনাম, ‘বগুড়া মুক্ত।। চট্টগ্রাম ও ঢাকার গভর্নরের প্রাসাদ জ্বলছে ঢাকা দখলের লড়াই’। দৈনিকটি সাব হেড করেছিল, ‘খানশাহীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মন্ত্রিসভাসহ ডঃ মালিকের পদত্যাগঃ নিরপেক্ষ এলাকায় আশ্রয়’।

নয়াদিল্লি থেকে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ বার্তা সংস্থা ‘ইউ এন আই’-এর বরাতে দৈনিকটি জানায়, ‘ঢাকায় গভর্নরের ‘বাড়ি’ ও কয়েকটি লক্ষ্যস্থলে এখন আগুন জ্বলছে। গভর্নর ড. এ মালিক, তাঁর মন্ত্রিপরিষদ ও তাঁর উর্ধ্বতন অসামরিক কর্মচারীরা ইতিমধ্যে তাদের নিজ নিজ পদে ইস্তফা দিয়ে নিরপেক্ষ এলাকা ইন্টার-কন্টিনেন্টাল হোটেলে পালিয়ে গিয়েছেন।’

এই খবরে আরও প্রকাশ, ‘ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে এখন যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশের জনসাধারণের যুগান্তকারী স্বাধীনতা সংগ্রাম এখন শেষ পর্যায়ে এসে পৌছেছে। ঢাকায় পাকিস্তানিদের চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করে একটি প্রতিনিধিস্থানীয় সরকার গঠনের জন্য ভারতীয় সৈন্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান সরকার আজ বিকেলে সদলবলে পদত্যাগ করেছেন এবং ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে নিজেদের সরিয়ে এনেছেন। ঢাকার শহরতলীতে প্রচণ্ড হাতাহাতি লড়াই চলছে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় জওয়ানরা তীব্র বেগে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। একটা শক্তিশালী পাক বাহিনীর মোকাবেলা করে তারা তাদের সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করেছেন। ঢাকা শহরের সেনাবাহিনীর ছাউনীর উপর ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী গোলা নিক্ষেপ করে চলেছে। এদিন রংপুর সেক্টরে শত্রুর সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টার বগুড়ার পতনের মধ্য দিয়ে ঐ সেক্টর মোটামুটি শত্রুমুক্ত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।’


ঢাকার উপকণ্ঠে বারো জন পদস্থ সেনা কর্তার আত্মসমর্পণের খবর দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছিল, ‘গভীর রাতে ঢাকা সেক্টরের আরও যে খবর এসেছে তাতে দেখা যায়, ভারতীয় জওয়ানরা শুধু জয়দেবপুর, টঙ্গী, কালিগঞ্জ দখল করেই ক্ষান্ত হননি, তাঁরা আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছেন। শহরতলীতে পাক সেনাবাহিনীর পুরো একটা বিগ্রেড আটকে পড়েছে। ঐ বাহিনীর অধ্যক্ষ একজন বিগ্রেডিয়ার ও ময়মনসিং-এর মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটারসহ কমপক্ষে বারোজন জাদরেল পাক সেনাপতি আত্মসমর্পণ করেছেন।’

আল্লা বাঁচাও’বিবরের মধ্যে মালিকের প্রার্থনা

১৪ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘বিমান আক্রমণ হবার পর পরই ডঃ মালিক ও তাঁর মন্ত্রিবর্গ একটি বিবরে (বাঙ্কার) মধ্যে ঢুকে পড়েন। সেই বিবরে রাষ্ট্রসঙ্গের জনৈক কর্মচারী জন কেলীসহ অনেক বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ আশ্রয় নেন।’

গভর্নর মালিক ‘কম্পমান’

ভারতীয় মিগ বিমান থেকে গভর্নর ডা. মালিকের সরকারি বাসভবনে উপর যখন বোমা বর্ষিত হচ্ছিল তখন তিনি ভয়ে কম্পমান। তিনিসহ তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করে বাঙ্কারে আশ্রয় নেন। 

১৪ ডিসেম্বরে বার্তা সংস্থা পিটি আই’র খবর উদ্ধৃত করে ‘লোকসভার বলিষ্ঠ দাবি/মার্কিন সপ্তম নৌবহরের হুমকির কাছে নতিস্বীকার নয়’শীর্ষক প্রতিবেদনে দৈনিকটি জানায়, ‘মার্কিন নৌ-বহরকে বঙ্গপোসাগরের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে ভারতকে যে হুমকি দেখাচ্ছে সে হুমকির কাছে নতি স্বীকার না করতে আজ লোকসভা সরকারের কাছে বলিষ্ঠ আহ্বান জানায়’। এ খবরের পাশেই ‘মালাক্কা প্রণালীতে সপ্তম নৌবহর’ শীর্ষক খবর।

১৪ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে ইউএনআই’র বরাতে প্রকাশিত খবরে যুগান্তর জানায়, ‘‘মার্কিন নৌ-বহরের সাত কি আট খানা জাহাজ সোমবার সিঙ্গাপুর অতিক্রম করে মালাক্কা প্রণালী অতিক্রম করে ভারত মহাসাগরের দিকে এগুচ্ছে। আজ সিঙ্গাপুরের নির্ভরয্যোগ্য সূত্রে এই খবর প্রকাশ পেয়েছে। মালাক্কা প্রণালী প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। যে সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে তা খুবই নির্ভরযোগ্য বলে বর্ণনা করে বলা হয়, জাহাজগুলো উত্তর-পশ্চিম দিকে এগুচ্ছে এবং দুপুরের আগে সিঙ্গাপুর অতিক্রম করে গেছে। খবরে বলা হয়েছে, পারমাণবিকশক্তি চালিত বিমানবাহী জাহাজ ‘এন্টারপাইজ’ এই মার্কিন নৌবহরের মধ্যে আছে কিনা তা জানা যায় না।

ওয়াশিংটন থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে যে, ভিয়েতনামের কোন ঘাঁটি থেকে ‘এন্টারপাইজ’কে বঙ্গপোসাগরের দিকে পাঠানো হয়েছে। উদ্দেশ্যঃ বাংলাদেশে যেসব মার্কিন নাগরিক আটকে পড়েছে, প্রয়োজনসাপেক্ষে তাদের উদ্ধারের জন্য তৈরী থাকা।’’

১৫ ডিসেম্বরের ঘটনাপ্রবাহের যে খবর যুগান্তরের ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ প্রকাশিত হয় তাতে প্রধান শিরোনাম, ‘বাংলাদেশে যুদ্ধ থামান-নিয়াজি/আত্মসমর্পণ করুন-মানেকশ’

‘আপাততঃ বিমান আক্রমণ স্থগিতঃ আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত নিয়াজীকে সময় দান’

প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী আজ যুদ্ধবিরতির এক প্রস্তাব দেন। এর পরই ভারতীয় স্থলবাহিনীর প্রধান এস এইচ এফ জে মানেকশ’ আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে জেনারেল নিয়াজীকে তাঁর সকল সৈন্যকে ভারতীয় সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিতে বলেছেন।’ 

‘‘জেনারেল মানেকশ’ এই বলে জেনারেল নিয়াজীকে সাবধান করে দিয়েছেন যে, যদি তিনি তাঁর আহ্বানে সাড়া না দেন তাহলে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর পক্ষে আগামীকাল সকাল থেকে আবার প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করা ছাড়া উপায় থাকবে না। জেনারেল মানেকশ’বলেছেন, তাঁর সদিচ্ছার প্রতীক হিসেবে তিনি আজ বিকাল ৫টা থেকে ঢাকার উপর বিমান আক্রমণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে স্থলবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নরসিংদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে ঢাকার কাছে এসেছেন’’

যুদ্ধ থামাতে ইয়াহিয়ার আকুতি

যুদ্ধ থামাতে পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আকুতির খবর তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে চলে এসেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম যুগান্তর তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ‘‘আজ গভীর রাতে ঢাকা থেকে ভয়েস অব আমেরিকা ঢাকা থেকে প্রাপ্ত একটি সংবাদ উদ্ধৃত করে বলেছে যে, পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গতকাল জেনারেল নিয়াজির নিকট প্রেরিত একটি বাণীতে তাকে ‘যুদ্ধ বন্ধ করার’ পরামর্শ দিয়েছেন।’’

‘‘ঢাকাস্থিত সামরিক কর্তৃপক্ষ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোন আলোচনা চলছে নাÑরাওয়ালপিন্ডির একজন সরকারি মুখপাত্র আজ রাতে এই খবরটি জানান বলে বিবিসি থেকে প্রচার করা হয়েছে। তিনি আবারও আশ্বাস দিয়েছেন যে, পাকিস্তানী সৈন্যদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে এবং জেনিভা চুক্তি অনুসারে যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে’’

‘‘জেনারেল নিয়াজি যে কম্পাঙ্কে তার সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন তাও তিনি তাকে বলে দিয়েছেন। জেনারেল নিয়াজী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ভারতীয় স্থলবাহিনীর অধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশ’র কাছে আজ এক পত্র পাঠান বলে এখানে সরকারীভাবে জানান হয়’’

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্বে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় খবর ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মিত্র বাহিনীর অগ্রাভিযানকে ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে মোতায়েনের ঘটনা। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম সংহতি জানিয়ে রাশিয়া ৮ মার্কিন রণতরীর বিপরীতে ২০ রুশ যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিজয় ঠেকানোর মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। আমরা দেখব সেই সময়কার গণমাধ্যমের খবরে যেভাবে চিত্রিত হয়েছিল সেই ঘটনাপ্রবাহ।


মার্কিন রণতরীর বিপরীতে ২০ রুশ যুদ্ধ জাহাজ

সিঙ্গাপুর থেকে বার্তা সংস্থা ইউপিআই ১৫ ডিসেম্বর জানায়, ‘আজ এখানে কুটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে যে, পরমাণু শক্তিচালিত মার্কিণ বিমানবাহী জাহাজ ‘এন্টারপ্রাইজ’ এবং নৌবাহিনীর আরও সাতখানা জাহাজ বঙ্গোপসাগরের অবস্থান করছে।’

জাপানি প্রতিরক্ষা দপ্তরের সূত্র উদ্ধৃত করে কিয়েডো সংবাদ সংস্থার খবর প্রকাশ করে টোকিও থেকে ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ বার্তা সংস্থা এপি জানায়, ‘আজ জানিয়েছে প্রায় ২০টি সোভিয়েত যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরে জমায়েত হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ক্রুজার এবং ডেস্ট্রয়ারও আছে।’

‘কিয়োডো সংবাদ সংবাদে বলা হয়েছে, জাপানি বাণিজ্যিক নৌবহরের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি বিমান আজ সকালে নাগাসাকির দক্ষিণে একটি ৭ হাজার টন ক্ষেপণাস্ত্রী ক্রুজার এবং ৫ হাজার ২০৮ টন ডেস্ট্রয়ার দেখতে পেয়েছে। কিয়েডোর সংবাদে আরও বলা হয়েছে যে, গত এক সপ্তাহ ধরেই সোভিয়েত জাহাজগুলি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ভারত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’

টোকিও থেকে পিটিআই জাপানের প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক সংবাদ উদ্ধৃত করে আরও জানায়, ‘আজ সকালে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী একটি সোভিয়েত জাহাজ ও একটি রণতরী জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত ও কোরিয়া বদ্বীপের মধ্যবর্তী সুশিমা প্রণালী অতিক্রম করেছে। সম্ভবতঃ তাদের গন্তব্যস্থল ভারত মহাসাগর।’

`প্রতিরক্ষা দপ্তরের অফিসাররা জাপানের রিপোর্টারদের বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর সোভিয়েতের একটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ফ্রিগেড ও ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন সুশিমা প্রণালী দিয়ে একই দিকে অগ্রসর হয়েছে।  জাপানের সরকারি মহলের অনুমান, সোভিয়েত নৌবহর সম্ভবতঃ বঙ্গোপসাগরের দিকেই চলেছে। জাপানের সরকার মার্কিন নৌবহরের বঙ্গোপসাগর যাত্রা সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি। তবে তাদের বিশ্বাস মার্কিন নৌবহরের দিকেই সোভিয়েত নৌবহর চলেছে।’

সম্পাদকীয় নিবন্ধে নিয়াজিকে তুলোধুনো

জঙ্গিশাহীর অত্যাচার জর্জরিত ঢাকা-হাজার হাজার নরনারীর রক্তলাঞ্ছিত ঢাকা-মানবতার কবরভূমি ঢাকা আজ গণতন্ত্রী শক্তির পদভারে কম্পমান। পাক সেনাপতি লেঃ জেনারেল নিয়াজি দিশেহারা। তাঁর মুখে নেই যুদ্ধের আকাশচুম্বী স্পর্ধা। তিনি চাচ্ছেন অস্ত্র সম্বরণ। স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন জেনারেল মানেকশ’। অস্ত্র সম্বরণের সঙ্গে থাকা চাই আত্মসমর্পণ। নইলে এ ফাঁদে পা দিবে না ভারত। উত্তরের অপেক্ষা করছেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে আরম্ভ হবে প্রচণ্ড আক্রমণ। জওয়ান এবং মুক্তিবাহিনী চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলবে ইসলামাবাদের শক্তিমত্তার পীঠস্থান। কিসের আশায় লড়বেন জেনারেল নিয়াজি? ডা. মালিক ছেড়েছেন গভর্নরগিরি। তাঁর সঙ্গে নিয়েছেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল। অবরোধ্য পাক সৈন্যরা দিতে পারেনি তাদের তাদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। নিজেরাই যেখানে ছত্রভঙ্গ কি করে তারা রক্ষা করবে অপরের নিরাপত্তা। যুদ্ধমুক্ত হোটেল কন্টিনেন্টাল এখন হতভাগ্যদের নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু সৈন্যদের আশ্রয় কোথায়? সামনে জোয়ান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গীন-আকাশে ভারতীয় জঙ্গী বিমান। আঙুলে গোনা পরমায়ুর ক’টা দিন নিয়ে ধুঁকছিলেন লেঃ জেনারেল নিয়াজি। হয়ত এখনও তাঁর মনে আছে শেষ রক্ষার গোপন সাধ। যদি নিয়াজির আত্মসমর্পণের সুবুদ্ধি আসে, ভালো কথা। নইলে চূড়ান্ত আঘাত অনিবার্য। জওয়ানদের পায়ের নীচে ঢাকা কাঁপছে। যথাসময়ে আত্মসমর্পণ না ঘটলে তার ধুলিশয্যা অনিবার্য। কেউ মুছতে পারবে না দেয়ালের এই স্পষ্ট লিখন। নিয়াজি সাবধান। চাতুরির সময় অতিক্রান্ত। আত্মসমর্পণ কর কিম্বা ধ্বংস হও। সংহার মূর্তি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে জওয়ান এবং মুক্তিবাহিনী। ওদের হুঙ্কারে ডুবে যাবে তোমার শেষ আর্তনাদ।  

লেখক: ইতিহাস গবেষক ও বার্তা২৪.কম এর পরিকল্পনা সম্পাদক

ঋণস্বীকার: ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কলকাতা।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;