বাংলাদেশের রাহুমুক্তির দিন ও অকথিত কিছু ঘটনা



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশের রাহুমুক্তির দিন ও অকথিত কিছু ঘটনা

বাংলাদেশের রাহুমুক্তির দিন ও অকথিত কিছু ঘটনা

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীর নজিরবিহীন নারকীয় নৃশংসতা চালানোর পরও আত্মসমর্পণকারী হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধবন্দি সেনাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে জেনেভা কনভেনশনে নির্দেশিত মানবিক আচরণ করেছিল মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু একটি বর্বর সেনাদলের মজ্জাগত আচরণে যে কোন পরিবর্তন হয় না, সেই প্রমাণও দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা। যার ফলে আত্মসমর্পণের পরও তারা বাঙালি এক কর্ণলকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল এবং তা নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রচেষ্টা নিতে হয়েছিল।

আমরা অন্বেষণের চেষ্টা করেছি, একাত্তরের সেই উত্তাল দিনগুলির অনেক ঘটনাপ্রবাহে আরও নূতন কিছু জানবার। মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসুদের জন্য সেই সময়ের ভারতীয় গণমাধ্যমের বিরল কিছু প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় নিবন্ধে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি।

কলকাতার তৎকালীন প্রভাবশালী দৈনিক (অধুনালুপ্ত) যুগান্তর ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ ‘রাহুমুক্ত বাঙলাদেশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে মর্মস্পর্শী এক আখ্যান রচনা করে। দৈনিকটি সেই সম্পাদকীয়তে লেখে, ‘বাংলাদেশ শান্ত। তার সব রণাঙ্গন স্তব্ধ। জওয়ানদের শাণিত অসি কোষবব্ধ। তাদের কামানের মুখ থেকে আর মৃত্যু বেরিয়ে আসবে না। মুক্তিবাহিনীর রণহুঙ্কারে আর পাকদুষমনদের বুক কেঁপে উঠবে না। নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করেছেন লেঃ জেনারেল নিয়াজী। যাঁরা এতদিন বাংলাদেশে চালিয়েছে গণহত্যা এবং নারীধর্ষণ, তারা ভূলুণ্ঠিত। মার্কিন সপ্তম নৌবহর রক্ষা করতে পারেনি তাদের।’


মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের মানবিক সত্ত্বার পরিচয় মেলে ধরে ওই সম্পাদকীয়তে আরও লেখা হয়, ‘জওয়ান ও মুক্তিযোদ্ধারা মানুষমারা যন্ত্র নয়। গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেমেছিল তারা লড়াই-এর ময়দানে। তাদের বিজয় সম্পূর্ণ। দখলদার বাহিনীর হৃদ্পিণ্ড ঢাকা আজ রাহুমুক্ত। যেখানে উড়ত নরপশু ইয়াহিয়ার ঘৃণিত পতাকা, সেখানে উড়ছে স্বাধীন বাংলাদেশের জয়ধ্বজা। লক্ষ লক্ষ নরনারী তাকে জানাচ্ছে সেলাম। পদানত শত্রু বিজয়ীর কৃপা-ভিখারী। জেনেভা কনভেনশনের যুদ্ধ-বন্দীর মর্যাদা পাবে ওরা। যারা চালিয়েছে নিরস্ত্র জনতার উপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের ভাগ্যে জুটবে মানবতার উদার ব্যবহার। বর্বর পশ্চিম পাকিস্তান নয়, ভারত এবং বাংলাদেশ। তারা দিয়েছে জেনেভা কনভেনশন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি। এ-প্রতিশ্রুতির খেলাপ হবে না।’

পাকিস্তানের বর্বরতার অনুপুঙ্খ বিবরণও ফুটে উঠে তাতে, ‘মনে পড়ে গত ২৫শে মার্চের বিভীষিকার কথা। পাক ঘাতকদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ। মনে পড়ে টিক্কা খানের নারকীয় তাণ্ডবের কথা। জন জনপদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কত ধর্ষিতা নারী আকুল হাহাকারে বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। মনে পড়ে গৃহতাড়িত মানুষের মিছিল। তারা চলছে। দৃষ্টি ভারত-সীমান্ত। এখানে এলে তারা পাবে নিরাপদ আশ্রয়। এই সর্বহারার মিছিলগুলোও নিস্তার পায়নি ইয়াহিয়ার নেকড়েদের কবল থেকে। যখন-তখন চলেছে তাদের উপর মেশিনগানের গুলি। এক সর্বনাশা হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছিল জানোয়ারগুলো। কোথায় আজ তাদের রণহুঙ্কার। সব আস্ফালনের অবসান ঘটেছে। ওরা কৃপা প্রার্থী।’


আত্মসমর্পণের পরেও বদলায়নি হানাদারদের চরিত্র

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোড়াপত্তনের পর থেকে এর সেনাদের যে উগ্রতার শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল পরবর্তী সময়গুলোতেও তাদের চরিত্রে তার স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ লক্ষনীয়। বিশেষ করে পাক সেনাবাহিনীর সেনাধ্যক্ষদের নৈতিক মূল্যবোধে সামান্যতম পরিচয় মেলেনি। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাদের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে সর্বস্ব খুইয়েও তাদের সামান্য আত্মশুদ্ধি যে আসেনি তার একটি বড় প্রমাণ সেই সময়ের যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে।

২০ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ প্রকাশিত যুগান্তরে সুখরঞ্জন সেনগুপ্তের সেই প্রতিবেদনে প্রকাশ, ‘আত্মসমর্পণকারী পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি বিরাট অংশ অস্ত্র সমর্পণ না করায় এবং গত সন্ধ্যায় পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিকেরা তাদের ব্যারাক থেকে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন কর্ণেলকে হত্যা করার চেষ্টা করলে কাল রাত্রে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্রচণ্ড উত্তেজনা দেখা দেয়। মুক্তিবাহিনীর একটি প্লাটুন ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কর্তৃপক্ষ অনেক চেষ্টা পর তাদের নিবৃত্ত করে।’

‘এই ঘটনার পর আজ সকালে ক্যান্টনমেন্টে গলফ কোর্সে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিতে আরম্ভ করেছে। আজ যাদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নেওয়া হয়, তারা সকলেই লেফটেন্যান্ট থেকে বিগ্রেডিয়ার পর্যন্ত অফিসার শ্রেণির লোক। জানা গেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় এক লক্ষ অফিসার ও সৈন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় কমান্ডারদের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধান মিত্র ভারতের জনগণের মাঝে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে ঘিরে তা ইতিহাসে বিরল। অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মিলের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে এক দেশ হওয়ার কারণেই বোধহয় এই পরম মমত্ববোধ সেদিন দেখা দিয়েছিল ভারতের জনগণের মাঝে।


‘আসুক সপ্তম নৌবহর, আসুক চীনারা-মা ভৈঃ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ধরা দিয়েছে তারই প্রতিচ্ছবি। সেই প্রতিবেদনে প্রকাশ, ‘সাধারণ মানুষের মনোবল আজ কি উচ্চ পর্যায়ে উঠেছে-ট্রামে-বাসে কান পাতলে তা বোঝা যায়। মঙ্গলবার আমেরিকার সপ্তম নৌবহর ও চীনাদের সৈন্য চলাচল নিয়ে উত্তেজিত আলোচনা চলেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেল, একটু ভীরু প্রকৃতির লোক চিরাচরিত অভ্যাসমতো কথাটার অবতারণা করেছেন এইভাবেঃ সবই তো হল, ঢাকাও না হয় মুক্ত হল, কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ বাধে যে!’

গল্পচ্ছলে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদেনে আরও প্রকাশ, ‘কি রকম?/কাগজে দেখেন নি মার্কিন নৌবহর আর চীনারা তৈরী হচ্ছে।/তাতে কি হল?/তাতে কি হল কি মশাই, তাতে সবই হল। দুই সাক্ষাৎ নামলে আর রক্ষে আছে?/কি করবে, যুদ্ধ?/বলা বাহুল্য হাওয়া খেতে তো আসবে না।/ঐ হাওয়া খেয়েই যেতে হবে।/বলেন কি, আমেরিকা!/হ্যা হ্যা, ওটা গোদাপায়ের লাথি!

‘‘জানেন না গল্পটা?/না তো।/শুনুন তবে। ধরুন হাওড়ার পুলের কোন এক প্রান্তে একটি লোক বসে আছে। তার একটি পায়ে ভয়াবহ গোদ। সে লোকের কাছে ভিক্ষে চাইত। না দিলে বলত, মারব গোদা পায়ের লাথি। লোকে ভয়ে এক আধটা পয়সা দিয়েই দিত। একদিন এক বেয়াড়া লোক বলল, মার দেখি তো তোর গোদাপায়ের লাথি। লোকটাও চটেমটে সবকিছু ভুলে উঠল, ভারী পা-টা তুলতেই নিজেই টাল খেয়ে পড়ে গেল।’’

‘‘যিনি প্রশ্ন করেছিলেন, তিনিও চটেমটে বললেন, কি কথায় কি কথা।/যিনি জবাব দিচ্ছিলেন, তিনি বললেন, বেশ তবে মিলিয়ে দেখুন গোদাপ উত্তর ভিয়েতনামের উপর মার্কিন হামলাটা।/কি হয়েছে?/কি হয়নি তাই বলুন। একে বারে যারে বলে ন্যাজে-গোবরে। এখন ছেড়ে দে মা-কেঁদে বাঁচি। প্রচারের হিসেবটা যদি মানতে হয়, তবে তো এদ্দিনে উত্তর ভিয়েতনাম পাউডার হয়ে যাওয়ার কথা, একটা প্রাণী কেন; একটা ঘাসেরও অস্তিত্ব থাকা উচিত ছিল না। কিন্তু আশ্চর্য ওরা বেঁচে আছেন এবং প্যারিসে যখন শান্তি বৈঠক বসল ওরা ডাঁটের মাথায় মার্কিনী কুটনীতিকদের নাস্তানাবুদ করে তুললেন।’’

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;