কিশোরগঞ্জের হাওরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহিষের গাড়ি

  • ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কটিয়াদী ( কিশোরগঞ্জ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের হাওরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহিষের গাড়ি

কিশোরগঞ্জের হাওরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহিষের গাড়ি

 

চারদিকে সবুজের সমারোহ। পাখির শব্দে মুখরিত হাওর। প্রকৃতির এই বিশালতার ভেতরে চলছে মহিষের গাড়ি ৷ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, বাজিতপুর, নিকলী, অস্টগ্রাম উপজেলার হাওর অঞ্চলগুলোতে মহিষের গাড়িতে চলাচল করতে হয়। হাওরের ভেতর দিয়ে রয়েছে কাঁচা ও পাকা সড়ক। যে রাস্তাগুলো কাঁচা এবং দুর্গম পথ, সেগুলো মহিষের গাড়ি চলাচলের একমাত্র বাহন।

বিজ্ঞাপন

হাওরে বাহন হিসেবে গ্রামীণ মেঠোপথে দেখা যায়, গরু-মহিষের গাড়ি। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন এসব গাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে যেতে বসলেও হাওর অঞ্চলে এখনো দাপিয়ে চলেছে মহিষের গাড়ি। এখানকার মানুষের একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এই গাড়ি।

সরেজমিন দেখা যায়, নদীবেষ্টিত বাজিতপুর উপজেলার দুর্গম হাওর হোমাইপুরে দেখা গেছে, মহিষের গাড়ি চলাচলের দৃশ্য। অপরূপ বাংলার হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্যের ঐতিহ্যের এই গাড়ি মালামাল বহন দাপিয়ে চলছিল বালুমাটিতে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, অতীতে কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বাহন ছিল গরু বা মহিষের গাড়ি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে এই গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা। সময়ের ব্যবধানে এখন এই গরুর বদলে ব্যবহার হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি, যার ফলে গ্রামীণ পথ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গরু-মহিষের গাড়ি। তবে হাওরের গ্রামে এখনও দেখা মেলে গরু আর মহিষের গাড়ি আর এসব গাড়ি যারা চালান, তাদের বলা হয়- গাড়িয়াল।

এখনো গ্রামবাংলার জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের প্রিয় বাহন দুই-চাকার গরুর গাড়ি থাকলেও আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়া আর ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে হার মেনে বিলুপ্তপ্রায় এ পেশাটি। মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরু-মহিষের গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলেমেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলেমেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়।

যুগযুগ ধরে কৃষকের কৃষি ফসল বপন ও বহনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ছিল গরু-মহিষের গাড়ি। দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা মহিষের টানা এক প্রকার বিশেষ যান। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে আর পেছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে। কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে এ গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। এই গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযান চলাচলের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীরগতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই, এখন আর তেমন চোখে পড়ে না এ গাড়ি।

চরাঞ্চলের বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, বর্তমান যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, অটোরিকশা ইত্যাদি। ফলে, গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না মহিষের গাড়ি।

মাইজচরের মহিষের গাড়ির গাড়িয়াল কাদির মিয়া বলেন, এ গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না, ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে। তবে বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে এখনও বাহন হিসেবে মহিষের চালানো হচ্ছে। এ থেকে যেটা রোজগার হয়, তা দিয়ে চালানো হচ্ছে সংসার।