ইতিহাস ঐতিহ্যের শতবর্ষী বটগাছ
শতবর্ষী বটগাছ! শুনতে অবাস্তব মনে হলেও বাস্তবে শতবর্ষী বটগাছের দেখা মিলল পর্যটন নগরী কুয়াকাটায়। গাছটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অলংকার। বর্তমানে গাছটিকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে।
হাওয়া বদলের এই মৌসুমে একবার ঘুরে আসতে পারেন কুয়াকাটা থেকে। শরীর ও মন ভালো হবে। প্রশান্তি খুঁজে পাবেন শতবর্ষী বটের ছায়ার মায়ায়।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রাখাইন মহিলা মার্কেটের পাশেই ১ কাঠা (তিন শতাংশ) জমির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বটগাছটি। স্থানীয়সহ আগত পর্যটকদের ধারণা শতবর্ষ অতিক্রম করেছে এই গাছটি ।
অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর দিকে গাছটির নিচে তৈরি হয় রাখাইনদের ধর্মশালা যাদি বা প্যাগোডা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বটগাছটি শুধু ইতিহাসেরই সাক্ষী নয়, পাশাপাশি কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের বিস্ময়ের একটি উপাদানও। দিন যতই যাচ্ছে ততই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি কুড়িমূল কালের পরিক্রমায় এক একটি নতুন বটগাছে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, কুড়িমূল থেকে সৃষ্টি হওয়া প্রতিটি বটগাছ তার মূল গাছের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বটগাছটির সৌন্দর্য পর্যটন নগরী কুয়াকাটাকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক দম্পতি (জাকারিয়া ও বনানী) বার্তা২৪.কে বলেন, ‘সময় পেলেই আমরা কক্সবাজার এবং মাঝে মাঝে কুয়াকাটা ঘুরতে আসি, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটার চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই। কুয়াকাটায় ঘুরতে ঘুরতে আমাদের চোখে পড়ল শতবর্ষী বটগাছটি। স্থানীয়দের কাছে জানতে পারলাম, এখানে নাকি রাখাইনদের প্যাগোডা ছিল । সচরাচর শতবর্ষী গাছ দেখা যায় না। গাছটি সঠিক পরিচর্যা দরকার বলে আমি মনে করি।’
স্থানীয় ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ রাখাইন (মংচুমিন) বার্তা ২৪.কে বলেন, ‘আমরা জন্মের পর থেকেই গাছটিকে দেখতে পাচ্ছি। এখানে আসতাম প্রার্থনা করতে। একটি পিতলের মূর্তি ছিল। কালের পরিক্রমায় সেটা হারিয়ে গেছে। আমরা নতুন মন্দির করেছি পূজা করতে। কিন্তু এই গাছটির কেউ কোনো পরিচর্যা করি না। শতবর্ষী গাছটিকে সঠিক পরিচর্যা করলে পর্যটকদের আকর্ষণে আরো একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করি।’
ট্যুর অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক)সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বার্তা ২৪.কে বলেন, ‘রাখাইনদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে রেখেছে এই শতবর্ষী গাছটি। কুয়াকাটার নামের সাথে রাখাইনদের নাম জড়িত। রাখাইনদের কৃষ্টি, কালচার, ইতিহাস ঐতিহ্য পর্যটকদের আকর্ষণের একটি বিষয়, তেমনি এই শতবর্ষী গাছটি যদি সঠিক পরিচর্যা করা যায় তাহলে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হবে জায়গাটি।’
কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের উপাধ্যক্ষ এবং স্থানীয় রাখাইনদের মন্দিরের পুরোহিত (ইন্দ্র মংশু বিক্ষু) বার্তা ২৪ কে বলেন, ‘এটা হচ্ছে বটবৃক্ষ বা বধিবৃক্ষ, আমাদের বৌদ্ধ ধর্মের পূর্বপুরুষরা ১৭৮৫ সালে ধাতু দিয়ে বুদ্ধের মূর্তি নির্মাণ করেছিল। তারপর নির্মাণ করেছিল প্যাগোডা। সেখানেই ছিল বটগাছ। আস্তে আস্তে এই গাছ প্যাগোডাকে ঘিরে ধরে। জায়গাটা আমাদের বৌদ্ধ বিহারের ভিতরে ছিল, কিন্তু জায়গাটা পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করায় চেষ্টা করেও গাছটার পরিচর্যা করতে পারি না। শতবর্ষী গাছটি পরিচর্যার পাশাপাশি যদি প্যাগোডা নির্মাণ করা যায় তাহলে আমরা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে পারব।’