হলুদের বিষক্রিয়া দূরীকরণে বাংলাদেশের সাফল্য



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সীসার বিষক্রিয়ার হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৯  সালে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ১৪ লাখ মানুষ সীসার বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। সেই বছরই একই কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের  (জিডিপি) প্রায় ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে অনুমান করা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিশ্বে সীসার বিষক্রিয়ার হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ এশিয়ায়।

হলুদ হলো আদা প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। দীর্ঘকাল ধরে এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধে এবং এশীয় রান্নায় ব্যবহৃত হয় হলুদ। এর সুগন্ধ এবং প্রাণবন্ত রঙ মূলত বেশি আকর্ষনীয় ও মূল্যবান। হলুদ কখনও  মশলা আবার কখনও রূপচর্চার উপকরণ। হলুদের সোনালি রঙের বেশি ভক্ত এই দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলেই।

হলুদ যেভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়

দক্ষিণ এশিয়ায় তরকারিতে স্বাদ, গন্ধ আর রং বাড়িয়ে তুলতে হলুদের যেন কোনো বিকল্প নেই। তরকারিটা একটু ভালোমতো রান্না করতে হলে হলুদের দরকার।  অনেকেই মনে করেন হলুদ খাওয়া, এমনকি হলুদ মেখে গোসল করাও শরীরের জন্য উপকারী। যেকোনো দক্ষিণ এশীয়ই বিশ্বাস করেন যে, হলুদ রূপচর্চায় ভীষণ সহায়ক উপাদান। তবে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক স্থানে হলুদের জন্যই মানুষকে ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হওয়া এসব হলুদে রং বাড়াতে নিয়মিত মেশানো হয় সিসা (লেড ক্রোমেট)। হলুদের রং আরেকটু ধারালো করতে মিশ্রিত এ ভেজাল প্রাণনাশের কারণ হচ্ছে অনেকের।

সিসা বা লেড ক্রোমেট হলো এক ধরনের নিউরোটক্সিন যা হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। খাবারে সিসার উপস্থিতি থাকলে শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপদের ঝুঁকিতে পড়ে। ভয়াবহ এই ভেজাল সিসা শিশুদের অবধারণগত বিকাশকে প্রতিহত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক-ট্যাংক সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোর শিশুদের তুলনায় দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের ২০ শতাংশ লার্নিং গ্যাপ রয়েছে। এই লার্নিং গ্যাপের পেছনে বিষাক্ত সিসার সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাজারজাত এসব সিসা মিশ্রিত হলুদ সেবনে বা ব্যবহারে শিশুদের এই সমস্যা হয় বলে প্রমাণ করেন গবেষকরা।

ল্যান্সেট প্ল্যানেটারি হেলথ-এ প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের রক্তে সিসার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলে রান্নার বাসনকোসন থেকে শুরু করে প্রসাধনী সবকিছুতেই ধাতুর ছড়াছড়ি বলে এত ধাতুর উৎসকে সুনির্দিষ্ট করে শনাক্ত করাও দুরূহ।

হলুদে রং বাড়াতে নিয়মিত মেশানো হয় সিসা (লেড ক্রোমেট)

হলুদ থেকে বিষাক্ত সিসা দূরীকরণে বাংলাদেশের সাফল্য, শেখার আছে প্রতিবেশী দেশগুলোরও

২০১৯ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্স, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)-এর একদল গবেষক হলুদের ভেজাল এবং হলুদ থেকে বিষাক্ত সিসা দূর করার বিষয়ে মনোযোগ গবেষণা শুরু করেন। তখন হলুদে সিসার ব্যবহার সমূলে উচ্ছেদ করতে দেশজুড়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল খাদ্য-নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদরা। এসময়ে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দ্রুত নীতি বাস্তবায়নের লাগাতার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন গবেষকরা।

এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত অপর এক গবেষণার তথ্যমতে, বাংলাদেশের এ হলুদ থেকে বিষাক্ত সিসা দূরীকরণ উদ্যোগ দারুণভাবে সফল হয়েছে। স্বাস্থ্যের ওপর এই পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে। হলুদ কারখানার শ্রমিকদের রক্তে সিসার পরিমাণ গড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। অন্যদিকে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের বাজারে সিসাযুক্ত হলুদের পরিমাণ ৪৭ শতাংশ থেকে কমে শূন্য শতাংশে নেমে আসে।

নিউইয়র্কভিত্তিক পরিবেশবিষয়ক এনজিও পিউর আর্থ-এর এক প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মাত্র এক ডলার খরচেই জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে। সেইসাথে বাড়ছে গড় আয়ুও। তবে সরাসরি আর্থিকভাবে একই সাফল্য পেতে হলে আনুমানিক ৮৩৬ ডলার খরচ করতে হতো। ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের এমন সফলতা এবং সাশ্রয়ী দি যেকোনো দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো হলুদের সীসা দূর করা এই উদ্যোগ যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণ করা প্রয়োজন।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনা ফরসিথ বলেন, নীতিনির্ধারকদের কাছে সমস্যাটি বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে ব্যাখ্যা করার কারণেই তাদের কাছ থেকে সহজেই সমর্থন আদায় করা গেছে। বাংলাদেশের দ্রুত নীতি বাস্তবায়নের এ সাফল্য সত্যিই আশ্চর্যজনক।

২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের দিকে ফরসিথ ও তার সহকর্মীরা বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় গর্ভবতী নারীদের মধ্যে সিসার উচ্চ উপস্থিতি ও হলুদ খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দেখাতে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন। এ গবেষণার ফলাফল দেখিয়েই বাংলাদেশের খাদ্য-নিরাপত্তা বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পর্যন্ত রাজি করাতে পেরেছিলেন তারা।

তবে অর্থায়ন ছাড়াও ক্যাম্পেইন সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল গণমাধ্যমেও প্রচারণা। এসব প্রচারণায় সিসা মেশানো হলুদের ভয়াবহতা নিয়ে গ্রাফিক আধেয় (কনটেন্ট) প্রদর্শনের মাধ্যমে দর্শকদের সতর্ক করা হয়েছিল। সমস্যাটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জাতীয় টেলিভিশনে কথাও বলেছিলেন শেখ হাসিনা। বাজার ও পাবলিক এলাকাগুলোতে হলুদে সিসার উপস্থিতি ও বিষক্রিয়া নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার বিজ্ঞপ্তি লাগানো হয়েছিল। সবথেকে বেশি পরিমাণ মানুষকে সিসার ভয়াবহতা সংশ্লিষ্ট এসব তথ্য পৌঁছে দিতে কার্যকর সকল ক্যাম্পেইন কৌশলই অবলম্বন করেছিলেন গবেষকরা।

তাদের কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শ্রমিকদের রক্তে সিসার বিষক্রিয়ার প্রমাণ প্রদর্শন করা। এক্ষেত্রে কারখানা থেকে শ্রমিকদের রক্ত সংগ্রহ করে, শ্রমিকদের দেহের বিভিন্ন রোগের সঙ্গে সিসার সম্পর্ক দেখিয়ে গবেষণার ফল প্রকাশ করেন গবেষকেরা।

সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে গবেষকদের সহায়তা করেছে সরকার এবং রাজনীতিবিদরাও। ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়েই হলুদে ভেজাল মেশানো অপরাধ বলে ঘোষণা করে সরকার। বড় একটি হলুদ প্রক্রিয়াজাত কারখানায় সরকারি অভিযান পরিচালনা শুরু হয়। দেশের সর্বত্র পরিচালিত এসব অভিযান জনসচেতনতার লক্ষ্যে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। ভেজালমিশ্রিত হলুদ বিক্রির দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই পাইকারি ব্যবসায়ীকে দণ্ডও দেওয়া হয়েছিল।

প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও একই ধরনের ক্যাম্পেইন শুরু করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের। বাংলাদেশে হলুদে ব্যবহার করা বিষাক্ত সিসার বেশিরভাগই আমদানি হয়েছিল ভারত থেকে। তাই ভারতেই হলুদে ভেজালের হার সবচেয়ে বেশি এবং এ সমস্যা বাংলাদেশের চেয়েও তুলনামূলক গভীরে প্রোথিত বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে হলুদের সরবরাহ শিখলও বড়। ভারতে অল্পকিছু পাইকারি বিক্রেতা পুরো দেশে হলুদ সরবরাহ করে বলে প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল। তবুও বাংলাদেশে পরিচালিত ক্যাম্পেইনটির অভিজ্ঞতা ভারত বা পাকিস্তানের সব ধরনের নীতিগত সমস্যায় প্রয়োগযোগ্য বলে মনে করেন গবেষকরা।

সূত্র: দ্য ইকোনোমিস্ট, অনুবাদক: আসমা ইসলাম

   

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কৃষি কাজে ও কলকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ছোঁয়া বিভিন্ন সেক্টরে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে পরিবর্তন হয়নি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানে। বরং কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে কমছে তাদের কাজের সংকুলান। কমেছে আয়-রোজগারও।

রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার সংলগ্ন তুরাগ নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বালি ও কয়লা ভিত্তিক ব্যবসা। এক সময়ের জনপ্রিয় ও বহু লোকের কর্মসংস্থানের এই ব্যবসাতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মানুষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বালু লোডিং-আনলোডিং-এ যান্ত্রিকীকরণের কারণে কাজ হারিয়েছেন শ্রমিক। ফলে কমেছে শ্রমজীবী মানুষের কদর; প্রসার ঘটেছে উন্নত যন্ত্রাংশের।

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. হান্নান। দীর্ঘদিন ধরে গাবতলীতে বালু ও কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। হান্নান জানালেন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তার উপার্জনের প্রভাব ফেলেছে।

যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় বেড়েছে শ্রমিকের কদ/ছবি: নূর এ আলম


এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চার বছর এখানে এই কাজ করি। আগে ভালই ইনকাম হতো। এখন আর সেরকম ইনকাম হয় না। আগে এতো মেশিন ছিলো না সব কাজ আমরা করতাম। আর এখন সব মেশিনে করা হয়। শুধু যেগুলো মেশিন দিয়ে করা যায় না সেগুলো আমরা করি।’

তিনি আরও যোগ করেন, তাছাড়া আগে শ্রমিক কম ছিল। তখন মেশিনও ছিলো না। শ্রমিকদের চাহিদা ছিলো। কিন্তু এখন শ্রমিক বেশি, মেশিনও এসেছে। এক মেশিনে অনেক কাজ হয়; তাই চাহিদা কম। ইনকামও কম।

‘আগে দৈনিক দিন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা ইনকাম করতে পারতাম। আর এখন সারাদিন কষ্ট করে কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা ইনকাম করি। আবার কোন কোনদিন এর থেকে কমও ইনকাম হয়।’- বলেন এই শ্রমিক।

পাবনার বেড়ার কামরুজ্জামান ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন। টানা ১৬ বছর ধরে গাবতলী বালু ও কয়লার ঘাটে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

কঠোর পরিশ্রমের পর দিনশেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার/ছবি: নূর এ আলম

‘এক একটা টালি মেরে ২ টাকা ৪ আনা হিসেবে টাকা পাই। এখন যন্ত্র আসাতে লেবারের কোন কাজ কাম নেই। সব মাল এখন মেশিনে ওঠায়। এজন্য লেবারের কাজ কমে গেছে। টালির এখন আর রেট নেই। কাজ না করেও উপায় নেই কি করবো? ঢাকা শহরে আছি কাম না করলে চলবো ক্যামনে।’- বলেন কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, এখন দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। আগে ভালোই ইনকাম হতো। কিন্তু এখন ৫০০ টাকা ইনকাম করতেই কষ্ট হয়ে যায়। হবে না আগে যেখানে একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলে।’

মেহনতি এই মানুষটার কাছে শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা, না করলে কোন টাকা নাই। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করাই লাগে। এমনও মানুষ আছে ঘুম থেকে উঠে ভোরে কামে আসে। কাম না করলে সংসারই চলে না।

মূল্যস্ফীতি এখন লাগামহীন অবস্থায় আছে বলে মনে করে দেশের অন্যতম বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে শ্রমিকরা/ছবি: নূর এ আলম


তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে নাজমা বেগম। তার ও স্বামীর উপার্জনে কোন রকমে সংসার চলে নাজমার।

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘এই গরমে কাজ করা যায় না। সারাদিন কাজ করলেও খুব বেশি ইনকাম হয় না। জিনিসের যা দাম বেড়েছে তাতে। এই ইনকামের টাকায় পরিবার চালানো অনেক কষ্টের। তাই আপনাগো ভাই সারাদিন রিকশা চালায় আর আমি এই কয়লা-বালি টানার কাজ করি।’

আগের মতো আয় নেই জানিয়ে শ্রমজীবী এই নারী বলেন, ‘আগেতো ভালই ইনকাম করতাম। কিন্তু এখন আর পারি না। এখন বেশিরভাগ মালিক মেশিন দিয়ে মালামাল নামায় তাই আমাদের লাগে না। আর সেভাবে ইনকামও হয় না। এখন কোন দিন ৩০০ টাকা, কোন দিন ৪০০ টাকা ইনকাম করি।’

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বার্তা২৪.কম বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সে হারে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। সব সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দিলে শ্রমিক বাঁচবে না। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা করুণ। তাদের শ্রমের দামের বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবে না।’

;

দাবদাহে দিনমজুররা বঞ্চিত শ্রম অধিকার থেকে

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
দাবদাহে দিনমজুররা, ছবি: নূর এ আলম

দাবদাহে দিনমজুররা, ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকার আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে তুরাগ নদীর তীরে নোঙর করা বালু‌ বহনকারী চারটি লোহার তৈরি বাল্কহেড মধ্যাহ্নের প্রখর রোদে উত্তপ্ত হয়ে আছে। এগুলোর উপর দিয়ে হেঁটে প্রায় ১০০ জন পুরুষ ও নারী শ্রমিক দলবেঁধে মাথায় করে প্রত্যেকে প্রায় ২৫ কেজি ওজনের ভেজা বালু বাঁশের তৈরি টুকরিতে বহন করে নিয়ে নদীর তীরে একটি নির্ধারিত স্থানে ফেলছেন। আশ্চর্যের বিষয়, এত পরিশ্রম করেও তাদের মুখ ও‌ শরীর ঘামে ভেজেনি।

“অতিরিক্ত গরমে আমাদের ঘাম বাষ্প হয়ে গেছে,” বলেন ৫৮ বছর বয়সী আব্দুল খালেক। তিনি দুই দশক আগে নেত্রকোনা জেলা থেকে ঢাকায় এসে দিনমজুর হয়েছিলেন।

প্রখর রোদে পরিশ্রম করেও শ্রমিকদের মুখ ও‌ শরীর ঘামে ভেজেনি/ছবি: নূর এ আলম


গরমে হাঁপিয়ে ওঠা শ্রমিকরা কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ কেউ নিকটস্থ এক মসজিদ থেকে আনা বোতলে ভরা পানি‌তে চুমুক দিচ্ছেন।

গত কয়েক বছরের মতো, ২০২৪ এর গ্রীষ্মকাল এমন দিনমজুরদের কাছে এক প্রকার জুলুম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা তাপপ্রবাহ মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু বেশিদিন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসেও থাকতে পারছেন না। তারা যে বালু খালাস করেন, তার বাজারমূল্য বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়েনি‌। এমনকি অপ্রাতিষ্ঠানিক দিনমজুর হওয়ায় তাদের কোন শ্রম অধিকারও নেই।

“ঈদের ছুটি শেষে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহেই বেশির ভাগ কর্মচারী ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে আমিন বাজারে বালু খালাস শুরু হয়। গরম আবহাওয়ার মধ্যে শ্রমিকরা আসেনি,” বললেন শ্রমিকদের সর্দার (আসলে বালুর ঠিকাদারের ম্যানেজার) মশিউর রহমান।

গ্রীষ্মকাল যেন দিনমজুরদের কাছে এক প্রকার জুলুম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে/ছবি: নূর এ আলম


সাধারণত এক বাল্কহেড থেকে সাড়ে নয়শো স্কয়ার ফুট বালু নামাতে ১৫০ জন শ্রমিক দুই দিন সময় নেন, অথচ মশিউর পেয়েছেন প্রয়োজনের এক- চতুর্থাংশ লোকবল।

মশিউরের কথায় মনে পড়ল আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার বার্তা। গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের মানুষ ৭ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে। চরম তাপপ্রবাহে মানুষের, বিশেষ করে যারা দিনের বেলায় খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন, তাদের কাজের ক্ষমতা কমে যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টার ২.২ শতাংশ বা ৮০ মিলিয়ন নিয়মিত চাকরি ফুরিয়ে যাবে‌ শুধুমাত্র বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে।

এক নারী শ্রমিক মাথায় করে ভেজা বালু বাঁশের টুকরিতে করে  নদীর তীরে একটি নির্ধারিত স্থানে নিচ্ছেন/ছবি: নূর এ আলম


ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে এমনিতেই এখানকার তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বেশি থাকে।‌ এরপর যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ে তবে অবধারিত ভাবে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত ক্ষতিকর প্রভাব বাড়বে।

২০১৯ সালে আইএলও জানিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপপ্রবাহে বাংলাদেশ মোট কর্মঘণ্টার ৪.৮৪ শতাংশ হারাবে।

কম মজুরির কর্মই যাদের নিয়তি

জামালপুর থেকে আসা চল্লিশ বছর বয়সী নার্গিস বেগম ১২ বছর আগে আমিন বাজারে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময় তাকে ১০ টুকরি বালু খালাসের জন্য ১০ টাকা দেওয়া হত। বর্তমানে সাত টুকরি বালু খালাসের জন্য তিনি একই পরিমাণ মজুরি পেয়ে থাকেন। ১২ বছরে এই পার্থক্য খুবই নগণ্য। অন্যদিকে বালুর দাম বেড়েছে বহুগুণ।

“এক ট্রাক ভর্তি সাদা বালুর (নদী খননে প্রাপ্ত পলি) দাম ছিল ২ হাজার টাকা, যা এখন ৫ হাজার টাকা। গত ১০ বছরে সিলেটের লাল বালুর দাম ৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৪ হাজার টাকা হয়েছে,” বলেন শ্রমিক সর্দার মশিউর।

বালুর দাম বেড়েছে বহুগুণ, তবে শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি/ছবি: নূর এ আলম


তাহলে শ্রমিকদের মজুরি কেন বাড়েনি, তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বালুর বাজার এখন অনেক। অনেক ব্যবসায়ী এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। ফলে আমিন বাজারের মহাজনদের (যারা শ্রমিকদের মজুরি দেন) আয় কমে গেছে। যদি তারা ভাল উপার্জন করত তবে শ্রমিকদের ভাল মজুরি দেওয়া হত”; মশিউর তার মহাজনের পক্ষ নিলেন।

লোডিং-আনলোডিং সেক্টরে যান্ত্রিকীকরণেও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। এমনকি অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।

আমরা যখন শ্রমিকদের সাথে কথা বলছিলাম, তখন আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনে অন্তত পাঁচটি বেসরকারি ক্রেন দেখা গেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল দুই।

“একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক পাঁচ ঘণ্টায় একই কাজ করতে পারে”; শ্রমিক খালেক ব্যাখ্যা দিলেন যন্ত্রায়ন কীভাবে তাদের জীবিকার উপর প্রভাব ফেলছে।

অসহনীয় আবহাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, খালেকের মতো শ্রমিকরা শুধুমাত্র তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য এই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

তুরাগের তীরে কয়লার স্তুপ/ছবি: নূর এ আলম


খালেকের স্ত্রী একজন ঠিকা গৃহকর্মী এবং একমাত্র ছেলে মোসলেম উদ্দিন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কিন্তু তাদের মজুরি পারিবারিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।

শ্রমনীতি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বেশ কিছু পরিকল্পনা এবং নীতি আছে, যেমন জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নীতি, যেগুলো শ্রমিকের স্বাস্থ্য রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল। বিশেষ করে, ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন এ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিকে স্বীকৃতি দেয়া আছে। কারণ, তাপপ্রবাহে মৃত্যুহার বৃদ্ধি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে শ্রমিকরা যাতে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে কী করতে হবে তা পরিষ্কার নয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের পরিচালক কোহিনুর মাহমুদ বলেন, দিনমজুরদের নিয়োগকর্তাদের উচিত তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা তাপপ্রবাহের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারেন।

"দুর্ভাগ্যবশত, নিয়োগকর্তাদের ওপর কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ, বালু খালাসিদের মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কোন শ্রম অধিকার নেই”, কোহিনুর বলেন।

তিনি শ্রমিকদের নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

;

ছেলেরা খাবার দেয় না, ভিক্ষার থলি হাতে পথে পথে জাহানারা!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাবা, গতবছর কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খাইছিলাম। এর পর আজ পর্যন্ত একটা কুডি (টুকরো) খাইতারলাম না। আগামী কোরবানির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। এইবার রোজার ঈদেও একটু ভালো খাওন (খাবার) পাইনি। মাইনসে কিছু সেমাই দিছিলো কিন্তু জন্ম দেয়া ছেলেরা আমারে কিছুই দেয় না কোনো সময়ই। ঈদেও কিছু দিলো না। তারা দিলে মনডায় শান্তি লাগতো। তবুও তারা সুখী হউক’!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবং আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষক জাহানারা (৬৫)।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কর্মে অক্ষম হয়ে ২০ বছর ধরে ভিক্ষার থলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধ জাহানারা। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে শরীর। একটি ব্যাগ আর লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে চলেছেন কটিয়াদী বাজারের পথে পথে! এই দোকান থেকে ওই দোকান!

জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দুই বছর পর থেকে টেনেটুনে চলেছিল সংসার তাদের। স্বামী অলস প্রকৃতির ও ভবঘুরে হওয়ায় কোনো সময়ই সংসারে সচ্ছলতা আসেনি।

অভাবের কারণে একসময় তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে স্বামী সফর উদ্দিনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। বয়সের কারণে জাহানাকে মানুষ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন জাহানারা, যা আজ অব্দি চলছে। ২০ বছর পার হতে চললো।

জাহানারা, সফর উদ্দিন দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা সবাই যার যার নিজেদের পরিবার নিয়ে সংসার করছে। কেউই মা-বাবার খোঁজ নেয় না। মেয়েরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিলেও ছেলেরা একদমই নেয় না জানালেন জাহানারা।

ছেলেরা খাবার দেয় না! ভিক্ষার ঝুলি হাতে পথে পথে ভিক্ষা করেন জাহানারা, ছবি- বার্তা২৪.কম

জাহানারার নামে একটু জমি ছিল। সেটুকুও ছেলেরা লিখে নিয়েছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাবা-মা ঝোপঝাড় সংলগ্ন কবরস্থানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বেঁচে থাকার পরেও কবরস্থানই যেন হলো বাবা-মায়ের হলো আপন ঠিকানা! বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে আর রাত হলেই শিয়াল ও বন্য প্রাণীর শব্দে রাত কাটে তাদের।

তার সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, গত কোরবানির ঈদে মানুষের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছেন। এরপর ইচ্ছে হলেও কাউকে বলার ও কিনে খাওয়ার কোনোটাই সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। মাঝে-মধ্যে মানুষের দেওয়া মুরগি পেলেও অন্য মাংস তাদের জন্য স্বপ্ন হয়েই আছে। সে কারণে সারাবছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার কটিয়াদী বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন জাহানারা। পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। বয়স্ক ভাতা যা পান, তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহের খাবার খরচ মেটাতে হয়।

বৃদ্ধ জাহানারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনটা ছিঁড়া কাপড় দিয়ে বছর পার করছি। এবার ঈদে একটি কাপড়ও পাইনি। ফেতরার দানের আড়াইশ টাকা শুধু পাইছি। মানুষ মাঝে-মধ্যে খাইতে দ্যায়। বাকি দিনগুলো কেমনে যে পার করি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কিছু'!

 

 

;

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;