চলছে মৌসুমি মৌয়ালদের ব্যস্ততা
সরিষার হলুদ ক্ষেত, রবি ফসলের মাঠে আসা মুকুলের সমারোহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমি মৌয়ালরা। যারা বাক্সের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। সরকারি হিসেবে পাবনা জেলায় ৪ হাজার ২০০ মৌ বাক্স বিনামূল্যে মৌয়ালদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য এ বাক্সগুলো থেকে ৫৮ টন মধু সংগ্রহ। আর শতাধিক মৌসুমি মৌয়াল মাঠে নেমেছেন মধু সংগ্রহের জন্য। তাদের লক্ষ্য ২০০ টন মধু সংগ্রহ।
সরকারি ও বেসরকারি হিসাব মতে, কয়েক বছর ধরেই এ জেলায় টার্গেট অতিক্রম করছে মধু উৎপাদনে। গেল বছরেও (২০১৭ সাল) সরকারিভাবে লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ টন থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ৭২ টন। আর বেসরকারি মৌয়ালদের উৎপাদন ছিল প্রায় ২০০ টন মধু।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিগত দিনগুলোর মধু উৎপাদনের ধরণ হিসেবে এবং মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবারে জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। ওই প্রকল্পের আওতায় মৌ চাষিদের বিনামূল্যে বাক্স দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোন্দকার মোতালেব হোসেন জানান, সরিষার ক্ষেতে মৌবাক্স স্থাপন করে দ্বিমুখী উপকার পাওয়া যায়। একদিকে মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করবে, এতে সরিষার পরাগায়ণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ফলন বেশি হবে। আপরদিকে মধু বিক্রি করে লাভবান হবেন চাষি। সেই দিকগুলোকে সামনে রেখে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ এবং মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জেলার সাঁথিয়া উপজেলার আত্রাইশুকা গ্রামের ভ্রাম্যমাণ মৌয়াল মাজেদ আলী বলেন, ‘এ জেলায় এবারে শতাধিক ভ্রাম্যমাণ মৌয়াল রয়েছে। প্রতিদিন একজন মৌয়াল ১০ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করতে পারেন। সে হিসেবে চলতি মৌসুমেও ২০০ টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।’
মৌচাষি সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে শুধু মৌচাষিদের মধ্যে ৮০ টন মধু সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া জেলায় ভ্রাম্যমাণ মৌয়ালরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ঝোঁপ-জঙ্গলও গাছের নির্মাণকৃত মৌচাক থেকে প্রচুর পরিমাণ মধু সংগ্রহ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদিত মধু ভারতের ডাবর, বাংলাদেশের প্রাণ ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। তবে সরিষা থেকে উৎপাদিত মধুর দাম কম পাওয়া যায়। বাজারে কালোজিরা ফুলের মধুর চাহিদা যেমন বেশি অনুরূপ দামও ভালো পাওয়া যায়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আজাহার আলী বলেন, ‘পাবনায় সরিষার আবাদ বেশি হওয়ার কারণেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌয়ালরা এসে মধু সংগ্রহ করেন। চলতি মৌসুমে জেলার নয় উপজেলার ৪০ জন খামারির মধু উৎপাদন বাড়াতে একটি প্রকল্পও নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় মৌচাষিদের বিনামূল্যে মৌবাক্স দেওয়া হয়। চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২০০ টি বাক্স বিতারণ করা হয়েছে। এছাড়া মৌচাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পাবনা জেলার মুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৮ টন। ইতোমধ্যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার পথে।’