পেঙ্গুইন পোস্ট অফিসে চাকরির বিজ্ঞপ্তি, শর্ত ২ সপ্তাহে একবার গোসল

  • ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চাকরির জন্য আবেদনপত্র জমা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে অ্যান্টার্কটিকার বিখ্যাত ‘পেঙ্গুইন পোস্ট অফিস’। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে স্ব-প্রণোদিত ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। এবং প্রতি দুই সপ্তাহে একবারের বেশি গোসল করলে জরিমানা করা হবে ।

অদ্ভূত এই চাকরির বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ। ‘পেঙ্গুইন পোস্ট অফিস’ নাম টা শুনে বেশ অদ্ভুত লাগছে তাই তো!

বিজ্ঞাপন

আন্টার্কটিকা মহাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত গৌডিয়ার দ্বীপ। যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ৮ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত এই ছোট্ট দ্বীপেই সর্বপ্রথম গড়ে উঠেছিল যুক্তরাজ্যের গবেষণাকেন্দ্র। তবে আদতে এই গবেষণাকেন্দ্র একটি পোস্ট অফিস। বিজ্ঞানীদের কথায় যার পরিচিত ‘পেঙ্গুইন পোস্ট অফিস’ নামে।

কিন্তু এমন আশ্চর্য নাম দেওয়ার কারণ কী এই জায়গার? আসলে এই দ্বীপে রাজত্ব গেন্টু প্রজাতির পেঙ্গুইনের। মূলত গ্রীষ্মকালে এই দ্বীপ হয়ে ওঠে তাদের ব্রিডিং গ্রাউন্ড বা প্রজননকেন্দ্র। ‘পেঙ্গুইন পোস্ট অফিস’ নামের উৎপত্তিও সেখান থেকেই। একটা সময় শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের অভিযাত্রী, বিজ্ঞানী এবং গবেষরাই মূলত পরিভ্রমণে আসতেন এই দুর্গম অঞ্চলে। তবে বর্তমানে এই দ্বীপ হয়ে উঠেছে পর্যটকদেরও অন্যতম গন্তব্য।

বিজ্ঞাপন

প্রতি বছর এই অফিসে চাকরি করার অসংখ্য গবেষকরা আবেদনে করেন। কয়েক হাজার মনোনয়নপত্রের মধ্যে থেকে মাত্র চার-পাঁচ জন গবেষককে শেষ অবধি ছাড়পত্র দেয় যুক্তরাজ্যের গবেষকমহল। এই বছর তিনটি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। একইসাথে শর্ত দেয়া হয়েছে আবেদনকারীকে অবশ্যই যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে।

ছবি: সংগৃহীত

আবেদনকারীদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ম্যানচেস্টারের দাতব্য ব্যবস্থাপক কেটি শ। তিনি এই অফিসে কাজ করতে এতটাই আগ্রহী যে তিনি এক পায়ে অ্যান্টার্কটিকার মানচিত্র এবং অন্য পায়ে এক্সপ্লোরার আর্নেস্ট শ্যাকলটনের ট্যাটু করিয়েছেন।

কেটি তার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল অ্যান্টার্কটিকার একজন সামুদ্রিত জীববিজ্ঞানী হওয়ার। এমন চাকরি পেলে তো ভালোই হয়।
হয়তো অনেকেই মনে করছেন, অ্যান্টার্কটিকা এক বিরল জনপদ, লোকজন নেই বললেই চলে। সেখানে চাকরি হলে নিশ্চয় আরাম আয়েশে সময় কাটানো যাবে। কিন্তু না।

স্কাই নিউজ বলছে, পেঙ্গুইন পোস্ট অফিস থেকে বছরে প্রায় ৮০ হাজার চিঠি বিলি করা হয়। বিভিন্ন প্রমোদতরীর যাত্রীরা এসব চিঠি অয়াঠিয়ে থাকেন। চিঠি বিলির পাশাপাশা এখানকার কর্মীদের গবেষণাও করতে হয়।

চাকরির বিজ্ঞপ্তিটিতে আরও বলা হয়েছে, যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের কাজ হবে চিঠি বিলি করা, পোস্ট কার্ড, স্ট্যাম্প ও উপহার সামগ্রী বিক্রি করা এবং পেঙ্গুইন গুণে রাখা। এ অঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার পেঙ্গুইন রয়েছে।

আবেদনপত্রে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আমাদের দ্বীপে কোনও প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা নেই, তাই গোসল এবং অন্যান্য ওয়াশিং সুবিধাগুলোর খুব সংকট এখানে। ভিজিটিং জাহাজ থেকে জেরি ক্যানে পানি সংগ্রহ করা হয়। পোর্ট লকরয়ে কোনও ঝরনার সুবিধা না থাকায় কর্মীদের এই পানি দিয়েই গোসলের কাজ সারতে হবে। পরিদর্শনকারী জাহাজগুলো প্রতি সপ্তাহে প্রায় একবার ঝরনার পানি সরবরাহ করবে। তবে আবহাওয়ার পরিস্থিতি খারাপ হলে আপনাকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত গোসল না করেই থাকতে হবে।

তাই কর্মীদের গোসলের ওপর সতর্কতা জারি করা হয়েছে ও জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে কেউ পানির অপচয় না করেন।