মধু ও মধু তৈরির কারিগর



অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মধু প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টি। এর চেয়ে সুমিষ্ট ও বিশুদ্ধ কোন প্রাকৃতিক খাদ্য আছে কি-না সন্দেহ? চাক ভাঙা মধুর মৌ-মৌ গন্ধই আলাদা। এই গন্ধে পিঁপড়ে-মাছিদের মন নেচে ওঠে। ভালুকের জিবে আসে জল। আর মানুষের মনে জাগে আনন্দ। মধু পানে আসে তৃপ্তি। স্বাস্থ্য হয় সবল। মন হয় সতেজ। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মধু ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কি এর কোন বিকল্প তৈরি করতে পেরেছে? পারেনি। আর তাই এই সোনালি তরল মধু মানুষের কাছে আজও রহস্যই রয়ে গেছে।

মধুর কথা বলতে গেলে মৌমাছিদের কথাও এসে পড়ে। কারণ, এরাই হচ্ছে মধু তৈরির কারিগর। কীটপতঙ্গের মধ্যে মৌমাছিরাই আমাদের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। এরা একদিকে যেমন পরাগায়নের মাধ্যমে ফল-ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে, অন্যদিকে তেমনি অমৃত সুধা মন প্রাণ ভরিয়ে দেয়। তাই মৌমাছির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। মৌমাছি পৃথিবীর অত্যন্ত প্রাচীন অদিবাসী। আদিম মানুষের উদ্ভবেরও প্রায় পাঁচ কোটি ষাট লাখ বছর আগে এদের আবির্ভাব ঘটে। মানুষের সঙ্গে মৌমাছির ঘনিষ্ট সম্পর্কের কথা জানা যায় প্রাচীন সংস্কৃতির বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে। মৌমাছি সম্পর্কে মিশরীয়দের আগ্রহের কথা জানা যায় জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদদের আবিষ্কারের মাধ্যমে। তারা মিশরের আবুসির-এ কতকগুলো পুরনো ধর্ম গ্রন্থ আবিস্কার করেন, যাতে মৌমাছি পালনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সূত্র মতে, মৌমাছি পালন ও মধু আহরণের প্রথা মানব সভ্যতার মধ্যে প্রায় ৫,০০০ বছর ধরে বিদ্যমান। মিশরের ফারাও তুতানখামুন-এর কবরে সংরক্ষিত অবস্থায় প্রায় তিন হাজার বছরেরও আগের পুরনো মধু পাওয়া গেছে। গবেষণাগারে এ মধু বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো ভড়কে গেছেন, কারণ এ মধু ছিলো সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।

স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ’কুয়েভাস দে লা আরানা’-এ মধু সংগ্রহের ৮,০০০ বছরের পুরনো গুহা চিত্র। সূত্র: ইন্টারনেট।

মধু ও মৌমাছি সংক্রান্ত সবচেয়ে প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি পাওয়া গেছে স্পেনে। এটি ১৯১৯ সালের ভ্যালেপিয়ার বাইকার্পের কাছে অবস্থিত কৃভ্যা দ্য লা আরোনা-তে (মাকড়সার গুহা) আবিষ্কৃত হয় যা ছিল লাল রঙে আঁকা মধু সংগ্রহকারিদের একটি প্রস্তরচিত্র। প্রস্তরচিত্রটি এরকম- দুজন লোক ঘাসে পাকানো দড়ি বেয়ে পাহাড়ের খাড়া ঢালের একটি প্রাকৃতিক কোটর বরাবর উঠেছে। কোটরটিকে শিল্পী স্পষ্টত বুনো মৌমাছিদের আবাস্থল হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। লোক দু’জনের একজন কোটর থেকে মৌচাক বের করে নিচে নামানোর জন্য থলে বা ঝুড়িতে রাখতে ব্যস্ত। বিক্ষুব্ধ কিছু মৌমাছি অনাহুত আগন্তুকের চারপাশে গুঞ্জন করে করে উড়ছে। তবে, চিত্রে মৌমাছিগুলোকে লোকটির আকৃতির অনুপাতে বেশ বড় করে আঁকা হয়েছে। যদিও প্রস্তরচিত্রটির বয়স নিয়ে বিজ।হানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তবে এটি প্রায় ৮,০০০ বছরের পুরনো বলে ধারনা করা হয়।

প্রাচীনকালের মানুষ মৌমাছিকে অন্যান্য কীট-পতঙ্গ ও পশু-পাখির থেকে বেশি মর্যাদা দিয়েছে। বহু পৌরাণিক কাহিনী, উপকথা, গল্প, কুসংস্কার ও রূপকথার জন্ম দিয়েছে এই মৌমাছি। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে আনত মাথা ও স্বল্পোথিত ডানাযুক্ত মৌমাছি ছিল প্রাচীন দক্ষিণ মিসরের প্রতীক। ফারাও-এর প্রতি নিজেদের আনুগত্য প্রকাশ করতে প্রতীক হিসেবে মিসরীয়রা আবেদনপত্রে মৌমাছির একটি ছবি এঁকে দিত। মৌমাছি ছিল তাদের কাছে নিঃস্বার্থ ও নির্ভরতার প্রতীক এবং বিপদ ও মৃত্যুকে উপেক্ষা করার শক্তি। এছাড়ও মৌমাছিকে তারা পবিত্রতার আদর্শ ও শৃঙ্খলার রক্ষক হিসাবে দেখত।

গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দৈত্যকায় মৌমাছির গড়া বিশালাকার মৌচাক। ছবি- আ ন ম আমিনুর রহমান

এখন পর্যন্ত জর্জিয়ায় মধুর প্রাচীনতম অবশেষ পাওয়া গেছে, যা ৪,৭০০ থেকে ৫,৫০০ বছরের পুরনো বলে ধারনা করা হয়। মিশরের কায়রোর কাছে ২,৪০০ খ্রীষ্টপূর্বে নির্মিত সূর্য মন্দিরে মানুষের মৌচাক রাখার প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন লিপিকারদের রচনা থেকে জানা যায়, ব্যাবিলন সাম্রাজ্যে মৌমাছি পালন করা হতো। খ্রীষ্টের জন্মের প্রথম সহস্রাব্দে আসিরিয়াকে মধু ও জলপাইয়ের দেশ হিসাবে গণ্য করা হতো। সূর্যের অবতার এবং জগতের স্রষ্টা হিসাবে পরিচিত বিষ্ণুকে কখনও কখনও পদ্মফুলের পেয়ালার ওপর বসা ছোট্ট মৌমাছি হিসেবে, আবার কখনওবা তাকে মাথার ওপর উড়ন্ত একটি নীল মৌমাছি সমেত চিত্রিত করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রীকরা যাযাবর রীতিতে মৌমাছি পালনে অর্জন করেছিল চরম সাফল্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দার্শনিক, লেখক ও পণ্ডিততবর্গ মৌমাছি সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, রূপকথা আর শত শত বছরের পুরনো দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে জানা যায়, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগনের মধ্যে সুদূর অতীতেই মৌমাছি পালন ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছিল। বর্তমান বিশ্বে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি মধু উৎপন্ন করে। ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক মধু উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১.৭৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন।

১৭৫৮ সালে প্রখ্যাত সুইডিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও ডাক্তার ক্যারোলাস লিনিয়াস মৌমাছির নাম দেন Apis mellifera (মধুবহ); তিন বছর পর তিনি এর নাম Apis mellifica (মধুকর) হওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন। তবে, তাঁর দেয়া প্রথম নামটিই আজ পর্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রচলিত। মৌমাছি সামাজিক প্রাণী।

ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ফুলের নির্যাস সংগ্রহে ব্যস্ত দৈত্যকায় মৌমাছি। ছবি- আ ন ম আমিনুর রহমান

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ২০,০০০ প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে, যাদের মধ্যে মাত্র সাত প্রজাতি আমাদের প্রিয় খাদ্য মধু উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত। এসব প্রজাতির রয়েছে বহুসংখ্যাক উপপ্রজাতি ও জাত। বাংলাদেশের মৌমাছির প্রজাতির মধ্যে চারটি উল্লেখ্যযোগ্য, যেমন- ১) পশ্চিমা/ইউরোপীয় মৌমাছি (Apis mellifera)- এটি স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় দেখা যায়। এটির অন্তত ২০টি স্বীকৃত উপ-প্রজাতি ও জাতি রয়েছে। পরাগায়ন এবং মধু উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক সুবিধার কারণে উপ-প্রজাতিগুলি তাদের প্রাকৃতিক সীমার বাইরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মৌমাছি পালনকারীরা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক প্রজাতিগুলো পালনের জন্য বেশি আগ্রহী। ২) পূর্ব/এশিয়াটিক/এশীয় মৌমাছি (Apis cerana)- এই প্রজাতির আদি নিবাস দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়া। ৩) বামন/লাল বামন মৌমাছি (Apis florea)- দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট, বন্য মৌমাছির দুটি প্রজাতির মধ্যে একটি। ৪) দৈত্যাকার মৌমাছি (Apis dorsata)- দৈত্যাকার মৌমাছি প্রধাণত সুন্দরবন ও দেশের অন্যান্য অংশে প্রাকৃতিক মধু উৎপাদনের প্রধান কারিগর। এই বুনো প্রজাতিটি হিংস্র হতে পারে এবং এদের কামড়ে জ্বর ও ডায়রিয়া হয়। এটি সুন্দরবনের বড় গাছে এবং অন্যান্য স্থানে পাশাপাশি ভবনের কার্নিশের উপর বড় আকারের মৌচাক তৈরি করে।

পাবনা শহরের কাছে মৌমাছির খামারে ইউরোপীয় মৌমাছি। আলোকচিত্রী- আ ন ম আমিনুর রহমান।

মৌমাছি একসঙ্গে মিলে উপনিবেশ তৈরি করে বসবাস করে। মৌমাছিদের উপনিবেশে তিন ধরনের মৌমাছি থাকে: রানী মৌমাছি (উর্বর স্ত্রী মৌমাছি), পুরুষ মৌমাছি ও কর্মী মৌমাছি (অনুর্বর স্ত্রী মৌমাছি)। সাধারণত একটি উপনিবেশে একটি রানী মৌমাছি , কয়েকশ পুরুষ ও হাজার হাজার (এমনকি লাখ লাখ) কর্মী মৌমাছি বাস করে। মৌমাছির উপনিবেশ বা কলোনিতে বিভিন্ন ধরনের মৌমাছির অবস্থান ও মর্যাদাকে প্রাচীন মিশরিয়ারা ফারাও, তার অনুচর ও সভাসদ এবর চাকর-বাকরদের সঙ্গে তুলনা করত। মৌমাছি কলোনির রানীকে তারা তাদের ফারাও-এর সঙ্গে তুলনা করতো যার চারদিকে থাকত বিশ্বস্ত অনুচর ও সভাসদ (অর্থাৎ পুরুষ মৌমাছি)। আর থাকত বহু চাকর (কর্মী মৌমাছি) যারা ফারও-এর (রাণী মৌমাছি) পায়ে মিষ্টি মধু ঢেলে শ্রদ্ধা জানাত।

বিভিন্ন মৌচাকের মধুর রঙ ও মান কিন্তু এক নয়। মধুর রঙ ও মান নির্ভর করে ফুলের উপর, যা থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে। মধু চটচটে তরল পদার্থ। টাকটা অবস্থায় এর রঙ উজ্জ্বল ও পরিষ্কার। কিন্তু ভালোভাবে সংরক্ষণ না করলে রঙ ঘোলাটে হয়ে যায়। ডেক্সট্রিন জাতীয় উপাদানের কারণে মধু চটচটে ও আঠালো হয়।

পঞ্চগড়ের বোদায় মৌমাছির খামারে এশীয় মৌমাছি। আলোকচিত্রী- আ ন ম আমিনুর রহমান।

রাসায়নিকভাবে মধুতে অল্প পরিমাণ পানি, লেডুলোজ (৪০-৫০%), ডেক্টট্রোজ (৩২-৩৭%), সুক্রোজ (২%), গাম, তেল, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে। খনিজের মধ্যে লোহা, কপার, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, সালফার, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়ামই প্রধান। এছাড়াও মধুতে মল্টোজ, এনজাইম, অ্যামিনো অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড ও সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে।

বিখ্যাত রাশিয়ান কীটতত্ত্ববিদ ইউজিন অ্যারাফ-এর গবেষণায় দেখা গেছে, মৌমাছিকে ফুলের সুধার (Nectar) পরিবর্তে ফলের রস (Juice) খাওয়ালে উৎপাদিত মধুতে ভিটামিনের পরিমাণ বেশি হয়। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ল ভন ফ্রিশ ও হেরাল্ড ইশ এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্বিবিদ্যালয়ের এ এম ওয়েনার এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, মৌমাছিরা মধুর উৎস ফুল খুঁজে পাওয়ার পর উৎসের দূরত্ব ও দিক, ফুলের সুধার গুণাগুণ ইত্যাদি সম্পর্কে চাকের মৌমাছিদের অদ্ভুতভাবে তথ্য দিতে পারে। আর এটি শ্রবণ, দর্শন ও রাসায়নিক স্পর্শের মাধ্যমে ঘটে থাকে।

ঢাকার উত্তরায় বামন মৌমাছি ফুলের নির্যাস সংগ্রহে ব্যস্ত। আলোকচিত্রী- আ ন ম আমিনুর রহমান।

একটি শ্রমিক মৌমাছি ফুল থেকে সুধা সংগ্রহ করে মৌচাকে ফিরে এসে সুধা ও পরাগরেণূ মৌচাকের কোষে জমা করার পর এ কাজটি করতে পারার আনন্দে নেচে নেচে উল্লাস প্রকাশ করে। কীটতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এগুলো শণাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। সুধার উৎস (ফুল) মৌচাকের নিকটে হলে মৌমাছি সামনের দিকে একটি সোজা লাইন তৈরি করে দৌড় দেয়, এদিক-ওদিক নাড়িয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে এবং সবশেষে আবার সামনের দিকে দৌড় লাগায়।

কোন একটি নির্দিষ্ট দিকে দৌড় দেয়ার মাধ্যমে এরা মৌচাক থেকে সুধার উৎসের দিক নির্দেশ করে এবং প্রতি একক সময়ে দিক পাল্টানোর সংখ্যা দিয়ে মৌচাক থেকে উৎসের দূরত্ব নির্দেশ করে। এদের রোমশ শরীরে লেগে থাকা পরাগরেণূর মাধ্যমে সুধা সংগ্রহকারী ফুলের ধরন বা প্রজাতি জানা যায়।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মৌমাছির বাণিজ্যিক খামার। আলোকচিত্রী- আ ন ম আমিনুর রহমান

মধুর নানা গুণের কথা বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কাছে জানা। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে মধূর উল্লেখ আছে। বাইবেলে তিন ধরনের মধুর কথা বর্ণিত হয়েছে। হিন্দুদের বেদ শাস্ত্রেও মধুর উল্লেখ রয়েছে। ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে মধুর অপূর্ব স্বাদের কথা বলা আছে। দলিল-দস্তাবেজ অনুযায়ী, প্রাচীন মিসরীয়রা মৃত ব্যক্তিদের দেহ সংরক্ষণের জন্য মধু ব্যবহার করতো। তাছাড়া হিন্দু দেবতারা অবগাহনের জন্যও মধু ব্যবহার করত।

মধু স্মরণাতীতকাল থেকেই ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বের সর্বত্র, প্রাচীন পূরাণে, মধুর বলকারক ও স্বাস্থ্যপ্রদ গুণাবলী এবং যাদুকরি আরোগ্যকারী ক্ষমতার প্রশংসা করা হয়েছে। মধ্যযুগে মধু ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া মুখগহ্বর ও গলার প্রদাহ, পরিপাকতন্ত্রের অসুস্থতা ও আলসারের চিকিৎসায় মধু ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এটি খাদ্য ও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মানুষের পাশাপাশি পশুচিকিৎসাতেও মধুর ব্যবহার আছে।

শ্রীমঙ্গলের বাণিজ্যিক খামারে উৎপাদিত বোতলজাত মধু। আলোকচিত্রী- আ ন ম আমিনুর রহমান

কথিত আছে, রুগ্ন ঘোড়াকে মধূ ও ভূষি মিশিয়ে খাওয়ালে এরা দ্রুত স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠে। হোমারের ইডিপাশে উল্লেখ আছে, ডাইওমাডেস (Diomades) তার ঘোড়াকে মধুমিশ্রিত বার্লি খাওয়াতো। জুলিয়াস সিজার পোলিও রুমিলিয়াসের শততম জম্মবার্ষিকীতে দেয়া ভোজসভায় তার দেহ-মনের সংরক্ষণের গোপন রহস্যটি কী জানতে চাইলে উত্তরে রুমিলিয়াস বলেছিলেন- “Internus melle, externus olio (অভ্যন্তরীন মধু, বাহ্যিক স্বাস্থ্য“ অর্থাৎ মধু পানের তার দেহ-মনের সুস্থতা সংরক্ষিত হয়েছে। যুদ্ধের বিজয়োৎসবে রোমান সৈন্যরা দীর্ঘ জীবন লাভের আশায় মধূ ও মদ একত্রে পান করত। গ্রীক অ্যাথলেটরা অলিম্পিক এরেনায় প্রবেশের পূর্বে মধু পান করত।

পৃথিবীর বহু নরগোষ্ঠীই মধুকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মধুকে দুধ, দই, ছানা, পনির, সিরিয়াল ও রুটির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলে মধুকে চোলাই করে মদে রূপান্তরিত করা হয় যা শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পান করা হয়ে থাকে। মধু ও মদের মিশ্রিত দ্রবণকে ’দেবতাদের পানীয়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। প্রাচীন কবিতায় ইন্দোনিশয়ার বালি দ্বীপকে মধুর দ্বীপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ বালির অতিথিরা প্রচুর পরিমাণে মিড (মধু ও মদের মিশ্রিত দ্রবণ) পান করত। একটি পুরনো ফরাসী প্রথা অনুযায়ী নববিবাহিত দম্পতিদের বিয়ের পরই একাধারে ত্রিশদিন নির্দিষ্ট সময় মধুপান করতে হতো। আর এ থেকেই বর্তমানকালের বহুল প্রচলিত মধুচন্দ্রিমা বা হানিমুন-এর উৎপত্তি হয়েছে। ইহুদীদের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো বইয়ের প্রথম বর্ণের উপর একফোটা মধু রেখে তা চুষে খায়, তবে সে মিষ্টতার সঙ্গে পড়াটি মনে রাখার শক্তি অর্জন করে।

যুদ্ধক্ষেত্রে বিষাক্ত রাসায়নিকে ব্যবহার খুব বেশিদিন আগের নয়। কিন্তু একাজের জন্য বিষাক্ত মধুর ব্যবহার বহু প্রাচীনকালের। আর একাজে বিষাক্ত মধুও রাসায়নিকের মতোই কার্যকর ছিল। বিরোধপূর্ণ পার্বত্য এলাকা নিয়ে যখন পম্পেই নগরীর সেনাপতিদের সঙ্গে আলাপ অলোচনা চলছিল তখন হেপ্টোকোমিস পম্পেইয়ের রাস্তায় পিপে পিপে বিষাক্ত মধু রেখে দিয়েছিল। আর সেই মধু পানেই পম্পেই-এর সৈন্যরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। পরবর্তীকালে গবেষণায় দেখা গেছে Rhododrendon ponticomus-এর সুধা থেকে উৎপন্ন মধু বিষাক্ত হয়ে থাকে।

জৈব পদার্থ সংরক্ষণেও মধু যথেষ্ট কার্যকর। তাই জৈব পদার্থ সংরক্ষণে মধুর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলল। মধ্য যুগে ইংল্যান্ডে মাংস ও চামড়া কিউরিংয়ে মধু ব্যবহার করা হতো। ‘অলেকেজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর মৃত্যুর পর তার মরদেহ মধু ও মৌ মোমের সমন্বয়ে সংরক্ষিত হয়েছিল। বর্ষা মৌসুমে শুকনো জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ তরা কঠিন বিধায় বার্মার লোকেরা শুকনো জ্বালানী কাঠ জোগাড় করা পর্যন্ত মৃতদেহকে মধুতে সংরক্ষণ করা হতো।

 রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার প্রেমতলীতে দৈত্যকায় মৌমাছির ছবি তোলায় ব্যস্ত লেখক। আলোকচিত্রী- তানভীর ইয়াছির

ত্বকের উপর মধুর উপকারী প্রভাব প্রাচীনকাল থেকেই সুপরিচিত। প্রাকৃতিক সংরক্ষণ উপাদান থাকায় মধু কখনই নষ্ট হয় না। মিশরীয় ফারাও আখেনাতেনের স্ত্রী নেফারতিতি (১৩৭০ খ্রিস্টপূর্ব), তার দৈহিক সৌন্দর্য রক্ষায় নিয়মিত মধু ব্যবহার করতেন। আসলে নেফারতিতি নামটি তারা উচ্চারণ করত ’নাফতেটা’ যার অর্থ 'সৌন্দর্য'। ক্লিওপেট্রা (৬৯ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৩০খ্রিস্টপূর্ব) ত্বককে মসৃণ ও দৃঢ় রাখতে তার দৈনন্দিন রূপচর্চায় মধু ব্যবহার করতেন। তিনি স্নানের পানিতে দুধ ও মধু যোগ করতেন। সম্রাট নিরোর দ্বিতীয় স্ত্রী পপিয়া সাবিনা (৩০ থেকে ৬৫ খ্রিস্টাব্দ) দুধ ও মধু লোশন দিয়ে দিনে ৭ বার মুখ ধুতেন। চীনে মিং রাজবংশের শাষণামলে (১,৩৬৮ থেকে ১,৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) সম্রাটের দরবারের মহিলারা তাদের ত্বককে সতেজ ও দাগমুক্ত রাখতে মধু এবং কমলালেবুর বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করতেন। ফ্রান্সের রাজা ১৫ তম লুই-এর শেষ উপপত্নী মাদাম ডু ব্যারি (১,৪৩ থেকে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ) মুখের মুখোশ হিসাবে মধু ব্যবহার করতেন। তার রূপচর্চার অংশই ছিল মুখোশ লাগানোর পরে শুয়ে থাকা ও বিশ্রাম নেওয়া। জাপানি মহিলারা তাদের হাতের সৌন্দর্য বাড়াতে মধু থেকে তৈরি লোশন ব্যবহার করেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটস রোগিদের ব্যবস্থাপত্রে মধু দিতেন। প্লিনি (Pliny) মধুকে বহু ধরনের ঔষধের উপশমক হিসেবে বিবেচনা করতেন। মধু এতটাই দামি যে, একবার এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে বিবাদ লেগে যায়। ১৮৪০ সালে আইওয়া ও মিসৌরি অঙ্গরাজ্য মৌচাকভর্তি গাছ নিয়ে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। দুটি অঙ্গরাজ্যই এগুলোকে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করতে থাকে। দীর্ঘ এগার বছর মামলা-মোকদ্দমার পর নিষ্পত্তি হয় ঠিকই, কিন্তু ততদিনে এটি ‘মধু যুদ্ধ’ (Honey War) নামে পরিচিতি লাভ করে ফেলে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগমনের সাথে সাথে বিজ্ঞানের বড় অগ্রগতি, যেমন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্যাটার্ন রিকগনিশান, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি হওয়া সত্ত্বেও আমরা এখনও প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত শিষ্টি তরল সোনা মধু নিয়ে বিস্মিত- এর গোপনীয়তা খুঁজে পেতে এখনও দুর্ভেদ্যই রয়ে গেছে। তাইতো মধুর রহস্য এখনও অটুট।

   

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কৃষি কাজে ও কলকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ছোঁয়া বিভিন্ন সেক্টরে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে পরিবর্তন হয়নি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানে। বরং কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে কমছে তাদের কাজের সংকুলান। কমেছে আয়-রোজগারও।

রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার সংলগ্ন তুরাগ নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বালি ও কয়লা ভিত্তিক ব্যবসা। এক সময়ের জনপ্রিয় ও বহু লোকের কর্মসংস্থানের এই ব্যবসাতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মানুষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বালু লোডিং-আনলোডিং-এ যান্ত্রিকীকরণের কারণে কাজ হারিয়েছেন শ্রমিক। ফলে কমেছে শ্রমজীবী মানুষের কদর; প্রসার ঘটেছে উন্নত যন্ত্রাংশের।

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. হান্নান। দীর্ঘদিন ধরে গাবতলীতে বালু ও কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। হান্নান জানালেন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তার উপার্জনের প্রভাব ফেলেছে।

যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় বেড়েছে শ্রমিকের কদ/ছবি: নূর এ আলম


এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চার বছর এখানে এই কাজ করি। আগে ভালই ইনকাম হতো। এখন আর সেরকম ইনকাম হয় না। আগে এতো মেশিন ছিলো না সব কাজ আমরা করতাম। আর এখন সব মেশিনে করা হয়। শুধু যেগুলো মেশিন দিয়ে করা যায় না সেগুলো আমরা করি।’

তিনি আরও যোগ করেন, তাছাড়া আগে শ্রমিক কম ছিল। তখন মেশিনও ছিলো না। শ্রমিকদের চাহিদা ছিলো। কিন্তু এখন শ্রমিক বেশি, মেশিনও এসেছে। এক মেশিনে অনেক কাজ হয়; তাই চাহিদা কম। ইনকামও কম।

‘আগে দৈনিক দিন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা ইনকাম করতে পারতাম। আর এখন সারাদিন কষ্ট করে কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা ইনকাম করি। আবার কোন কোনদিন এর থেকে কমও ইনকাম হয়।’- বলেন এই শ্রমিক।

পাবনার বেড়ার কামরুজ্জামান ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন। টানা ১৬ বছর ধরে গাবতলী বালু ও কয়লার ঘাটে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

কঠোর পরিশ্রমের পর দিনশেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার/ছবি: নূর এ আলম

‘এক একটা টালি মেরে ২ টাকা ৪ আনা হিসেবে টাকা পাই। এখন যন্ত্র আসাতে লেবারের কোন কাজ কাম নেই। সব মাল এখন মেশিনে ওঠায়। এজন্য লেবারের কাজ কমে গেছে। টালির এখন আর রেট নেই। কাজ না করেও উপায় নেই কি করবো? ঢাকা শহরে আছি কাম না করলে চলবো ক্যামনে।’- বলেন কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, এখন দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। আগে ভালোই ইনকাম হতো। কিন্তু এখন ৫০০ টাকা ইনকাম করতেই কষ্ট হয়ে যায়। হবে না আগে যেখানে একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলে।’

মেহনতি এই মানুষটার কাছে শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা, না করলে কোন টাকা নাই। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করাই লাগে। এমনও মানুষ আছে ঘুম থেকে উঠে ভোরে কামে আসে। কাম না করলে সংসারই চলে না।

মূল্যস্ফীতি এখন লাগামহীন অবস্থায় আছে বলে মনে করে দেশের অন্যতম বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে শ্রমিকরা/ছবি: নূর এ আলম


তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে নাজমা বেগম। তার ও স্বামীর উপার্জনে কোন রকমে সংসার চলে নাজমার।

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘এই গরমে কাজ করা যায় না। সারাদিন কাজ করলেও খুব বেশি ইনকাম হয় না। জিনিসের যা দাম বেড়েছে তাতে। এই ইনকামের টাকায় পরিবার চালানো অনেক কষ্টের। তাই আপনাগো ভাই সারাদিন রিকশা চালায় আর আমি এই কয়লা-বালি টানার কাজ করি।’

আগের মতো আয় নেই জানিয়ে শ্রমজীবী এই নারী বলেন, ‘আগেতো ভালই ইনকাম করতাম। কিন্তু এখন আর পারি না। এখন বেশিরভাগ মালিক মেশিন দিয়ে মালামাল নামায় তাই আমাদের লাগে না। আর সেভাবে ইনকামও হয় না। এখন কোন দিন ৩০০ টাকা, কোন দিন ৪০০ টাকা ইনকাম করি।’

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বার্তা২৪.কম বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সে হারে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। সব সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দিলে শ্রমিক বাঁচবে না। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা করুণ। তাদের শ্রমের দামের বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবে না।’

;

দাবদাহে দিনমজুররা বঞ্চিত শ্রম অধিকার থেকে

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
দাবদাহে দিনমজুররা, ছবি: নূর এ আলম

দাবদাহে দিনমজুররা, ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকার আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে তুরাগ নদীর তীরে নোঙর করা বালু‌ বহনকারী চারটি লোহার তৈরি বাল্কহেড মধ্যাহ্নের প্রখর রোদে উত্তপ্ত হয়ে আছে। এগুলোর উপর দিয়ে হেঁটে প্রায় ১০০ জন পুরুষ ও নারী শ্রমিক দলবেঁধে মাথায় করে প্রত্যেকে প্রায় ২৫ কেজি ওজনের ভেজা বালু বাঁশের তৈরি টুকরিতে বহন করে নিয়ে নদীর তীরে একটি নির্ধারিত স্থানে ফেলছেন। আশ্চর্যের বিষয়, এত পরিশ্রম করেও তাদের মুখ ও‌ শরীর ঘামে ভেজেনি।

“অতিরিক্ত গরমে আমাদের ঘাম বাষ্প হয়ে গেছে,” বলেন ৫৮ বছর বয়সী আব্দুল খালেক। তিনি দুই দশক আগে নেত্রকোনা জেলা থেকে ঢাকায় এসে দিনমজুর হয়েছিলেন।

প্রখর রোদে পরিশ্রম করেও শ্রমিকদের মুখ ও‌ শরীর ঘামে ভেজেনি/ছবি: নূর এ আলম


গরমে হাঁপিয়ে ওঠা শ্রমিকরা কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ কেউ নিকটস্থ এক মসজিদ থেকে আনা বোতলে ভরা পানি‌তে চুমুক দিচ্ছেন।

গত কয়েক বছরের মতো, ২০২৪ এর গ্রীষ্মকাল এমন দিনমজুরদের কাছে এক প্রকার জুলুম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা তাপপ্রবাহ মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু বেশিদিন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসেও থাকতে পারছেন না। তারা যে বালু খালাস করেন, তার বাজারমূল্য বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়েনি‌। এমনকি অপ্রাতিষ্ঠানিক দিনমজুর হওয়ায় তাদের কোন শ্রম অধিকারও নেই।

“ঈদের ছুটি শেষে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহেই বেশির ভাগ কর্মচারী ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে আমিন বাজারে বালু খালাস শুরু হয়। গরম আবহাওয়ার মধ্যে শ্রমিকরা আসেনি,” বললেন শ্রমিকদের সর্দার (আসলে বালুর ঠিকাদারের ম্যানেজার) মশিউর রহমান।

গ্রীষ্মকাল যেন দিনমজুরদের কাছে এক প্রকার জুলুম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে/ছবি: নূর এ আলম


সাধারণত এক বাল্কহেড থেকে সাড়ে নয়শো স্কয়ার ফুট বালু নামাতে ১৫০ জন শ্রমিক দুই দিন সময় নেন, অথচ মশিউর পেয়েছেন প্রয়োজনের এক- চতুর্থাংশ লোকবল।

মশিউরের কথায় মনে পড়ল আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার বার্তা। গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের মানুষ ৭ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে। চরম তাপপ্রবাহে মানুষের, বিশেষ করে যারা দিনের বেলায় খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন, তাদের কাজের ক্ষমতা কমে যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টার ২.২ শতাংশ বা ৮০ মিলিয়ন নিয়মিত চাকরি ফুরিয়ে যাবে‌ শুধুমাত্র বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে।

এক নারী শ্রমিক মাথায় করে ভেজা বালু বাঁশের টুকরিতে করে  নদীর তীরে একটি নির্ধারিত স্থানে নিচ্ছেন/ছবি: নূর এ আলম


ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে এমনিতেই এখানকার তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বেশি থাকে।‌ এরপর যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ে তবে অবধারিত ভাবে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত ক্ষতিকর প্রভাব বাড়বে।

২০১৯ সালে আইএলও জানিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপপ্রবাহে বাংলাদেশ মোট কর্মঘণ্টার ৪.৮৪ শতাংশ হারাবে।

কম মজুরির কর্মই যাদের নিয়তি

জামালপুর থেকে আসা চল্লিশ বছর বয়সী নার্গিস বেগম ১২ বছর আগে আমিন বাজারে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময় তাকে ১০ টুকরি বালু খালাসের জন্য ১০ টাকা দেওয়া হত। বর্তমানে সাত টুকরি বালু খালাসের জন্য তিনি একই পরিমাণ মজুরি পেয়ে থাকেন। ১২ বছরে এই পার্থক্য খুবই নগণ্য। অন্যদিকে বালুর দাম বেড়েছে বহুগুণ।

“এক ট্রাক ভর্তি সাদা বালুর (নদী খননে প্রাপ্ত পলি) দাম ছিল ২ হাজার টাকা, যা এখন ৫ হাজার টাকা। গত ১০ বছরে সিলেটের লাল বালুর দাম ৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৪ হাজার টাকা হয়েছে,” বলেন শ্রমিক সর্দার মশিউর।

বালুর দাম বেড়েছে বহুগুণ, তবে শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি/ছবি: নূর এ আলম


তাহলে শ্রমিকদের মজুরি কেন বাড়েনি, তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বালুর বাজার এখন অনেক। অনেক ব্যবসায়ী এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। ফলে আমিন বাজারের মহাজনদের (যারা শ্রমিকদের মজুরি দেন) আয় কমে গেছে। যদি তারা ভাল উপার্জন করত তবে শ্রমিকদের ভাল মজুরি দেওয়া হত”; মশিউর তার মহাজনের পক্ষ নিলেন।

লোডিং-আনলোডিং সেক্টরে যান্ত্রিকীকরণেও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। এমনকি অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।

আমরা যখন শ্রমিকদের সাথে কথা বলছিলাম, তখন আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনে অন্তত পাঁচটি বেসরকারি ক্রেন দেখা গেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল দুই।

“একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক পাঁচ ঘণ্টায় একই কাজ করতে পারে”; শ্রমিক খালেক ব্যাখ্যা দিলেন যন্ত্রায়ন কীভাবে তাদের জীবিকার উপর প্রভাব ফেলছে।

অসহনীয় আবহাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, খালেকের মতো শ্রমিকরা শুধুমাত্র তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য এই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

তুরাগের তীরে কয়লার স্তুপ/ছবি: নূর এ আলম


খালেকের স্ত্রী একজন ঠিকা গৃহকর্মী এবং একমাত্র ছেলে মোসলেম উদ্দিন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কিন্তু তাদের মজুরি পারিবারিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।

শ্রমনীতি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বেশ কিছু পরিকল্পনা এবং নীতি আছে, যেমন জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নীতি, যেগুলো শ্রমিকের স্বাস্থ্য রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল। বিশেষ করে, ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন এ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিকে স্বীকৃতি দেয়া আছে। কারণ, তাপপ্রবাহে মৃত্যুহার বৃদ্ধি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে শ্রমিকরা যাতে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে কী করতে হবে তা পরিষ্কার নয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের পরিচালক কোহিনুর মাহমুদ বলেন, দিনমজুরদের নিয়োগকর্তাদের উচিত তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা তাপপ্রবাহের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারেন।

"দুর্ভাগ্যবশত, নিয়োগকর্তাদের ওপর কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ, বালু খালাসিদের মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কোন শ্রম অধিকার নেই”, কোহিনুর বলেন।

তিনি শ্রমিকদের নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

;

ছেলেরা খাবার দেয় না, ভিক্ষার থলি হাতে পথে পথে জাহানারা!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাবা, গতবছর কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খাইছিলাম। এর পর আজ পর্যন্ত একটা কুডি (টুকরো) খাইতারলাম না। আগামী কোরবানির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। এইবার রোজার ঈদেও একটু ভালো খাওন (খাবার) পাইনি। মাইনসে কিছু সেমাই দিছিলো কিন্তু জন্ম দেয়া ছেলেরা আমারে কিছুই দেয় না কোনো সময়ই। ঈদেও কিছু দিলো না। তারা দিলে মনডায় শান্তি লাগতো। তবুও তারা সুখী হউক’!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবং আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষক জাহানারা (৬৫)।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কর্মে অক্ষম হয়ে ২০ বছর ধরে ভিক্ষার থলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধ জাহানারা। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে শরীর। একটি ব্যাগ আর লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে চলেছেন কটিয়াদী বাজারের পথে পথে! এই দোকান থেকে ওই দোকান!

জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দুই বছর পর থেকে টেনেটুনে চলেছিল সংসার তাদের। স্বামী অলস প্রকৃতির ও ভবঘুরে হওয়ায় কোনো সময়ই সংসারে সচ্ছলতা আসেনি।

অভাবের কারণে একসময় তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে স্বামী সফর উদ্দিনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। বয়সের কারণে জাহানাকে মানুষ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন জাহানারা, যা আজ অব্দি চলছে। ২০ বছর পার হতে চললো।

জাহানারা, সফর উদ্দিন দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা সবাই যার যার নিজেদের পরিবার নিয়ে সংসার করছে। কেউই মা-বাবার খোঁজ নেয় না। মেয়েরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিলেও ছেলেরা একদমই নেয় না জানালেন জাহানারা।

ছেলেরা খাবার দেয় না! ভিক্ষার ঝুলি হাতে পথে পথে ভিক্ষা করেন জাহানারা, ছবি- বার্তা২৪.কম

জাহানারার নামে একটু জমি ছিল। সেটুকুও ছেলেরা লিখে নিয়েছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাবা-মা ঝোপঝাড় সংলগ্ন কবরস্থানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বেঁচে থাকার পরেও কবরস্থানই যেন হলো বাবা-মায়ের হলো আপন ঠিকানা! বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে আর রাত হলেই শিয়াল ও বন্য প্রাণীর শব্দে রাত কাটে তাদের।

তার সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, গত কোরবানির ঈদে মানুষের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছেন। এরপর ইচ্ছে হলেও কাউকে বলার ও কিনে খাওয়ার কোনোটাই সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। মাঝে-মধ্যে মানুষের দেওয়া মুরগি পেলেও অন্য মাংস তাদের জন্য স্বপ্ন হয়েই আছে। সে কারণে সারাবছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার কটিয়াদী বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন জাহানারা। পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। বয়স্ক ভাতা যা পান, তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহের খাবার খরচ মেটাতে হয়।

বৃদ্ধ জাহানারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনটা ছিঁড়া কাপড় দিয়ে বছর পার করছি। এবার ঈদে একটি কাপড়ও পাইনি। ফেতরার দানের আড়াইশ টাকা শুধু পাইছি। মানুষ মাঝে-মধ্যে খাইতে দ্যায়। বাকি দিনগুলো কেমনে যে পার করি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কিছু'!

 

 

;

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;