অভাবের সংসারে মেরিন অ্যাকাডেমির ভর্তি ফি মিলছে না শামীমের!
মা-বাবার স্বপ্ন, ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে লেখাপড়া করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে। সে লক্ষ্যে যদি সন্তান এমন ভর্তির সুযোগ পায়, তাহলে দেখা যায় খুশির বন্যায় ভেসে যায় পরিবার। অথচ এর উল্টোটা হলে হতাশা এসে গ্রাস করে সবাইকে। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় মন থাকে আচ্ছন্ন।
তেমনি দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটতে চলেছে সাতক্ষীরার ছেলে শামীম কবির নীরবের পরিবারে!
সে তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে চট্টগ্রামের মেরিন অ্যাকাডেমিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে তা যেন এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলেছে! অর্থের অভাবে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে শামীমের পরিবার!
তার মা-বাবার দুঃশ্চিন্তার একটাই কারণ যে, ছেলেকে মেরিন অ্যাকাডেমিতে কীভাবেই-বা ভর্তি করাবেন আর তার লেখাপড়ার খরচ চালাবেনই-বা কী করে! অভাবের সংসারে দু’বেলা ভাতই জোটে না, সেখানে ছেলের ভর্তির টাকা, লেখাপড়ার খরচ কীভাবে জোগাবেন তারা, তা ভেবে হতাশায় ভেঙে পড়েছে শামীমের মা-বাবা!
সুযোগ পেয়েও চট্টগ্রামের মেরিন অ্যাকাডেমিতে ভর্তির অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরা শহরের চা-বিক্রেতার ছেলে শামীম কবির নীরবের!
জানা গেছে, মেরিন অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হতে লাগবে ৫০ হাজার টাকা! এ ছাড়া মেডিকেল পরীক্ষাসহ বিভিন্ন খরচসহ প্রায় এক লাখ টাকার দরকার হবে তার। কিন্তু গরিব চা-বিক্রেতা বাবার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। সে কারণে মেরিন অ্যাকাডেমিতে ভর্তিতে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন শামীম ও তার পরিবারের সবাই।
মেধা তালিকায় শামীমের স্থান ৩৫তম
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মেরিন অ্যাকাডেমিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শামীম কবির নীরব মেধা তালিকায় ৩৫তম স্থান অধিকার করেন। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ভর্তির শেষ সময়। এর মধ্যে ভর্তি হতে পারলে তার আসনটি শূন্য ঘোষিত হবে। এরপর সে আসনে অন্য কাউকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে।
জানা যায়, শামীম কবির নীরবের বাবা ছিদ্দিক মোড়ল সাতক্ষীরা শহরের শিশু হাসপাতালের উল্টোদিকে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে চা বিক্রি করে চলে তাদের সংসার।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চা বিক্রি করে সংসার চালানো এমনিতে দায় তাদের। এর মধ্যে ছেলে শামীমকে লেখাপড়া করিয়েছেন তিনি। ছিদ্দিক মোড়ল জানিয়েছেন, এই অভাব-অনটনের মধ্যে সামান্য চা বিক্রি করে কী করে ছেলের ভর্তির জন্য একলাখ টাকা জোগাড় করবেন, তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না! এ নিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
শামীম ২০২০ সালে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ এবং ২০২২ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
শামীম বার্তা২৪কে বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মেরিন অ্যাকাডেমিতে ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। এতে মেধা তালিকায় ৩৫তম স্থান অধিকার করেছি।
এখন ভর্তি হতে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। এ ছাড়া মেডিকেল পরীক্ষায় আরো ১০ হাজার টাকাসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে প্রায় এক লাখ টাকার মতো লাগবে বলে জেনেছি।
আমার বাবা সামান্য চায়ের দোকানদার। আমার জন্ম গরিব পরিবারে! কী দিয়ে কী করবো, তা বুঝতে পারছি না! আমি কি তাহলে মেরিন অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হতে পারবো না! এমন কেউ কি নেই যিনি আমাদের বিপদের এই দিনে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারেন! আমার পরিবারের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতে পারেন!
শামীমের বাবা ছিদ্দিক মোড়ল বলেন, তিন ছেলের মধ্যে শামীম বড়। ছেলের সাফল্যে আমরা অনেক খুশি! ছোট একটা চায়ের দোকানে পাঁচজনের সংসার চলে।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়াতে গিয়ে ছেলের পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে প্রতি মাসে সেই টাকা জুগিয়েছি। বর্তমান বাজারে সব জিনিসের যে দাম, তাতে আমাদের পাঁচজনের সংসার ঠিক মতো চলে না। ভর্তির এত টাকা কোথা থেকে পাবো!
তিনি বলেন, সমাজের কোনো দানশীল ব্যক্তি যদি ছেলেটার লেখাপড়ার ভার বহন করে, তাহলে সারাজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো! কেউ যদি আমার ছেলের বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমার ছেলে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। বাবার সঙ্গে দোকানে কাজ করেও এসএসসিতে গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়েছে শামীম।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি সে ভর্তি হতে না পারে, তাহলে ওর আসন শূন্য ঘোষণা করবে মেরিন অ্যাকাডেমি। কেউ কি আছেন আমাদের এ স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসার!