কোনিয়া কন্যার বাংলা ভাষা প্রেম!
বাংলা ভাষার শ্রুতি মধুরতায় মুগ্ধ তুরস্কের কোনিয়া কন্যা ডেনিস বুলকুর বাংলার প্রেমে পড়েছেন। জালালদ্দিন রুমির শহরখ্যাত কোনিয়া প্রদেশের বাসিন্দা ডেনিস ২০০৮ সালে বেড়াতে এসে বাংলা ভাষার প্রতি মুগ্ধ হন তিনি।
কয়েক বছরের সাধনায় তিনি বাংলা ভাষা বলা, পড়া ও লেখা শিখে নিয়েছেন।
ভাষার টানে ২০১৫ সাল দু’বছর বাংলাদেশে কাটিয়েও গেছেন। এমনকী তুর্কি প্রেমিককে বিয়ে করার শর্ত দিয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে বিয়ের ভেন্যু। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বাংলায় বই লেখার স্বপ্ন নিয়ে এই কোনিয়াকন্যা আবার বাংলাদেশ আসছেন!
এ প্রতিবেদকের মুখোমুখি ও ফোনে ডেনিস বুলকুর মেলে ধরেছেন তাঁর বাংলাপ্রীতির আদ্যপান্ত।
তিনি বলেন, “২০০৮ সালে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তুর্কি ভাষা জানা এক বাংলাদেশির সঙ্গে পরিচিত হই। তখন ‘শুভ সকাল’! ‘আপনার দিনটি শুভ হোক’! ‘ভালো থাকুন’! এসব বাক্য শুনে বাংলা ভাষার প্রেমে পড়ে যাই। এরপর যত মানুষের সঙ্গে মিশেছি, তত এই ভাষাতেই কথা বলেছি। পরে বিনিয়োগের সম্ভাবনার সন্ধানে বাংলাদেশ ভ্রমণ যত বাড়ে, তত বাড়ে আমার ভাষা তৃষ্ণা”!
ডেনিস বলেন, ‘বাংলা ভাষা শেখা ও এ দেশের সংস্কৃতি বুঝতে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাস শুরু করি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের বড় বড় শহরে সময় কাটাই। ওই সময় তুর্কি প্রেমিককে বিয়ের করার শর্ত হিসেবে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করতে হবে এমন শর্ত দিলে, তিনি তাতে সম্মত হন’।
ডেনিস দাবি করেন, ২০১৭ সালে ঢাকাস্থ তুরস্ক দূতাবাসে ইতিহাসের প্রথম কোনো তুর্কি যুগলের বিয়ে সম্পন্ন হয়। ডেনিস বলেন, পরে তিনি দেশে ফিরে গিয়ে তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশি বন্ধুদের সহায়তায় বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখেন।
তিনি বলেন, “ভাষার ব্যাপারে আমি নেলসন ম্যান্ডেলার অমৃতবাণী অনুসরণ করি। ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘যদি তুমি কারো সঙ্গে সে বুঝতে পারে, এমন ভাষায় কথা বলো, তাহলে তা তাঁর মস্তিষ্কে পৌঁছাবে, আর যদি তাঁর মাতৃভাষায় কথা বলো, তাহলে তাঁর হৃদয়ে পৌঁছাবে।”
তুরস্কের ইস্তাম্বুল বসবাসরত কোনিয়া প্রদেশের এই উদীয়মান ব্যবসায়ীকে বাংলাভাষা ও বাংলাদেশপ্রীতির জন্য আঙ্কারাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কোনিয়ার অনারারি কনসাল জেনারেল নিযুক্ত করেছে।
এই সম্মানীয় পদ পেয়ে ডেনিসের বাংলা ভাষাপ্রীতি আরো বেগবান হয়। তিনি বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। ডেনিসের কাছ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ তুরস্কের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটে চালু, তুরস্কের বাণিজ্যিক শহর ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট চালু, বাংলাদেশের জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন সেক্টরে তুর্কি বিনিয়োগ তরান্বিত করা, তুরস্ক-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল- ডেইক প্রতিষ্ঠা করা, সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বাড়াতে তিনি ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।
বাংলা ভাষা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে যাওয়াই ডেনিসের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানা গেছে। তাঁর কাছ থেকে জানা গেছে, তিনি আঙ্কারা দূতাবাসের সহায়তায় ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটির তুর্কি অনুবাদ ও তা ই-বুক আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন, যা অনলাইনে আঙ্কারায় বাংলাদেশের দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনকালে তুলে ধরা হয়।
তিনি কোনিয়া প্রদেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ নামে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেন। জালালুদ্দিন রুমিকে কেন্দ্র করে কোনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সিলেটে নগরীর আধ্যাত্মিক যোগসূত্র রয়েছে বলে দু’নগরের মধ্যে ‘সিস্টার সিটি’ সমঝোতা সই, কোনিয়া প্রদেশে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিউদ্যান স্থাপন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন, কোনিয়ায় বিনামূল্যে অনলাইনে বেসিক বাংলা ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনার মতো কাজ করেছেন।
ডেনিস জানান, বাংলাভাষা নিয়ে তাঁর স্বপ্ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর পড়াশুনার পর বাংলা ভাষায় বই লেখা।