কুয়াশা ভেজা সবুজ মাঠে হলুদের সমারাহ
দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে পুরো এলাকা জুড়ে হলুদ গালিচা বিছানো রয়েছে। চারিদিকে হলুদের সমারোহে প্রকৃতি যেন সেজেছে নতুন রুপে।
কুয়াশা ভেজা মাঠে শীতের হিমেল হাওয়ায় হলুদ ফুলগুলো দোল খেলছে। কাছে যেতেই দেখা মেলে সরিষার ফুলের। বগুড়ার মাঠগুলো এখন হলুদ রঙে সেজেছে। কুয়াশার জলরাশি ভেদ করে সবুজ মাঠের দেশে এখন হলুদের সমারাহ।
শীত যতটা বাড়বে ততই সরিষার ফলন বাড়বে বগুড়ায়। এদিকে চাষীরা স্বপ্ন নিয়ে বুক বেঁধে আছে ভাল ফলন পাওয়ার আশায়। চলতি রবি মওসুমে বগুড়া জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলন আশা করছেন তারা।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কৃষকের ঘরে উঠবে সরিষা। বগুড়ার কাহালু, নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, শেরপুর, সারিয়াকান্দি, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলা ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাঠের পর মাঠ চাষীরা ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করেছেন।
রবি মৌসুমে আলুর বদলে উন্নত মানের সরিষার বীজ বপন করেছেন। মাত্র ৭৫ দিনের এ ফসলটিতে তেমন সেচও দিতে হয় না। বপনের সময় মাটির নিচে সামন্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দেওয়ার পরেই ভালো ফলন পেয়ে থাকেন চাষীরা। এক বিঘা জমি চাষ করতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মত খরচ হয়। সরিষা বিক্রির পর সব খরচ বাদে ৮ থেকে ১০হাজার টাকা লাভ হয়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছিল ৪৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে তাই আবাদি জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর। এ হিসেবে গত বছরের চেয়ে ৮ হাজার ৮৪ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা আবাদের প্রত্যাশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। আর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ১১২ টন। তবে আবাদি জমি বাড়ায় এ বছর জেলায় এক লাখ টন সরিষা উৎপাদন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তারা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে কম খরচ, কম শ্রম এবং দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। যে কারণে চাষিরা সরিষা আবাদে লাভ বেশি পায়।
সরিষার দামও ভালো পাওয়ার আশা করছেন এ জেলার চাষিরা। মোল্লা নামের এক চাষী বলেন, মানুষ এখন সরিষার তেল খাচ্ছে বেশি। সরিষা তেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে সরিষার দাম এখন বেশ ভালো। বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে এবারও ভালো আয় হবে সরিষা বিক্রিতে।
শেরপুর উপজেলার সরিষা চাষি মামুন জানান, তিনি ৬ বিঘা জমিতে দেশী জাতের সরিষা রোপন করেছেন। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পরামর্শক্রমে এ ফসলের ভালো ফলন আশা করছেন তিনি। মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুল ফুটেছে। আরও কয়েকদিন পর সরিষা মাড়াই করা যাবে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২২ হাজার বিঘা জমি বেশি। ইতিমধ্যে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ জমিতে চাষ শেষ হবে। এ বছর বগুড়ায় ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ মণ সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭৫ মণ বেশি। তিনি বলেন আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ফলন আরো বাড়তে পারে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।