ডাক্তার বলেছিল, ‘হাঁটতে ও কথা বলতে পারব না’- ভোগের মডেল এলি!
২০০১ সালের ১৮ ডিসেম্বর, যুক্তরাজ্যের এসেক্সের এলফোর্ডে জন্ম হয় এক শিশুর। যার নাম এলি গোল্ডস্টেইন। ডাক্তাররা বলেছিলেন তিনি কোনো স্বাভাবিক শিশু নন। “ডাউন সিন্ড্রম” নামক জেনেটিক রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন এলি। এর প্রভাবে তিনি কখনো হাটতে বা কথা বলতে পারবেন না। নিঃসন্দেহে অন্য সাধারণ শিশুদের চেয়ে ভিন্ন ছিল এই শিশু। ডাক্তারদের কথা মিথ্যা প্রমাণ করে, দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি।
এলির বয়স এখন ২২ বছর। ডাক্তারদের সেই ভবিষ্যতবাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এলি এখন যে শুধু হাঁটেন- তাই নয়, রীতিমতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে র্যাম্পওয়াক করেন। বিখ্যাত ব্র্যান্ড ভোগে’র প্রচ্ছদে ফিচার মডেল হয়েছেন তিনি। “এগেইনস্ট অল অডস” নামে আত্মজীবনীও প্রকাশ করেছেন এই বছর।
সম্প্রতি তার জন্মস্থান ‘এসেক্স’-এ তিনি নিজের জন্য একটি বাড়িও কিনে ফেলেছেন। আগে কখনো ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে এমন মডেলের ছবি নজরে পরেনি। তাই মডেলিং-এর প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও, জড়তা ছিল তার মধ্যে। কে জানতো? তার স্বপ্নই প্রচলিত বাঁধ ভেঙে, আকাশচুম্বী সফলতা এনে দেবে তাকে!
লন্ডন ফ্যাশন উইকে এবছর ৩ বার ক্যাটওয়াক করেছেন তিনি। চ্যালেন ফোর-এ তার এজেন্সি সম্পর্কে একটি ডকুমেন্টরির শ্যুাটিংও করেছেন। তবে এলির মতে সবচেয়ে বিশেষ হলো তার নিজের বই প্রকাশ করতে পারা। ডাউন সিন্ড্রম থিমের প্রথম বার্বি পুতুল নিয়ে ফটোশ্যুট করেছেন এলি। এতে অনেক গর্ববোধ করেন তিনি।
এলির মা ইভান জানিয়েছেন, এলির জন্মের পর রোগের কথা শুনে তারা অবাক হয়ে যান। চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দেন মেয়েকে হাসপাতালেই রেখে যেতে। তার পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে, অনেক সাহস জোগাড় করেছেন এলির বাবা-মা ও বড় বোন এমি।
মাত্র ৫ মাস বয়েসেই এলির হৃদয়ে অস্ত্রপাচার করাতে হয়। ১০ ঘন্টা ধরে অপারেশন করে শিশুর হৃদপিন্ডের ছিদ্র বন্ধ করা হয়। এর ৩ সপ্তাহ পর এলিকে বাড়ি নিয়ে যায় তারা। মেয়ের সুস্থতাকে এলির বামা-মা দুইজনই প্রাধান্য দিয়েছেন।
ডাক্তারদের ভুল প্রমাণ করে ১৮ মাস বয়সে এলি ১ম কদম ফেলতে সক্ষম হয়। তৃতীয় জন্মদিনের পর সে কথাও বলতে শুরু করে। স্কুল শুরু করার সময়ে দেখা যায়, পড়তেও অসুবিধা হচ্ছে না তার। তবে, এরপর তাকে স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করানো হয়।
এলি কিশোরী হওয়ার পর, তাকে রোগের ব্যাপারে বলার সিদ্ধান্ত নেয় তার বাবা-মা। তার প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে চিন্তিত ছিলেন। মেয়ের আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে যাবে- এমন ভয় পাাচ্ছিলেন তারা। তবে তাদের ভুল প্রমাণ করে, এলি সাহসের সাথে নিজেকে মেনে নিয়েছে। কোনো অংশে নিজেকে ‘কম’, মানতে নারাজ সে।
ইভান আরও জানান, একদিন তার বন্ধু ‘জেবেদী’ নামে একটি নতুন প্রতিভা সংস্থার কথা বলে। যারা প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের সাথে কাজ করতে চায়। এলির জন্য তার মা আবেদন করেন। সেখানে এলিকে ২০১৮ সালে ‘সুপারড্রাগ ক্রিসমাস’ বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে বেছে নেওয়া হয়। সেই থেকেই তার নতুন যাত্রা শুরু হয়।
এলি নিজের কাজের প্রতি অনেক মনোযোগী। এই কাজকে সে ভালোবাসে। এখন শিক্ষাবর্ষের শেষ পর্যায়ে আছেন এবং ভবিষতের পরিকল্পনা করে রেখেছেন তিনি। কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, অনেক কিছু শিখতেও চান। একদিন নিউ ইয়র্কে ক্যাটওয়াক করা এবং স্টেজে নাচ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
তার বাড়িটি সম্পূর্ণ নিজের আয় করা অর্থে কেনা। তাকে একা রাখতে তার বাবা-মা সাহস পায় না। তাই তারা এখনো মেয়ের সাথেই থাকছেন। তবে মেয়েকে আরও স্বাধীনচেতা করে তোলার চেস্টাও করে চলেছেন। তারা আশা করেন, এলির জন্মের পর এই রোগের প্রতি সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে। এখনো মানুষের মধ্যে ডাইন সিনড্রম ধারীদের নিয়ে চিন্তাভাবনায় অজ্ঞতা রয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি