মুক্তিযুদ্ধে সত্যিকারের দূর্গ হয়ে উঠেছিল যে বাড়ি



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
আহমদ মমতাজের সেই পৈত্রিক বাড়ি যা মুক্তিযুদ্ধের শেল্টার সেন্টার হিসেবে রক্ষা করেছিল অগণিত মানুষকে

আহমদ মমতাজের সেই পৈত্রিক বাড়ি যা মুক্তিযুদ্ধের শেল্টার সেন্টার হিসেবে রক্ষা করেছিল অগণিত মানুষকে

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম থেকে মীরেরসরাইয়ের শান্ত নয়নাভিরাম এক জনপদ পশ্চিম আলিনগর। বর্তমানে যোগাযোগের প্রভূত উন্নতি হওয়ায় এক ঘন্টায় পৌছে যাওয়া যায়। কাছেই সুনির্মল স্রোতস্বিনী ফেনী নদী প্রবাহমান। গ্রামীণ জনপদ যে ঐশ্বর্য আর মোহময়তা নিয়ে আবহমানকাল ধরে আমাদের মুগ্ধ করে আসছে, অলিনগরও তার ব্যতিক্রম নয়।

সীমান্তগ্রাম হিসেবে এর বাড়তি গুরুত্ব ছিল দেশভাগের পর থেকেই। পৃথক রাজনৈতিক মানচিত্র থাকলেও ঐতিহাসিক, ভাষা ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতার কারণে দুই প্রান্তের মানুষেরা ফেনী নদী পেরিয়ে পরস্পরের কাছে আসতেন সৌহার্দ্য বিনিময় করতে। গোত্র-সম্প্রদায়ের সংকীর্ণ সীমা ছাড়িয়ে অধুনা পূর্ববঙ্গে সম্প্রীতি তখনও বিরাজমান আলিনগরে।

প্রীতির বন্ধনে জড়ানো মানুষদের এই গ্রামে একাত্তর এক নতুন বীভিষিকা হয়ে আসে, যেমন এসেছিল দেশের অন্যান্য জনপদেও। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সেই ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলো।’ বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বান পৌছেছিল অলিনগর গ্রামেও। এই গ্রামের একটি বাড়ি সত্যিই মুক্তিযোদ্ধাদের এক দুর্জয় দূর্গ হয়ে উঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এ বাড়িটিতেই নিরাপদে আশ্রয় নেন মুক্তিযোদ্ধা সহ অন্যান্য মানুষেরা।

গবেষক রাইয়ান মমতাজ ঢাকা বাস করলেও প্রাণের টানে প্রায়ই ফিরে যান স্বামীর বাড়িতে। সেখানে স্থানীয়দের তিনি শোনান মুক্তিযুদ্ধের গল্প

অকাল প্রয়াত খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ও গবেষক আহমদ মমতাজের পৈত্রিক বাড়িটিই হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই দূর্জয় ঘাঁটি। যুদ্ধে পাকিস্তানি বর্বরতার মাঝে দূরদূরান্ত থেকে আগত মানুষদের কাছে এই বাড়ি ছিল নির্ভরতার জায়গা। যেখানে এক হাড়িতে রান্না হতো হিন্দু-মুসলিম সবার জন্য। যাদের অসুবিধা হতো তাদের জন্যও ছিল পৃথক ব্যবস্থাও।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রামগড় হয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীরা এই বাড়িটিতে ঠাঁই পেতেন। বাড়িতে বসতঘর ছাড়াও বড় কাচারিঘর, ঢেকিঘর সহ বেশ কয়েকটি ঘর ছিল, যা সব অবারিত থাকতো আগত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য। আশ্রয়প্রার্থী বেড়ে যাওয়ায় অগত্যা গোয়াল ঘরে মাটি ফেলে বসবাসের উপযোগী করে দিতেও কুণ্ঠিত ছিলেন না আহমদ মমতাজের বাবা আবদুল বারিক সওদাগর।

আশ্রয়প্রার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা কার্যে বাবার সার্বক্ষণিক পাশে থাকতেন পুত্র আহমদ মমতাজ। তাঁর মমতাময়ী মা আমেনা খাতুনকেও কম ধকল নিতে হয়নি এর জন্য।

ফেনী নদীর এই পথেই ওপারে ভারতে আশ্রয় নিতো শরণার্থীরা

আহমদ মমতাজের সহধর্মিনী লেখক-গবেষক রাইয়ান নাসরিন বলেন, ‘মমতাজের বাবা নৌকার ব্যবস্থা করে নিরাপদে আশ্রয়ে থাকা মানুষদেরকে নদীর ওপারে ভারতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। অবিভক্ত বাংলার ব্যাবসায়ী হওয়ার সুবাধে ভারতেও অনেক ব্যবসায়ী বন্ধু ছিল। তাদের মাধ্যমে তিনি এপার থেকে যাওয়া মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন।’

‘যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকিস্তানি আর্মি বাড়িটা দখল করে নেয়। নিজেদের শেল্টারের জন্য ঘরের সব তছনছ করে প্রতিটি ঘরে বাংকার তৈরি করে। যার কারণে বাড়িটা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া থেকে বেঁচে যায়’-বলেন রাইয়ান নাসরিন।

স্বামীর প্রয়াণের পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য এই বাড়িটিকে আগলে রাখা রাইয়ান মমতাজ বলেন, ‘আহমদ মমতাজ সারা জীবন বাড়িটাকে অপরিবর্তিত রেখেছেন। বাড়িটা তাঁর পিতার হাতে নির্মিত। বাড়িটির বয়স প্রায় ৮০ বছর। যুদ্ধকালীন সময়ের এ ধরনের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি সারাদেশে অবিকৃত ভাবে খুব বেশি নেই। আহমদ মমতাজের নিজে হাতে সংরক্ষণ করে রাখা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এই অমূল্য গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বাড়িটিকে স্থায়ী ভাবে সংরক্ষণের ব্যাবস্থা করা প্রয়োজন।’ এই কর্মযজ্ঞে তিনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।

আহমদ মমতাজের এই বাড়ি ও এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের অকথিত ইতিহাসকে অমরত্ব দিতে একটি ট্রাস্ট গঠনের আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রকৃত জনযুদ্ধ হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধ কত মানুষের আত্মত্যাগে চূড়ান্ত বিজয়ে পৌছেছিল তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আহমদ মমতাজের এই বাড়িটিকে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবাহী স্থান হিসেবে একটি সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগারে রূপ দিতে চাই আমরা। এজন্য শিগগির আমরা একটি ট্রাস্ট গঠনের দিকেও যেতে চাই। যাতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং পরবর্তীতে আহমদ মমতাজের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণাগুলো হারিয়ে না যায়।’

রাইয়ান নাসরিনের আশা, বাড়িটিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালা হিসবে গড়ে তোলা গেলে ইতিহাসচর্চার নতুন দ্বার উন্মোচন হবে

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালযের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস বিবেচনায় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ ধরণের বাড়ি সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্মৃতি সংরক্ষণার্তে বাড়িটিকে ঘিরে একটা দারুন বসত মিউজিয়াম হতে পারে। যা ভবিষ্যত জেনারেশনকে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের সীমানায় মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আশ্রয়স্থলের প্রেক্ষাপটকে বুঝতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

;