ঘর-বাড়ি, সঞ্চয় বিক্রি করে ‘সমুদ্রযাত্রায়’ বৃদ্ধ যুগল!
একটু মাথা গোজার ঠাঁই, আর কিছু সঞ্চয় এবং সম্পদ; শেষ জীবনের জন্য এটুকুই করে মানুষ। এগুলো নিয়েই শেষ বয়সে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মানুষ। তবে প্রচলিত এই প্রথা ভেঙে বৃদ্ধ বয়সে দুঃসাহসিক অভিযানে নেমেছেন এক দম্পতি।
ফ্লোরিডার বাসিন্দা জন (৭৬) এবং মেলোডি (৬৪)-এই যুগলের সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই। বাড়ি ও ব্যবসাসহ প্রায় সব সম্পত্তিই তারা বিক্রি করেছেন আরও ৩ বছর আগেই। বাকি জীবনটা তারা জাহাজে কাটিয়ে দেবেন। এখন তারা পৃথিবী ভ্রমণ করছেন।
কম বয়সে দূরে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখে। কিন্তু, এই বয়সে এই যুগলের এমন সিদ্ধান্ত আসলেই প্রশংসনীয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাধারণ জীবনযাপনের তুলনায় তাদের সমুদ্র-জীবন ঢের সাশ্রয়ী হবে। এই তথ্যেই টনক নড়ে উঠেছে সবার।
প্রথমে তারা মোটরঘর কিনেছিলেন। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এক সময় গাড়ি চালিয়ে জন ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এরমধ্যেই তারা ফেসবুকে রাজকীয় জাহাজ ভ্রমণের বিজ্ঞাপন দেখেন। যা ২৭৪ দিন চলবে। ব্যাস! তাদের সমুদ্রজীবনের সূচনা হলো এভাবেই। তারা এখন ডোমিনিকানে ভ্রমণে মত্ত রয়েছেন। স্থলভ্রমণের এটিই শেষ অংশ। শিগগিরই তারা সমুদ্র-ভ্রমণে বের হবেন।
জন বলেছেন, টেলিফোন, জাহাজ এবং কিছু ক্রেডিট কার্ডের বিল- এছাড়া আর কোনো খরচের বালাই নেই। আগে আমাদের বন্ধকী, গাড়ি-বাড়ির বীমাসহ অনেক খরচ ছিল। এখানে বরং খরচ আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক হবে।
২০২৪ অবধি তারা জাহাজেই ভ্রমণ করেবেন। এরপর ‘ভিলা ভিয়ে’র আবাসিক ক্রুজে যাত্রা শুরু করবেন। সেখানে শতকরা ৩০ ভাগ বাসিন্দাই স্থায়ী যাত্রী। শুনে নিশ্চয়ই এমন ভ্রমণে যাওয়ার কথা ভাবছেন? তবে, ‘ভিলা ভিয়ে‘র খরচ নেহাত কম নয়!
জাহাজের ভেতরের কেবিনের খরচ ৯৯ হাজার ইউএস ডলার থেকে শুরু। ব্যালকনিসহ কেবিনের খরচ ২ লাখ ৪৯ হাজার ইউএস ডলার। সাথে ৮ হাজার ডলার মাসিক ভাড়া। একে অন্যান্য ক্রুজ জাহাজের তুলনায় বড় আকারে তৈরি করা হচ্ছে। জন এবং মেলোডির ইচ্ছা আগামী ১৫ বছর তারা এই কেবিনে থাকবেন। তাই, নিজেদের বাড়ির মতো করেই সাজিয়েছে। তারা বেলকনিসহ একটি কেবিন কিনেছেন। এখানে বসেই সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যাবে।
জাহাজের সিইও মিকেল পিটারসন বলেছেন, এখানে যারা আছেন তারা সকলেই সমুদ্রযাত্রা পছন্দ করেন। তাই, তাদের জন্য শেষ না হওয়া এক সমুদ্রযাত্রার আয়োজন করেছি। পোর্টের অর্থ প্রদান করার পর তারা চাইলে বিনা অর্থে পরিবারকে নিমন্ত্রণ করতে পারবে। জাহাজে একটি হাসপাতালও রয়েছে যেন অসুস্থদের সেবা প্রদান করা যায়।
তিনি আরও বলেন, “আমরা বন্দরে ৩ থেকে ৫ দিন অবস্থান করি। তাই কেউ যদি বাড়ি ফিরতে চায় সেই সুযোগও থাকবে। আবার চাইলেই জাহাজ-বাড়ি’তে ফিরে আসতে পারবে। জনের ছেলে(৫৪) এবং মেলোডির মেয়ে(৪৩) তাদের বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখবে। তারা চাইলে এসে বেড়াতেও পারবে। তাদের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা সবাই জলমানব এব সমুদ্রে থাকতেই ভালোবাসি।”
তথ্যসূত্র: স্কাই নিউজ