সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

   

বান্টি গ্রাম: উড়ছে রং-বেরঙের কাপড়



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই বান্টি গ্রাম। বাটিকের গ্রাম বলেই এর পরিচিতি। এখানে ঘরে ঘরে বাটিক-ব্লকের কাজ চলে। গ্রামজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কারখানা। এই গ্রামে দিনরাত কাজ করেন হাজারো শ্রমিক। এই কাজে তাদের সংসার চলে। বান্টি গ্রামের কর্মময় জীবন চিত্র তুলে এনেছেন বার্তা২৪.কম এর ফটো এডিটর নূর এ আলম। 

বান্টি গ্রামে থ্রিপিস, ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারে বাটিকের কাজ করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


 

দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসব কিনতে আসেন। তাদের হাত ধরেই এসব কাপড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে


কাপড় রং করার আগে প্রতিটি কারখানায় গরম পানিতে রং প্রস্তুত করা হয়/ছবি: নূর এ আলম

 

কাপড়ের রং পাকা করতে সেদ্ধ করা হচ্ছে।/ছবি: নূর এ আলম


কয়েক ধাপে চলে কাপড়ে বাটিকের করার কাজ/ছবি: নূর এ আলম


রং মেশানোর প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে কিনা হাত দিয়ে দেখছেন একজন/ছবি: নূর এ আলম


গ্রামে কাপড়ে রঙ মেশানোর কাজ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে/ছবি: নূর এ আলম


বাটিকের গ্রামের অনেক বাড়িতে বসানো হয়েছে লুম মেশিন। এই মেশিন দিয়ে নানান ধরনের নকশা করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


লুম মেশিনে চলছে কাপড় বুননের কাপড়/ছবি: নূর এ আলম


কাপড়ে রঙ করা শেষে শুকাতে দেওয়ার আগে পানি ঝরিয়ে ফেলা হয়/ছবি: নূর এ আলম


রং করা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন এক নারী শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


বান্টি গ্রামের নারী পুরুষ সবাই ব্লক বাটিক ও প্রিন্টের সঙ্গে জড়িত/ছবি: নূর এ আলম

রং করা কাপড় ছাদে ও মাঠে শুকাতে দেওয়া হয়/ছবি: নূর এ আলম


কড়া রোদে শুকানোর পর তা কারখানায় নিয়ে আসেন শ্রমিকরা।/ছবি: নূর এ আলম


প্রচন্ড তাপদাহে বাটিকের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। /ছবি: নূর এ আলম


;

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;