৩৫ বছর পর নিরপরাধ হওয়ার প্রমাণ: ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত সরকার
সম্মান ও সময়- এর চেয়ে মূল্যবান কিছুই নেই। মানুষ অর্থের অভাব হলেও বাঁচতে পারে। কিন্তু সম্মান এবং সময় চলে গেলে, জীবন রস নিংড়ে ফেলে দেওয়া ফলের খোসার মতো হয়ে যায়।
লুইস রাইট নামের এক ব্যক্তি, জীবনের প্রায় সকল কিছুই হারিয়ে ফেলেছেন। অর্ধেকের বেশি জীবনকাল, তিনি সমাজে অকারণে অপরাধী হয়ে থেকে গেছেন। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮৮ সালে । ৩০ বছর বয়সে, তাকে একটি শিশুর উপর যৌন হয়রানী করার কারণে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। অনবরত নিজেকে নিরপরাধ দাবী করেও লাভ হয়নি। অবশেষে গত বছর নভেম্বর মাসে ছাড়া পেয়েছেন লুইস। এতবছর পর ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো, মিথ্যার উপর সত্যের জয় চিরন্তন।
নেহাত সন্দেহের বশেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করে জেলে প্রেরণ করা হয়েছিল। ঘটনাটি দক্ষিণ মিশিগানের ছোট শহর আলবিয়নের। ৩৫ বছর আগে ১১ বছর বয়সী শিশুর উপর যৌন হয়রানির মামলা হয়। মিথ্যা মামলায় জেল খাটার কারণে, মিশিগান রাজ্য-আদালত থেকে রাইটকে ১.৭৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার দেওয়া হবে।
মিশিগানের কারাগারে যারা নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে খালাস পান, তাদের জন্য এই নিয়ম রয়েছে। নির্দোষদের প্রতি বছরের জন্য ৫০ হাজার ডলার করে দেওয়া হবে। কঠোর আইন মানদণ্ডের কারণে অনেকসময় অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসার এই ভাতা রোধ করে দেন। তবে, রাইটের মামলায় তৎক্ষণাৎ টাকা দেওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। গত বুধবার বিচারক এই অনুমতি প্রদান করেছেন।
রাইটের আইনজীবী উল্ফ মুইলার বলেন, ‘৩৫ বছরে নষ্ট হওয়া এই সময়, লাঞ্ছনা, অপবাদ- কোনো মূল্য দিয়েই ক্ষতিপুরণ দেওয়া সম্ভব নয়! তার বয়স এখন ৬৫ বছর। তবে, এই বয়সেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রথম পদক্ষেপ অন্তত নেওয়া হলো!’
একজন অফ-ডিউটি অফিসার বলেছেন, রাইটকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে দেখা গিয়েছিল। তাই হামলার তদন্তকারী পুলিশ তাকে সন্দেহ করে। ‘কুলি ল স্কুল ইনোসেন্স প্রজেক্ট’ অনুসারে, পুলিশের দাবী ছিল রাইট অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। যদিও সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়নি অথবা রাইট স্বীকারোক্তিপত্রে স্বাক্ষর দেননি। ভুক্তভোগী নিজেও কখনো রাইটকে শনাক্ত করেনি।
রাইটকে ২৫ থেকে ৫০ বছরের কারাদন্ড ঘোষণা করা হয়। যদিও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে তার অনুরাধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে রাইটকে প্যারোল বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেই সাথে তাকে যৌন অপরাদ রোধ থেরাপি ক্লাসে যুক্ত হতে বলা হয়। নিজেকে নিরপরাধ দাবী করে সেই ক্লাস না করার কথা জানায় রাইট। ভুক্তভোগী নিজে রাইটকে অপরাধী হিসেবে শনাক্তও করেনি। অবশেষে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করলেন তিনি।
তথ্যসূত্র: খালিজ টাইমস