লাভ কম, ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুরের রস সংগ্রহ গাছিদের
পৌষের শেষ দিকে এসে বেড়েছে শীত। শীতের এই তীব্রতার মধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় গাছিদের মধ্যে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহের তোড়জোড়। মাঠের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ থেকে শীত মৌসুমে উপজেলার কয়েক হাজার গাছি রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদন করে থাকেন।
গাছিদের ভাষ্য, পরিশ্রমের তুলনায় লাভের পরিমাণ কম, তবু তারা রস সংগ্রহ করছেন যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্য সূত্রেই। পরিবারের সদস্যদের জন্যে তারা রস সংগ্রহ করছেন, বলছেন কেউ কেউ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন খেজুর গাছ কমে গেছে। আগে উপজেলার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে রস-গুড় উৎপাদন হতো, তবে এখন ভিন্ন চিত্র অনেকটাই। গাছিরা এখন খেজুরের রস উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। রস সংগ্রহে অধিক পরিশ্রমের তুলনায় উপার্জনের পরিমাণ কম হওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেকের মধ্যে রস-গুড় উৎপাদনে তেমন আগ্রহ নেই, অভিমত তাদের।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পৌষ- মাঘ (ডিসেম্বর- জানুয়ারি) এ দুমাসেই সাধারণত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। এবারও তাই।
ঐতিহ্য ধরে রাখছি উল্লেখ করে উপজেলার মৌডুবী এলাকার ৭০ বছরের বৃদ্ধ-গাছি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এক সময়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করা গেলেও এখন শুধু নাতিদের জন্যই গাছ কাটি। পরিশ্রমের তুলনায় লাভ একেবারে কম।
রস সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে পরিশ্রমের উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমে গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে এই গাছ পরিষ্কার করতে হয়। গাছ পরিষ্কার করার পর ১৫-২০ দিন পর গাছ ছাঁটতে হয়। তারপর ছাঁটা যে অংশে রস নিঃসরণ হয় সে অংশে ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা চিকন বাঁশের কঞ্চির আধা ইঞ্চি ঢুকিয়ে দিতে হয়। সর্বশেষ কাঠির মধ্যে দিয়ে ফোটায় ফোটায় নির্গত রস গাছে ঝুলানো ছোট-বড় হাঁড়িতে সংগ্রহ করা হয়।
গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এরপর আবার হালকা ছেঁটে পুনরায় রস সংগ্রহ করা যায়, জানান তিনি।
উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের গাছি মারুফ (৬০) মূর্ধা জানান, আমি এ বছর ৭০-৮০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেছি। বছরে ৮০-৯০ হাজার টাকার রস সংগ্রহ করেন তিনি, তবে পরিশ্রমের তুলনায় লাভ খুব কম।
তিনি জানান, বছরের এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। সাধারণত ঠান্ডা আবহাওয়া, কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে পর্যাপ্ত রস পাওয়া যায় এবং এর স্বাদও ভালো হয়। তাপমাত্রা বাড়লে খেজুর গাছ হতে নির্গত রসের পরিমাণ কম হয় আর স্বাদও হারিয়ে যায়।
কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খেজুরের রসের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাই রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সর্তক থাকার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।