ভ্যান গাড়িতে জমজমাট পোশাকের ব্যবসা

  • গনেশ দাস,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা। দিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে রাতের সাতমাথার দৃশ্য যেন অন্য রকম। সন্ধ্যার পর থেকে ব্যস্ততম সাতমাথার চিত্র পাল্টাতে থাকে। ভ্যান গাড়িতে করে শীতের গরম কাপড় থেকে শুরু করে রকমারি পোশাকের হাট বসে সাতমাথা ও তার আশেপাশের সড়কের দুপাশ দিয়ে। হতদরিদ্র থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন এইসব রকমারি পোশাকের ক্রেতা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা মূল্যের পোশাক বিক্রি হয়ে থাকে ভ্যান গাড়ির এই ভ্রাম্যমান দোকানে।

ফুটপাতের এই ব্যবসায় কয়েক শতাধিক বেকারের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অল্প আয়ের লোকজন সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয়ে কেনা কাটা করে থাকেন। কিন্তু ভাটা পড়েছে শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণি বিতান গুলোতে। সেখানে উচ্চ বিত্ত পরিবারের লোকজন ছাড়া মধ্য বিত্ত ক্রেতা দিন দিন কমছে।

বিজ্ঞাপন

শহরের সাতমাথা ছাড়াও থানা রোড, নবাববাড়ি সড়ক, স্টেশন রোড, শেরপুর রোড, গোহাইল রোডের দুই পাশ দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ভ্যান গাড়িতে ভ্রাম্যমান দোকান বসে। এসব দোকানে ছেলে ও মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাক ছাড়াও নতুন জিন্সের প্যান্ট শার্টও বিক্রি হয়ে থাকে। দামও নাগালের মধ্যে হওয়ায় ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে দোকান গুলোতে। তবে প্রত্যেকটি দোকানেই একদাম। পুরাতন শীতের কাপড় ১০ টাকা করেও পাওয়া যায় এসব ভ্যান গাড়িতে। আবার নতুন সোয়েটার জ্যাকেট রয়েছে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।

সাতমাথায় ভ্যান গাড়িতে শীতের পোশাক কিনতে আসা রুবাইয়া ইয়াসমিন জানান, বাড়িতে নিজের এবং ছেলে মেয়েদের ব্যবহারের জন্য কম দামে সুন্দর সুন্দর গরম কিনেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভ্যান গাড়ি থেকে নিজেকে বাছাই করে নিতে অনেক সময় লেগে যায়।

বিজ্ঞাপন

সরকারি চাকরিজীবী শাহিন আলম জানান, সন্ধ্যার পর তেমন কাজ থাকে না। তাই এক দেড়ঘন্টা ঘুরে ভ্যান গাড়ি থেকে সাড়ে তিনশ টাকায় জ্যাকেট কিনেছেন। তিনি বলেন এধরনের জ্যাকেট শহরের যেকোনো মার্কেটে কিনতে ৬০০- ৭০০ টাকা লাগবে।

ভ্যানগাড়িতে শীতের পোশাক বিক্রেতা জনি জানান, তিনি আগে তৈরি পোশাকের দোকানে কর্মচারী ছিলেন। এখন নিজেই ভ্যানগাড়ি কিনে দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, বগুড়ার কয়েকজন মহাজন ঢাকার বঙ্গবাজার এবং চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক পাইকারি কিনে আনেন। এরপর বগুড়া শহরে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দেয়।

ভ্যান গাড়িতে জিন্সের প্যান্ট বিক্রেতা আল-আমিন জানায়, মহাজন তাকে প্যান্টের দাম নির্ধারণ করে দেয়। সন্ধ্যা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ভ্যানগাড়িতে প্যান্ট বিক্রি করে থাকে। আল আমিন জানায়, দর দাম করার সুযোগ নাই। বিক্রি কম-বেশী যাই হোক তার বেতন তিনশ টাকা। তবে শীত কমে গেলে এই ব্যবসাতেও ভাটা পড়ে যায়। তখন তারা আবার ফিরে যায় ভিন্ন পেশায়।

এসব দোকান থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হলেও বিপদে পড়েছেন মার্কেট গুলোর তৈরি পোশাকের দোকানীরা। শহরের রানার প্লাজার তৈরি পোশাকের দোকানী সেকেন্দার আলী বলেন, ৫০ লাখ টাকা দিয়ে দোকান নিয়েছি। এই দোকানে আরও ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু ফুটপাতের ব্যবসার কারণে আমাদের বেচা কেনা কমে যাচ্ছে। লাভতো দুরের কথা এখন দোকানের কর্মচারী এবং বিদ্যুৎ বিলের খরচ উঠছে না।