রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন যেসব দেশ

  • আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন যেসব দেশ

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন যেসব দেশ

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানুষের মুক্তির লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই- চলে এসেছে সমান্তরালে। স্বাধীনতা মানুষের জন্য চরম আরাধ্য এক চাওয়া; পরম পাওয়া। প্রাচীণকাল থেকে মানুষ স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকেও তুচ্ছ করে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ১৯৫টি স্বাধীন দেশ রয়েছে। তার মধ্যে ১৯৩টি তাদের সদস্য। বাকি দুটি পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে রয়েছে। এছাড়াও ৬টি দেশ আছে যাদের আংশিক স্বীকৃতি রয়েছে। সবমিলিয়ে ২০৬টি দেশ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বে দুইশতাধিক স্বাধীন দেশ থাকলেও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে দশটি দেশ। আমরা জানবো তাদের স্বাধীনতার ইতিহাস-

বাংলাদেশ

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর কাঙ্খিত বিজয় লাভ করে মুক্তিকামী জনতা। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।


আমেরিকা

১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত আমেরিকানরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে ব্রিটেনের বিপক্ষে। ১৭৮৩ সালে স্বাধীন হয় আমেরিকা। উত্তর আমেরিকার ১৩টি কলোনি ১৭৭৬ সালের জুলাই মাসে ব্রিটেনের  বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। লাগাতার ৭ বছর যুদ্ধের পর ফরাসি ও জর্জ ওয়াশিংটনের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে ব্রিটিশ সেনারা। প্রতি বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে মার্কিনিরা।

ইরিত্রিয়া

ইথিওপিয়ার বিরুদ্ধে ৩০ বছরের যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা লাভ করে ইরিত্রিয়া। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দুইপক্ষের লড়াই চলে। তারও দুই বছর পর ১৯৯৩ সালে একটি গণভোট আয়োজন হয়। ইরিত্রিয়া অবশেষে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইরিত্রিয়া একটি একক একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র যেখানে জাতীয় আইনসভা এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।

আলজেরিয়া

ফ্রান্স থেকে ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে আলজেরিয়া। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর এই যুদ্ধ চলে। ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনকে হটিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আলজেরিয়া আত্মপ্রকাশ করে। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল কোন ইউরোপীয় শক্তি ও তার উপনিবেশের মধ্যে সংঘটিত দীর্ঘতম যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এতই দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল ছিল যে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীল থাকা হুমকির মুখে পড়েছিল। ‘আলজেরীয় জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট’ নামে গেরিলা সংগঠন এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলে এই গেরিলা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধে ৫ লক্ষ আলজেরীয় নিহত হন।


বেলজিয়াম

নেদারল্যান্ডস থেকে ১৮৩০ সালের নভেম্বর মাসে স্বাধীনতা লাভ করে বেলজিয়াম। উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধের স্থায়ীত্ব ছিল দশ দিন। মূলত ১৮৩০ সালের আগস্ট মাসে ব্রাসেলস শহরে এক গণ-অভ্যুত্থান ঘটে। ধীরেধীরে তা অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। নেদারল্যান্ডের সামরিকবাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে আসলে জনতা তাদের ধাওয়া করে। এরপর ৪ অক্টোবর বেলজিয়ামের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

হাইতি

লাতিন আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ হাইতি। দেশটির পূর্ব নাম ‘সেইন্ট- ডোমিঙ্গ’। হাইতি দেশটি প্রথমে স্পেন ও পরবর্তীতে ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে ১৭৯১ সালের ২২ আগস্ট বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮০৩ সালের ১৭ নভেম্বর হাইতির জনগণ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এরপর ১৮০৪ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।

শ্রীলংকা

এশিয়ার দীর্ঘতম গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয় শ্রীলঙ্কায়। দেশটি ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৮১৫ সালে কান্দিয়ান যুদ্ধের পর ‘সিলন’ নামের দ্বীপটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে একত্রিত হয়। ভারত সাগর দ্বারা বেষ্টিত দ্বীপটিতে ঔপনিবেশিক শাসন শুরুর সময়ের মধ্যে দুটি বিদ্রোহ হয়। ১৮১৮ সালে উভা বিদ্রোহ এবং ১৮৪৮ সালে মাতালে বিদ্রোহ নামক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দুটি সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। অবশেষে ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা লাভ করেছিল।

চিলি

চিলি দেশটি স্বাধীনতার পূর্বে স্পেনের উপনিবেশ ছিলো। দীর্ঘ আট বছর যুদ্ধের পর ১৮১৮ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১২ ফেব্রুয়ারি দেশটির স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উদযাপিত হয়। দেশটির নেতা হোসে ডে স্যান মার্টিনের নেতৃত্বে স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয় ১৮১০ সালে। আর সে যুদ্ধের সমাপ্তি হয় ১৬ বছর পর ১৮২৬ সালে। স্বাধীনতা ঘোষণার ৮ বছর পর চিলি মুক্ত হয়। স্পেনীয় বাহিনী তখন চিলির আর্কিপেলাগোয় আত্মসমর্পণ করে। ১৮৪৪ সালে স্পেন চিলিকে স্বীকৃতি দেয়।

বলিভিয়া

সমসাময়িক সময়ে আরেকটি লাতিনে আরেকটি যুদ্ধ বাঁধে বলিভিয়া। তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় ১৮০৯ সালের দিকে। এটিও ছিল স্পেনের একটি উপনিবেশ। তবে ১৮২৫ সালে স্প্যানিশ রাজকীয় বাহিনীর জেনারেল পেড্রো অ্যান্তোনিও অলানেতারের মৃত্যু হয়। স্পেনের এই পরাজয়ের মাধ্যমে বলিভিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।